জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র!

শাহেদ ইমরান মিজান :DC Ali Hossain
মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিংড়ি প্রকল্পে ২৩ কোটি টাকা লোপাট ইস্যুকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসাইনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একটি চক্র! চক্রটির টার্গেট, যে কোন মূল্যে মোঃ আলী হোসাইনকে কক্সবাজার থেকে বদলী করা! মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ সূত্র এই তথ্যটি জানিয়েছে।
মোঃ আলী হোসাইন কক্সবাজারে যোগদানের পরপরই চক্রটি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে বলে সূত্রটি দাবী করে। তবে গত ৩০ জুন ২৩ কোটি টাকা লোপাটে জড়িতদের নিয়ে বিশেষ নিরীক্ষা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হলে মরিয়া হয়ে উঠে ওই চক্র। এই উদ্দেশ্যে চক্রটি অনেক দূর এগিয়েছে বলেও দাবী সূত্রটির!
ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সূত্র মতে, মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিপূরণ প্রকল্পের চিংড়ি খাতে নামে-বেনামে প্রায় ২৩ কোটি লোপাট করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতারক সমন্বিত একটি সিন্ডিকেট। এই নিয়ে বাঁকখালীসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা নিয়ে সরকারে উচ্চ পর্যায়সহ তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে হক বছরের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ির বাসিন্দা কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ ২৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২৩ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন। অন্যদিকে টাকা উদ্ধারে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলও) মাহমুদুর রহমান বাদী হয়ে ২৩ কোটি টাকা ফেরত চেয়ে ২০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় পাল্টা মামলা করেন। এই মামলার তদন্তও করছে দুদক।
সূত্র মতে, তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমীন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম ২৩ কোটি রুহুল আমীন বদলী হলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন লোপাটকারীরা। ১৬ মার্চ বর্তমান জেলা প্রশাসক যোগদান করলে তার কাছে বিভিন্নভাবে ধর্ণা দেন। কিন্তু টাকা উদ্ধার ও লোপাটাকারীদের শাস্তির ব্যাপারে অনড় থাকেন তিনি। উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করেও মোঃ আলী হোসাইনকে পারেনি! শেষে উপায়ন্তর না দেখে তাকে বদলী করতে তদবিরে নেমে পড়ে ওই চক্র। কিন্তু সফল হননি।
এর মধ্যে দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত ৩০ জুন ২৩ কোটি টাকা লোপাটে জড়িতদের নিয়ে বিশেষ নিরীক্ষা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলা সাত সরকারি কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। ওই সাত কর্মকর্তা হলেন কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলও) আরেফিন আকতার, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, কানুনগো আবদুল কাদের ভূঁইয়া, সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও টিএম বাদশাহ মিয়া। প্রতিবেদনে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও ওই অর্থ আদায়ের সুপারিশ করা হয়। একই সুপারি করা হয় স্থানীয় পর্যায়ে জড়িতের বিরুদ্ধেও। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ হলে বিশাল ধাক্কা খায় ২৩ কোটি টাকা লোপাটকারীরা। তারা কোন ভাবেই জেলা প্রশাসককে ‘ম্যানেজ’ করতে না পেরে তাকে বদলীর চূড়ান্ত মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে!
এর অংশ হিসেবে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও শীর্ষ নেতা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তদবির করছেন। এই তদবিরে নেতৃত্ব দিচ্ছে ২৩ কোটি লোপাটের অন্যতম হোতা মাতারবাড়ির জমির উদ্দীন, তার ভাই রইচ উদ্দীন, রফিকুল ইসলাম প্রকাশ ভেন্ডার রফিক। অধিকাংশ সময় এরা ঢাকায় অবস্থান করে বিরামহীন তদবির কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা যেকোন মূল্যে ‘মিশন’ সফল করার জন্য মরিয়া রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোমবার রাতে জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসাইন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘পৃথিবীতে একটি পক্ষ সবসময় অপকর্ম করে আর ষড়যন্ত্র করে। তারা তা করে যাবেই। আমার কাজ হচ্ছে কাজ করে যাওয়া। তাছাড়া আমার হারানো মতো কিছু নেই। সরকার যে ভালো বুঝতে সেটা করবে আমারা কোন আপত্তি নেই। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না।’


শেয়ার করুন