জেলা আইনজীবী সমিতির নিবার্চনে নতুন ভোটারেরা ফ্যাক্টর

রাত পোহালেই জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। শেষ বেলায় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের প্রচারণায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রার্থীদের নির্ঘুম প্রচারণা চলছে। প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বেড়েছে ভোটারদের কদর। আদালত অঙ্গনে বয়ে যাচ্ছে নির্বাচনী আমেজ। দুই প্যানেলই শক্তিশালী প্রার্থী হওয়ায় কোন প্যানেল এগিয়ে আছে-তা সহজেই বলতে পারছেনা ভোটাররা।

আদালতপাড়ার চারিদিকে শুধু ব্যানার আর পেস্টুন। সমানতালে প্রচার মাধ্যমেও চলছে বিজ্ঞাপন। দম ফেলাবার সময় নেই প্রার্থীদের। ভোটের পাল্লা কোন দিকে ভারী হচ্ছে- তা এখনো অনুমেয় নয়। তবে, নতুন আইনজীবীদের ভোটই ফ্যাক্টর হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রার্থীরাও যে যার মতো কৌশলে নবীন ভোটার টানতে ব্যস্ত।

তরুণ আইনজীবী মোবারক হোসাইন বলেন, চেহারা বা প্যানেল বিবেচনায় নয়, দক্ষতা-যোগ্যতা বিবেচনা করে আইনজীবীরা ভোট দেবেন। তিনি মনে করেন, এবারের নির্বাচনে দুই প্যানেলই শক্তিশালী প্রার্থী নিশ্চিত করায় কাউকে হেলা করা যাচ্ছেনা। প্রচারণাও চলছে অনেকটা সমানতালে।

আইনজীবীরা মনে করেন- কর্মদক্ষ, সাহসী, জুনিয়র আইনজীবীদের চেম্বার সংকট নিরসনে নতুন ভবন নির্মানে, জমির লীজ ডীড় স¤পাদন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত পাঁচ কোটি টাকা আনয়ন, বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের দূর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, বার ও বেঞ্চের মর্যাদাপূর্ণ স¤পর্ক সমুন্নত রেখে বিচারপ্রার্থী অসহায় জনসাধারনের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পরীক্ষিত আইনজীবীদের নির্বাচিত করা দরকার।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলা বার প্রাঙ্গনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নবীন প্রবীন মিলে ৬৫২ আইনজীবী প্রকাশ্যে ব্যালটে ভোটে এক বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব ঠিক করবে। দুই প্যানেলে ৭টি স¤পাদকীয় পদ ও ৯টি সাধারণ সদস্যপদে ৩৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মোহাম্মদ ইছহাক-১ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জিয়া উদ্দিন আহমদ লড়ছেন। সহ-সভাপতি পদে নুরুল আমিন ও মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) আবদুল শুক্কুর, সহ-সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) রাহামত উল্লাহ, পাঠাগার সম্পাদক আবুল হোছন এবং আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এ.বি.এম মহিউদ্দীন।

এই প্যানেলের সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন- পীযুষ কান্তি চৌধুরী, আমজাদ হোসেন, আবুল কাশেম-২, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ নুরুল আজিম, খাইরুল আমিন, সোমেন দেব, মীরাজুল হক চৌধুরী ও লিপিকা পাল।bar-pic-443x540-443x540

অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সমমনা আইনজীবীদের মনোনীত প্যানেলে সভাপতি পদে এস.এম নুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই প্যানেলের সহ-সভাপতি সাদেক উল্লাহ ও রমিজ আহমদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) মোহাম্মদ এনামুল হক সিকদার, পাঠাগার সম্পাদক মোহাম্মদ শামীমুল ইসলাম এবং আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছৈয়দ আলম।

সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থীরা হচ্ছেন-আবুল কালাম ছিদ্দিকী, মোহাম্মদ আবুল আলা, সব্বির আহমদ, মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন ফারুকী, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, ছৈয়দ আলম, মোহাম্মদ গোলাম ফারুক খান, এ.এইচ.এম শাহজাহান এবং মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম (টিপু)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এম. শাহজাহান এডভোকেট।

সভাপতি পদে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সভাপতি প্রার্থী এড. মোহাম্মদ ইসহাক খুবই সহজ সরল ও উদার মনের মানুষ। তিনি বর্তমান সরকারের জিপি। আইন পেশায় ব্যক্তিগতভাবে কাউকে কোন ক্ষতি করেননি। পারলে উপকার করেছেন। ব্যক্তিগত ইমেজও রয়েছে তার। গতবারের নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়ায়ে তিনি যৌথ সভাপতি হন। এবারও তাকে সভাপতি নির্বাচিত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অপরদিকে বিএনপি ঘরনা থেকে সভাপতি প্রার্থী এসএম নুরুল ইসলাম ন¤্র-ভদ্র ও সজ্জন লোক হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে ৬৫২ জন ভোটারের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার ভোটার বেশি। নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া আইনজীবীদের মাঝেও বেশীরভাগ তাদের ভোট। তাছাড়া গতবারের নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বিধাভক্তি থাকলেও এবার তাদের মাঝে চমৎকার বোঝাপড়া রয়েছে। গুনে গুনে সব ভোট নিজেদের বাক্সে ফেলার ফন্দি করছে নেতারা। সে হিসেবে সভাপতি পদে এসএম নুরুল ইসলামের জয়ের সম্ভাবনা বেশী দেখছেন ভোটাররা।

ভোটারদের বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে, বিএনপি-জামায়াতের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী সব শ্রেনীর আইনজীবীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তিনি প্রবীন আইনজীবি হলেও নবীনদের সাথে তার সম্পর্কটা অতুলনীয়। ১৯৯৬ সাল থেকে অদ্যবধি তিনি জনপ্রিয় একজন আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। পেশাগত জীবনে জুনিয়ার-সিনিয়র সমন্বয় করে চলেছেন। নতুন আইনজীবীরাও তার চেম্বারে গেলে হাত বাড়িয়ে সহযোগিতা করেন। ছুটে যান অপরের আপদ বিপদে। ভোটের মাঠে বিজ্ঞ আইনজীবীরা এসব চুলচেরা বিশ্লেষন করছেন। মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী ২০১১ সালে জেলা বারের সহ-সাধারণ সম্পাদক (অর্থ) দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটে সদস্য নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদে জিয়া উদ্দিন আহমদ ভোটের হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে পারেন বলে ধারণা ভোটারদের। তার পিতা প্রফেসর নুর আহমদ এডভোকেট আদালত অঙ্গনের পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তি। বাবার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের মাঝে সুন্দর অবস্থান তৈরী করেছেন তিনি। তরুণ আইনজীবীদের একটা অংশ জিয়া উদ্দিন আহমদের জন্য কোমর বেঁধে কাজ করছেন। নিজেও রাত দিন প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের কাছে টানতে চেষ্টা করছেন। জিয়া উদ্দিন আহমদ ২০০২ সাল থেকে তিনি আইন পেশায় জড়িত। তিনি ২০১২ সালে আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে আপ্যায়ন ও সদস্য ছিলেন তিনি। পেশাগত জীবনে তিনি অনেকটা ক্লিন ইমেজের লোক হিসেবে পরিচিত। তবে, সব হিসেব পাল্টাবে ভোটাররা- এমনটি ধারণা বিশ্লেষকদের।

প্রসঙ্গত, জেলা আইনজীবী সমিতি ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের বর্ষের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হয়। এতে যৌথভাবে সভাপতি নির্বাচিত হন আবুল কালাম ছিদ্দিকী ও মোহাম্মদ ইছহাক-১। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে আ.জ.ম মঈন উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৫২ জন। সেখানে নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৬৭ জন।


শেয়ার করুন