তাঁকেও হাতকড়া পরাল পুলিশ!

485112a9d11ef507622ce701e95d4469-4সিটিএন ডেস্ক :

দুই পা নেই, দুটি কাঠের টুকরার ওপর ভর দিয়ে চলেন। তবু তাঁকে হাতকড়া পরাল পুলিশ। জামিন আবেদনের শুনানির জন্য মাদক মামলার আসামি আবুল হোসেনকে হাতকড়া পরিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে হাজির করে পুলিশ।
হাতকড়া থাকায় চলতে কষ্ট হচ্ছে, পুলিশকে এ কথা বলার পরও কাজ হয়নি। উল্টো হাজতখানা থেকে আদালত ভবনের নিচতলার লিফটের দরজা পর্যন্ত প্রায় ১০০ গজ এবং তৃতীয় তলায় লিফট থেকে নেমে এজলাসকক্ষ পর্যন্ত প্রায় ২০০ গজ কাঠের টুকরার ওপর ভর দিয়ে যেতে হয়েছে আবুল হোসেনকে। এ সময় তাঁর বাঁ হাতে হাতকড়া ছিল। পঙ্গু আসামিকে এভাবে আদালতে হাজির করাকে অমানবিক এবং পুলিশ প্রবিধানের লঙ্ঘন বলছেন আইনজীবীরা।
চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, পঙ্গু আসামি আবুল হোসেনের দুই পা নেই। পুলিশি হেফাজত থেকে তাঁর পালানোর কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ অমানবিক কাজ করেছে।
পঙ্গু আসামিকে এভাবে আদালতে হাজির করার বিষয়টিকে অমানবিক এবং পুলিশ প্রবিধানের লঙ্ঘন বলছেন আইনজীবীরা
এই সরকারি কৌঁসুলি বলেন, গ্রেপ্তার ও বিচারাধীন বন্দীদের পলায়ন রোধ করতে যতটুকু প্রয়োজন, এর বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে না। হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় এবং অমযার্দাকর। বয়স বা দুর্বলতার কারণে যাঁদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ, তাঁদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ না করার কথা বলা রয়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি ও জেলা সরকারি কৌঁসুলি আবুল হাশেম বলেন, পঙ্গু ব্যক্তিটির পালানোর কোনো সুযোগ ছিল না। এরপরও তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ মানবাধিকার রক্ষা করেনি।

এক হাতে হাতকড়া পরিয়ে গতকাল বেলা ২টা ১২ মিনিটে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের নিচতলার হাজতখানা থেকে আসামি আবুল হোসেনকে নিয়ে বের হন এক কনস্টেবল। সিঁড়ির কাছে আসার পর আসামি অনুরোধ করেন তাঁকে লিফটে করে ওপরে ওঠাতে। পরে ওই কনস্টেবল লিফটে করে তাঁকে তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। কিন্তু লিফট থেকে নেমে তাঁকে প্রায় ২০০ গজ পথ পাড়ি দিয়ে এজলাসকক্ষে হাজির হতে হয়।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বলেন, নারী, শিশুসহ বয়স্ক আসামিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপরও পঙ্গু ব্যক্তিটিকে হাতকড়া পরানো হলে দায়ী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদালত প্রাঙ্গণে আসামি আবুল হোসেনের মামাতো ভাই মো. রফিক প্রথম আলোকে বলেন, অসুখের কারণে ছোটবেলায় আবুলের প্রথমে ডান পা এবং পরে বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফে। রফিকের অভিযোগ, হাতকড়া পরানোর পর আবুল হোসেন ব্যথা লাগছে বলার পরও পুলিশ শোনেনি।
আসামির আইনজীবী কাজী শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, মাদক মামলায় জামিনের আবেদনের শুনানির জন্য আবুল হোসেনকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে এক হাজার ইয়াবা বড়িসহ আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানার পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার পর তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
সূত্র- প্রথম আলো


শেয়ার করুন