প্রসংগ : চীনা নাগরিকের অর্থ বিতরণ

টাকা লুটের ঘটনায় লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বাড়ছে

ukhiya-camp_43511বিশেষ প্রতিনিধি :

চীনা নাগরিকের টাকা লুটের ঘটনায় টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় টাকা বিতরনে সহযোগিতার অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে লুটপাটে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এতে রোহিঙ্গাদের এক পক্ষ প্রতিপক্ষ গ্রুপকে ঘায়েল করার জন্য বিভিন্ন কর্মকান্ড শুরু করেছে । পুলিশ জানিয়েছে মামলার তদন্ত চলছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্তের বিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, চীন থেকে আসা চার মুসলিম চীনা নাগরিক, গোদারবিল মাদ্রাসার পরিচালক মৌঃ শফি উল্লাহ , চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদিস বিভাগের সপ্তম সেমিষ্টারে অধ্যয়নরত চীনা নাগরিক ইয়া মিন হো ও সহপাঠী বাংলাদেশী জামিল তাহেরকে নিয়ে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৌঃ ইয়াহিয়া, লিডার ফয়েজ মুরর¦ীর তত্বাবধানে গত ৩ জুলাই টেকনাফ লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেন। এসময় শত শত রোহিঙ্গা নারী পুরুষ তাদেরকে ঘিরে ফেলে। তাদের কাছে টাকা পয়সা লুটপাট করতে থাকে। এক পযার্য়ে মৌঃ ইয়াহিয়া মোবাইলে স্থানীয় লেদা এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আলমকে খবর দেয় তাদের উদ্ধার করার জন্য। পাশাপাশি এগিয়ে আসে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ডাঃ দুধু মিয়া, সেক্রেটারী আমির হোসেনসহ অন্যান্যরা এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে বিজিবি সদস্যরা তাদের পাচঁ চায়না নাগরিক ও দু’বাংলাদেশে উদ্ধার করে। তাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, ১৯ শত ডলার ও ২৬ শত চীনা মুদ্রা ও ১৬টি ক্রেডিট কার্ড জব্দ করা হয়। পরের দিন ৪ জুলাই বিজিবি তাদেরকে টেকনাফ থানায় সোর্পদ করে।
মৌঃ ইয়াহিয়া জানান, ঈদের আগে ক্যাম্পের অসহায় পরিবার গুলো কিছু সাহায্য পাবে এ কারনে মৌ শফি উল্লাহ’র মাধ্যমে টাকা বিতরনের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্তু কিছু অর্থলোভী রোহিঙ্গার কারনে তা ভেস্তে গেলো। তবে তিনি টাকা ভর্তি একটি ব্যাগ আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আলমের হাতে জমা রেখেছেন বলে জানান। ওই নেতা না হলে সেটিও রক্ষা করা যেতো না বলে জানান।
এদিকে আটক টেকনাফ গোদারবিল আনাস বিন মালিক মাদ্রাসার পরিচালক মাওঃ মোঃ শফিউল্লাহ ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কক্সবাজার দক্ষিন রুমালিয়ার ছড়ার আবু তাহেরের পুত্র মোঃ জামিল তাহেরকে ৫ জুলাই মঙ্গলবার সকালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। টেকনাফ থানার এসআই মাসুদ মুন্সি বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলাটি দায়ের করেন। তবে চীনা নাগরিকদের পুলিশ ছেড়ে দেয়।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি আব্দুল মজিদ জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মিয়ানমারের মংডু মেরুংলা জুমকাটা এলাকার মৌ শফি উল্লাহ বেশ কয়েক বছর আগে টেকনাফ এসে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়। তিনি টেকনাফ গোদারবিল আনাস বিন মালিক মাদ্রাসার পরিচালক নিযুক্ত হন। মৌঃ শফি উল্লাহ দেশে দেশে ঘুরে মাদ্রাসার জন্য চাদাঁ সঙগ্রহ করে থাকেন । ্ওই মৌঃ শফি উল্লাহ ১ জুলাই চীনা নাগরিক বে ইয়ান (৪০), মা ঝিয়া মিন(৪২), মা ইয়ো থিয়ান (৪৫), শি লি (৩৮), ইয়া মিন হো (৩০)কে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে আসে। ৩ জুলাই প্রথমে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় ইউপি মেম্বার বখতিয়ারের তত্ত্বাবধানে পরিবার প্রতি ১০ হাজার টাকা করে কয়েক লাখ টাকা বিতরন করেন। যদিও বা চীনা নাগরিকরা কুতুপালং ত্যাগ করার সাথে সাথে ১০ হাজার টাকা হতে ২ হাজার টাকা রেখে বাকী ৮ হাজার টাকা প্রতি ঘর থেকে বখতিয়ার মেম্বার উঠিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠে। অপর দিকে বিকেলের টেকনাফ পৌছাঁর পর চীনা নাগরিকরা লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মৌ ইয়াহিয়ার তত্ত্বাবধানে টাকা বিতরন শুরু করে। এক সময় অন্যান্য রোহিঙ্গা লুটপাটের চেষ্টা করলে এক পযার্য়ে মৌঃ ইয়াহিয়ার হাতে রক্ষিত একটি টাকার ব্যাগ কৌশলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আলমকে দেয় বলেও কথা উঠেছে। মো: আলম স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খোলার সাহস করছে না বলেও জানিয়েছেন অনেকে। এ ব্যাপারে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে এমনটি মনে করছেন সচেতন মহল। তবে মোঃ আলম টাকার ব্যাগ নেওয়ার কথা অশ্বীকার করে বলেন, এটি তার বিরোদ্ধে একটি মহলের ষড়যন্ত্র।
এদিকে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র মতে ফয়েজ মুরব্বী, , মাষ্টার মতলব, মৌঃ ইয়াহিয়া ও মৌ শফি উল্লাহ মিয়ানমারের মংডু মেরুংলাা এলাকার বাসিন্দা ও পরস্পর আত্বীয়-স্বজন। বেশ কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদ্রাসা ও মসজিদ নির্মাণসহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কথা বলে বিভিন্ন দেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করে লুটপাঠে ব্যস্ত রয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে বিদেশীদেরকে কৌশলে ক্যাম্পে এনে কিছু কিছু দান দক্ষিণা করে নেজেদের অবস্থান ধরে রাখে এ চক্রটি। এবার এ চক্রটি ধরা খায়। ঘটনার পরথেকে মৌ ইয়াহিয়া পলাতক রয়েছে। অপরদিকে এ চক্রটিকে টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শেড মাঝি আব্দুল করিম। সে রোহিঙ্গা লিডার ফয়েজ মুরব্বীর জামাতা। ইতিমধ্যে চীনা নাগরিকদের আনা টাকা প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করছে। অনেকে কৌশলে এ স্বাক্ষর নিয়ে মৌঃ ইয়াহিয়া সিন্ডিকেটকে রক্ষার কাজে ব্যবহার অথবা বর্তমান ক্যাম্প ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি ডাঃ দুধু মিয়া ও সেক্রেটারী আমির হোসেনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেও মনে করছে। ডি ব্লকের জাহিদা,আলী হোসেন, তসলিমা, আমিনা , জকরিয়া, সেতেরা জানান, তাদের কাছ থেকে নহদ টাকা ও সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে শেড মাঝি আব্দুল করিম। এসব স্বাক্ষর অন্য কাজে ব্যবহার করলে আমরা তার বিরুধীতা করবো। ব্লব মাঝি আব্দুল করিম জানান, ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, সাধারন সম্পাদ, মৌ ইয়াহিয়া ও আবুল ফয়েজ লুলু মিলে রোহিঙ্গাদের জন্য আনা টাকা লুট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে স্বাক্ষর নেওযা হচ্ছে ।
ক্যাম্প ব্যবস্থপনা কমিটির সেক্রেটারী আমির হোসেন জানান, সরকারের অনুমতি না নিয়ে টাকা বিতরন করায় আমরা বারন করেছি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে মৌ ইয়াহিয়ার সহযোগি আব্দুল করিম বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। নিজের দোষ অন্যেে ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।


শেয়ার করুন