প্রাননাশের হুমকিতে ঠিকাদারের থানায় ডায়রী

টেকনাফে ইউপি চেয়ারম্যানের হুমকিতে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ বন্ধ

Teknaf pic_(khal)_18.09.15বিশেষ প্রতিবেদক :

টেকনাফে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলমের হুমকিতে পৌরসভার একটি উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে গেছে । এসময় নুরুল আলম সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ না করলে প্রান নাশ করা হবে প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করলে একপর্যায়ে উক্ত ঠিকাদারী কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এব্যাপারে টেকনাফ থানায় সাধারন ডায়রী (নং-৭৫৮) লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
ডায়রী সূত্রে জানা যায়, ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার আওতাধীন কাজী অফিস সড়কটির সংস্কার কাজ করছিলেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান একুশে ট্রেড সলিউশন এর স্বত্বাধিকারী পৌর যুবলীগ সভাপতি মঞ্জুরুল করিম সোহাগ।
এসময় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আলম কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করে এবং কাজ বন্ধ করতে বলে এবং শ্রমিকদের মারধর করতে উদ্ধত হয়। তখন ঠিকাদার গালমন্দ কেন করছে জিজ্ঞাসা করলে সে উল্টো কাজ বন্ধ না করলে গুলি করে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে প্রানভয়ে ঠিকাদার ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে চলে যায় এবং পৌর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। এ ঘটনার পর ঠিকাদার ভবিষ্যত নিরাপত্তায় টেকনাফ থানায় সাধারন ডায়রী করেন।

এপ্রসঙ্গে পৌর যুবলীগ সভাপতি ঠিকাদার মঞ্জুরুল করিম সোহাগ জানান, অতীতেও নুরুল আলমের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে টেকনাফ আতংকের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকা কালে নুরুল আলমের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অস্ত্রবাজীর ফলে সরকারের ভাবমুর্তি দারুনভাবে ক্ষুন্ন হয়েছিল যার প্রেক্ষিতে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এই আসনটি হারায়। সেই সময় হ্যাচারী জোনে তার বাহিনীর চাঁদার দাবীতে গুলাগুলি, সড়কে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষের বিভিন্ন লোকজনকে আহত ও পঙ্গু করা, জমি জবর দখল করতে না পেরে ক্ষুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাষ্টার আব্দুস শুকুরের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষন সহ তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে টেকনাফের মানুষ আজও আতংকিত। একপর্যায়ে তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে প্রশাসন তাকে কালো তালিকাভূক্ত করলে সে দীর্ঘ দিন পলাতক থাকে। বর্তমান সরকারের সময়ে আবার সে স্বরুপে আভির্ভূত হয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটাতে থাকে।
টেকনাফের প্রধান ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পৃষ্টপোষকতা করে অল্প দিনে সে কোটি টাকার মালিক বনে যায়। চিহ্নিত এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে তার গভীর সম্পর্কের কথা টেকনাফে উপেন সিক্রেট হলেও প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কখনও সাহস পান না। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভী পাড়া, হাবির পাড়া, পুরাতন পল্লান পাড়া (উপজেলা) কচুবনিয়া, গোদারবিল ও পৌরসভার ইসলামাবাদ এলাকায় এসব ইয়াবা সিন্ডিকেট গুলোর প্রকাশ্য অবস্থান। টেকনাফের অন্যান্য এলাকার চিহ্নিত ও তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কিছুটা ভয়-ঢরের মধ্যে থাকলেও তার পৃষ্টপোষকতায় থাকা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখনও এলাকায় বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করে যাচ্ছে।

এমনকি কয়েক বছর পূর্বে টেকনাফের একজন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করায় টেকনাফ থানার অভ্যন্তরে এক পুলিশ কর্মকর্তার উপর সে চড়াও হয়। ব্বচ সময় তাকে নিভৃত করতে চাইলে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি একরামুল হক কাউন্সিলরকেও লাঞ্চিত করে।

কয়েকদিন পূর্বে নাজির পাড়া এলাকার একজন বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী আটক হওয়ার পর একজন সাংবাদিককে ছবি উঠাতে গেলে থানার অভ্যন্তরে উক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীর পক্ষ হয়ে নুরুল আলম চেয়ারম্যান ছবি উঠাতে বাঁধা সৃষ্টি করে বলে জানা যায়।

তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, তেমন কোন ব্যবসা বানিজ্য না থাকলেও দুই কোটি টাকা ব্যয় করে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করে কিভাবে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন কায়ুকখালী খালটির বড় অংশ দখলের ও অভিযোগ রয়েছে। তার বিয়েতে ইয়াবা ব্যবাসায়ীরা ৩০টি গরু উপহার দেয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। টেকনাফ ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সর্বদা তটস্থ থাকে তার ভয়ে।
সোজা কথায় এক মুর্তিমান আতংকের নাম আলম চেয়ারম্যান। গোয়েন্দা সংস্থা গুলো নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে এসব অভিযোগের শতভাগ সত্যতা মিলবে বলে দাবী করেছেন তিনি।

এছাড়া সে ও তার লোকজন কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রীর এক পিএস এর নাম ব্যবহার করে প্রশাসন ও দলীয় লোকজনকে তটস্থ করে রাখে বলে জানা যায়।

তার ডানে বামে সর্বদা চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অবস্থান থাকলেও প্রশাসন, সংবাদকর্মীসহ কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

তার এধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের ফলে অতীতের মতো বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি আবারও ভূলুন্ঠিত হতে চলেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী সমর্থক নেতা কর্মীরা।

বিশেষ করে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তার এই উদ্ধত্য বহুগুন বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন এলাকার লোকজন। একাধারে সে আবার সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির পদটি আকড়ে রেখেছেন। একই সাথে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ সভাপতির পদ ধরে রাখা গঠনতন্ত্রের কোথাও সমর্থিত না হলেও সম্পূর্ণ গায়ের জোরে অগঠনতান্ত্রিক ভাবে তা চালিয়ে গেলেও তাতে দলের কারও মুখ খোলার সাহস নেই।

বর্তমানে আলম চেয়ারম্যানের হুমকির পর পৌর যুবলীগ সভাপতি মঞ্জুরুল করিম সোহাগ ও তার পরিবার চরম আতংকের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

এব্যাপারে সাধারন মানুষকে ভীতি-আতংক ও জীম্মিদশা থেকে মুক্ত করে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, পরিবেশ অধিদপ্তর, দুদক, এনবিআর সহ সকল রাষ্্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তার অবৈধ কর্মকান্ড ও অবৈধ আয়ের উৎসের সঠিক নিরপেক্ষ তদন্ত সরকারী উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে দাখিল পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেছেন পৌর যুবলীগ সভাপতি মঞ্জুরুল করিম সোহাগ।


শেয়ার করুন