‘জয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করেছিল’

03_07_2014_Joy_party_office_1

 বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করে বড় ধরনের ক্ষতির ষড়যন্ত্র হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রে। এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ৫ লাখ ডলার ঘুষের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এই কাজটি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র এক নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার (৩৬)। এই ঘটনায় তাকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত।

সিজার বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টির বাসিন্দা তারা।

প্রায় দুই বছর আগে এই যড়যন্ত্রটি ধরা পড়ে। প্রাথমিকভাবে জয়কে অপহরণের বিষয়টি জানা না গেলেও তার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো তা জানাজানি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এফবিআই’র দায়ের করা মামলায় গত ৪ মার্চ (বুধবার) সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রিজভীকে। এই ঘটনায় অপর অভিযুক্ত ঘুষ লেনেদেনে মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোহানেস থালেরকেও আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

নিউ ইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন ফেডারেল আদালতের বিচারক ভিনসেন্ট এল ব্রিকেটি এই দণ্ডাদেশ দেন।

মামলার প্রধান আসামি এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সাজার বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে আগামী ৩০ এপ্রিল। এই লাস্টিকই সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পর্কে এফবিআই’র কাছে থাকা তথ্য পাচার করে তাকে ও পরিবারের সদস্যদের অপহরণ ও ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে ৫ লাখ ডলারে চুক্তিবদ্ধ হন।

এছাড়াও তিনি এফবিআই’র কাছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড়ছেলে, লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান ও ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর অর্থপাচারের যেসব তথ্য ছিল তাও সরিয়ে ফেলার প্রতিশ্রুতি দেন এই চুক্তির আওতায়।

আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিতেই অভিযুক্তরা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পরিকল্পনার কথা জানান। এছাড়াও তাদের মধ্যে যে ই-মেইল ও মোবাইফোন মেসেজ চালাচালি হয়েছে তাতেও এ বিষয় উল্লেখ রয়েছে বলে জানিয়েছে একটি দায়িত্বশীল সূত্র।

২০১৩ সালে ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার পর মামলার শুনানি চলে প্রায় দেড় বছর। মামলার শুনানি থেকেই বেরিয়ে আসে জয়কে অপহরণের পরিকল্পনার কথা।

মামলা সংক্রান্ত নথির বরাত দিয়ে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্তরা তাদের স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের লক্ষ্যেই তারা দীর্ঘ পরিকল্পনা সাজাচ্ছিলেন। তারই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তার বাসস্থান, কর্মস্থলসহ পারিবারিক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।

বিষয়টির সঙ্গে ছেলেকে সামনে রেখে মূল পরিকল্পনা করে যাচ্ছিলেন রিজভীর বাবা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন। এফবিআই’র এক বিশেষ এজেন্টকে তারা প্রাথমিকভাবে ৪০ হাজার ডলার ঘুষ দেন। এবং পুরোকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে আরও ৩০ হাজার ডলার করে মোট ৫ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি এফবিআই’র ওই এজেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের এই গোয়েন্দা বিভাগে খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর অর্থপাচার বিষয়ক যেসব নথিপত্র রয়েছে সেগুলো গায়েব করে দেওয়া হবে এমন চুক্তেই হয় তাদের।

তবে ২০১৩ সালের আগস্টেই যড়যন্ত্রের বিষয়টি এফবিআই‘র কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার পর গ্রেপ্তার হন থালের ও সিজার। এরপর মামলার কার্যক্রম চলতে থাকে। ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবর আদালতের কাছে নিজেদের অপরাধ ও ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করেন তারা।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ মার্চ (বুধবার) আদালত রায় ঘোষণা করে।

এই ঘটনায় মূল অপরাধী রবার্ট লাস্টিক (৫২)। ২৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন তিনি। সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার পরিবারের সদস্যদের অপহরণ এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করার মূল ষড়যন্ত্রটি হয় এই লাস্টিকের সঙ্গেই।

রিজভী তার স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, বিএনপি’র উচ্চ পর্যায় থেকেই নির্দেশ পেয়ে তিনি ওই কাজ করেছেন। বুধবার আদালতের রায় ঘোষণার সময় হাজির ছিলেন রিজভী। আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এই মামলায় তার জামিন নেওয়া রয়েছে। ২০ এপ্রিল থেকেই তার ৩৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ কার্যকর শুরু হবে।

এদিকে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। আর সে কারণে তিনি এ বিষয়ে যড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও দায়ের করেননি।

তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আদালতের রায়ের পর বিষয়টি সজীব ওয়াজেদ জয়কে অবহিত করা হয়েছে।


শেয়ার করুন