জয় বাংলা নয়, আমরা জিন্দাবাদ: এরশাদ

Ershad-সিটিএন ডেস্ক :

সাবেক সামরিক একনায়ক ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জেনারেল এইচ এম এরশাদ দলের নেতাকর্মীদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান না দিতে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই স্লোগান দিলে তাদের দলছাড়াও করতে পারেন তিনি।

মঙ্গলবার রাজধানীতে দলের এক অনুষ্ঠানে সাবেক এই একনায়ক ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিও করেছেন।

মঙ্গলবার জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সিলেট জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সিলেট জাতীয় পার্টির সমন্বয়ক তাজ রহমান বলেন, দলের অনেক নেতা দলের স্লোগানের বদলে জয় বাংলা স্লোগান দেন।

এই কথা শুনে এরশাদ বলেন, “জয় বাংলা আওয়ামী লীগের স্লোগান, জাতীয় পার্টির নয়। জাতীয় পার্টির স্লোগান–বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। মনে রাখবে, যতদিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে ততদিন বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগানও টিকে থাকবে।

“নিজ দলের স্লোগান দেওয়ার অভ্যাস যাদের নেই, তারা যেখানে খুশি চলে যেতে পারেন। আগামী নির্বাচনে তারা না থাকলেও আমাদের চলবে।”

দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক শিবিরের এক পক্ষের সহিংস প্রতিরোধের মুখে পড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এরশাদও শেষ মুহূর্তে তার প্রার্থীদের প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নানা নাটকীয়তার পর এরশাদের ‘সেনা হাসপাতালে চিকিৎসারত’ অবস্থায় তার দল নির্বাচনে যায়। পরে ফল মেনে নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যের শপথ নেন এবং মন্ত্রীর মর‌্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন।

বরাবরই দলটির মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি নেতাদের দ্বন্দ্ব সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। দলটির বিএনপিপন্থি অংশের নির্বাচন বর্জন ও আওয়ামী লীগপন্থিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কট্টর অবস্থানের মধ্যে দলীয় প্রধান এরশাদ শেষমেষ র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চলে যান। সেই থেকে নয় বছর রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতা ভোগকারী এরশাদ দলের দুই পক্ষের নেতাদের চাপের মুখে আছেন।

অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, “এখন কথা বলা যায় না। টকশোতে মানুষ মনের কথা বলবে, তাও বন্ধ। সব কিছু সেন্সর হচ্ছে। মুখ বন্ধ, কলম বন্ধ। আমাদের নিঃশ্বাসও বন্ধ। এটা কি গণতন্ত্র!”

দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ সবকিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এমন অবস্থা দেশে কখনো ছিল না। গণতন্ত্র ফেরাতে হলে আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে হবে। জয়ী হয়ে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ধ্বংস হয়ে গেছে।”

বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, “এই দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে বিএনপি। উপজেলা বন্ধ করেছে। গরীব মানুষের হাজার হাজার ট্রাস্ট বন্ধ করেছে। এজন্য তারা ধ্বংসের মুখে। আর এখন বাধ্য হয়ে তারা আমার বক্তব্য সমর্থন করা শুরু করেছে।”

জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদের ১৫ বছরের সামরিক ও ছদ্ম সামরিক শাসনের পর দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই শাসনতন্ত্রের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, “সংসদীয় গণতন্ত্র আগে ব্যর্থ ছিল। ০৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমরা সেই গণতন্ত্র রক্ষা করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি। ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে।”

আগামী নির্বাচনে তার দল ক্ষমতায় যাবে-বরাবরের মতো এই আশাবাদ ব্যক্ত করে ৮৫ বছর বয়সী এরশাদ বলেন, “যে যাই বলুক, আগামী নির্বাচনে আমাদের ছাড়া কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আগামী নির্বাচন আমরা এককভাবেই করব। আমাদের কারো সাহায্য বা সহযোগিতার দরকার নেই।”

সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন