জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন

ভোট হলে পাল্টে যাবে হিসাব

61686926-2906-4e3c-85e3-af236b2d8c92শাহেদ ইমরান মিজান

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন একেবারে ঘনিয়ে এসেছে। শেষ মুহূর্তে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আর মাত্র একদিন পর সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের। সব প্রস্তুতি ঠিকঠাক থাকার কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে দলীয় সূত্রে। এই হিসাবকে সামনে নিয়ে প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন কাউন্সিলদের আঙিনায়। সব প্রার্থী কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। চেয়ে নিচ্ছেন মূল্যবান রায়। কাউন্সিলরদের দেয়া প্রত্যাশায় সব প্রার্থী নিজ নিজ অবস্থান থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভোটের মাঠে অবস্থান করছেন।
সরকারি দল এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলন নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে আলোচনা। এই আলোচনা শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। কাউন্সিলর ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করছে। কারা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের কান্ডারি? এই প্রশ্নটি এখন সর্বত্র আলোচনায়।
একই সাথে আলোচনা চলছে সম্মেলন ও কাউন্সিলের আদ্যাপান্ত নিয়ে। সম্মেলন বাস্তবায়ন হলেও কাউন্সিল আদৌ ভোটে হচ্ছে কিনা? ইলেক্টেড না সিলেক্টেড কান্ডারি আসছে? অধিকাংশ প্রার্থী, কাউন্সিলর ও সাধারণ নেতাকর্মীরা চাচ্ছেন ভোটের মাধ্যমেই কান্ডারি নির্বাচন হোক। এনিয়ে এখন সরগম জেলার আওয়ামী রাজনীতি অঙ্গন। তবে দলীয় শীর্ষ সূত্র ও সম্মেলনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, কাউন্সিলরদের ভোটেই নির্বাচিত হতে যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ কান্ডারি। গতবারও সরাসরি ভোটের মাধ্যমে মরহুম মোজাম্মেল হকের মতো মানুষই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে বিবেচনায় ভোট হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ ভাগ। কাউন্সিলদেরও প্রত্যাশা রায়ের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন তারা।
দলীয় সূত্র মতে, কয়েকবার ব্যর্থ হওয়ার এবার বাস্তবায়ন হবে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ জানুয়ারী সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত), সম্পাদকসহ ডজন নেতা শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি নেতাদের কক্সবাজার ফিরে সম্মেলন সফল করার নির্দেশ দেন। তাই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।
সূত্র জানায়, আসছে সম্মেলনে সভাপতি পদে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে এড. একে আহমদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক ও চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও সভাপতি জাফর আলম প্রার্থী হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য রাশেদুল ইসলাম, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাশেদুল হক রাশেদ, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, কৃষকলীগ নেতা রেজাউল করিম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এড. ফখরুল ইসলাম গুন্দু। তবে গুন্দু শেষ মুহূর্তে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে সব প্রার্থী কাউন্সিলদের সাথে মতবিনিময়ও সম্পন্ন করেছেন। চেয়ে নিয়েছেন মূল্যবান রায়। এখন অপেক্ষা সম্মেলনের।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রত্যাশা অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেলেও মনোনয়ন দিয়ে কমিটি গঠনও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি ভিন্ন পর্যায়ে চলে গেলে মনোনয়ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্র। অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীও চাচ্ছেন মনোনয়নের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হোক। তাতে করে ভোটিংয়ে ঝুঁকিতে পড়তে হবে না। এতে নিজের পদটি নিশ্চিত করতে পারবেন তারা। তবে পরিস্থিতি বলছে, ভোট ও মনোনয়নের কমিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। কেননা মনোনয়নের মাধ্যমে কমিটি হলে যারা নেতৃত্বে আসবেন ভোটে গেলে তাদের অবস্থান একদম পিছনের কাতারে চলে যেতে পারে। তাই ভোট হলে হেভিওয়েট কয়েকজন প্রার্থী ছিটকে পড়তে পারেন। অন্যদিকে ভোট হলে আসতে পারে তরুণ নেতৃত্ব। বিশেষ সাধারণ সম্পাদক পদের ক্ষেত্রে তা বেশ অনুমান করা হচ্ছে। তবুও সবাই চান, গণতান্ত্রিক পন্থায় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব আসুক। এতে করে একদিকে পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব আসবে। অন্যদিকে কাউন্সিলররা পাবেন তাদের মর্যাদা।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সর্ব শেষ সম্মেলন হয় ২০০৩ সালে ২০ ডিসেম্বর। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম একেএম মোজাম্মেল হক সভাপতি ও সালাহউদ্দিন সিআইপি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের মে মাসে একেএম মোজাম্মেল হক মৃত্যুবরণ করলে সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে তাকে সরিয়ে এডভোকেট একে আহমদ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। সেই সময় থেকে ঢিমেতালে চলছে জেলা আওয়ামীলীগের কার্যক্রম।


শেয়ার করুন