আজ শেষ হচ্ছে সময়

জেলায় ৩০ শতাংশ সিম নিবন্ধন হয়নি

শেষ মুহূর্তে এসে সিম নিবন্ধনে উপচে পড়া ভিড়। গতকাল বিকালে রবির জেলা কাস্টমারকেয়ার থেকে ছবিটি তোলা

শেষ মুহূর্তে এসে সিম নিবন্ধনে উপচে পড়া ভিড়। গতকাল বিকালে রবির জেলা কাস্টমারকেয়ার থেকে ছবিটি তোলা

শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:
আজ ৩১ মে শেষ হচ্ছে দেশের বহুল আলোচিত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের সময়। আজ রাত ৯টার সাথে সাথে সিম নিবন্ধনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের বিটিআরসি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমনটি বলা রয়েছে। আজকের মধ্যে নিবন্ধন না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে করা হবে বলেও জানানো রয়েছে। কিন্তু বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পরও এখনো অনেক সিম নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। এই হিসাব কক্সবাজার জেলায় ৩০ শতাংশের মতো হবে। এর মধ্যে দু’য়েকটির হার আরো কমতে পারে এবং বাকি গুলোর হার বাড়বে। জেলার দায়িত্বরত মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গুলোর শীর্ষ ব্যক্তিরা এমনটি জানিয়েছেন।

গতকাল কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ায় অবস্থিত রবির জেলা কাস্টমার কেয়ারে জেলা এরিয়া ম্যানেজার ম্যানেজার শাব্বির হোসাইনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তবে তিনি জেলায় রবির কি পরিমাণ সিম নিবন্ধন হয়েছে জানাতে পারেননি। এটা কেন্দ্র ছাড়া জানা যাবে না বলে জানান তিনি। তবে অনুমান করে জানান, ৭০ শতাংশের কাছাকাছি সিম নিবন্ধন হয়েছে জেলায়। জেলার প্রধান মোবাইল অপারেটর কোমস্পানি হিসেবে রবির বিপুল কাস্টমারকেয়ার রয়েছে। তারপরও চাপ বাড়ায় নতুন করে পয়েন্ট সেন্টার ও অস্থায়ী বুথ তৈরি করা হয়েছে।

সরকারি মালিকানায় পরিচালিত টেলিফোন অপারেটর কোম্পানির কক্সবাজার কাস্টমারকেয়ার এর ইনচার্জ সৈকত বড়–য়া জানান, জেলায় মোট টেলিটকের প্রায় ১২ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার সিম নিবন্ধন হয়ে গেছে। গড় হিসাবে এই পরিমাণ ৭৫ শতাংশ। শুধুমাত্র কক্সবাজার বিটিসিএল কার্যালয় সংলগ্ন একমাত্র কাস্টমার কেয়ারেই টেলিটকের সিম নিবন্ধন চলছে।

বাংলালিংকের কক্সবাজার-রামু অঞ্চলের ম্যানেজার মাজহারুল ইসলাম জানান, বাংলালিংক বায়োমেট্রিক হয়েছে ৬০ শতাংশের মতো সিম নিবন্ধন হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় বাংলালিংকের ১৪টি কাস্টমার কেয়ার রয়েছে। অস্থায়ীভাবে কক্সবাজার অঞ্চলে ১০টি, চকরিয়া অঞ্চলে অস্থায়ী ৮টি বুথ বসানো হয়েছে। সব গুলোতে সিম নিবন্ধন চলছে।
এয়ারটেলের কক্সবাজার-রামু ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টের ম্যানেজার আতাউর জানান, কক্সবাজার-রামু অঞ্চলে এয়ারটেলের প্রায় ৩৬ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার মতো সিম নিবন্ধন হয়েছে। ২৫ মে’র পরিসংখ্যান মতে, এয়ারটেলে জেলায় ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সিম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। কক্সবাজার জেলায় এয়ারটেল ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট রয়েছে তিনটি। উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে একটি। কক্সবাজার, রামু ও ঈদগাঁও অঞ্চলে একটি এবং চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া উপজেলায় একটি ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট রয়েছে। এসব অঞ্চলের সব পয়েন্ট ছাড়াও সিম নিবন্ধনের জন্য আরো ৮টি অস্থায়ী বুথ চালু করেছে এয়ারটেল।

গ্রামীণ ফোনের কক্সবাজার এরিয়া ম্যানেজার কামরুজ্জামান জানান, কক্সবাজার জেলায় তিন’শ পয়েন্টে গ্রামীণ ফোনের সিম নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এলাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে অস্থায়ী বুথ। সব পয়েন্ট ও বুথে নিরলসভাবে সিম নিবন্ধন চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে শেষ মুহূর্তে সিম নিবন্ধন করতে পয়েন্ট আর বুথগুলোতে ভিড় জমিয়েছে গ্রাহকরা। কে কার আগে পারে তা নিয়ে চলছে টানাটানি। বিশেষ রবির কাস্টমারকেয়ারগুলোতে এই অবস্থা চলছে।

গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের গ্রামীণ, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল ও টেলিটক কাস্টমার কেয়ারগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। এমনকি খোলা জায়গায় অস্থায়ীভাবে তৈরি করা বুথগুলো মানুষের হুলস্থুল ভিড়। সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সিম নিবন্ধনের জন্য। দু’তিন ধরে এই ভিড় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শেষ হওয়ায় আজকে প্রচন্ড ভিড় হবে বলে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে শেষ সময়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য সিম নিবন্ধনে বিশেষ অফার ঘোষণা করেছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। টকটাইম, ইন্টানেট, এসএমএস ছাড়াও নগদ টাকা ও বিদেশ ভ্রমণের মতো লোভনীয় অফার চালু করে তারা।

কোম্পানিগুলো দেয়া তথ্য মতে, রবির সিম নিবন্ধনে দেয়া হচ্ছে নগদ অর্থ পুরস্কার। এটা ঘন্টায় একজনকে ১০ হাজার টাকা এবং পুরো দিনে এক লাখ টাকার পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। ভাগ্যবান বিজীয়রা এই সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া সব গ্রাহক নিবন্ধনের সাথে পাচ্ছেন ১ হাজার টাকার টকটাইম ছাড়াও এসএমএস ও ইন্টারন্টে রয়েছে।
গ্রামীণ ফোনে দেয়া হচ্ছে দু’শ টাকার টকটাইম এবং ১ জিবি ইন্টারন্টে ফ্রি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আর কোন অফার নেই দেশের বৃহৎ এই মোবাইল অপারেটর কোম্পানির।
সরকারি মালিকানার টেলিটকে দেয়া হচ্ছে, ১৬০ মিনিট টকটাইম সাথে সাথে, ১০ টাকায় ১ জিবি ইন্টারনেট, পর পর তিনমাস এবং ৩০০ এসএমএস ফ্রি। এছাড়া লটারির মাধ্যমে সারাদেশ থেকে ৭০ জন ভাগ্যবানকে কুয়ালালামপুর ভ্রমণের সুযোগ।

বাংলালিংকে সিম নিবন্ধনের সাথে সাথে দেয়া হচ্ছে ১০০ এমবি ইন্টারন্টে। আরো রয়েছে নগদ টাকার অফার। জ লিখে ২০২০ তে পাঠালে ভাগ্য ভালো হলে পাওয়া যাবে সর্বনিন্ম ২ হাজার টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত পুরস্কার। পুরস্কার ২ হাজার টাকা হলে মোবাইলে টকটাইম। এর উপরে হলে চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। এয়ারটেল দিচ্ছে নিবন্ধনের সাথে সাথে ১০০ টাকার ফ্রি টকটাইম। তা যেকোনো অপারেটরে চলবে। রয়েছে ৩ জিবি ইন্টারনেট। আরো দেয়া হচ্ছে দৈনিক ২০০ টি ওয়াল্টন মোবাইল হ্যান্ডসেট। কক্সবাজারে ৮জন মোবাইল ফোনসেট বিজয়ী হয়েছেন।
সরকারি সিদ্ধান্ত মতে, গত বছরে ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সরকারের টেলি কমিউনিকেশন মন্ত্রণালয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশন শুরু করে। বুদ্ধাঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ। এরপর ক্রমান্বয়ে সিম নিবন্ধন হলেও এর মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির বৈধতার চ্যালেঞ্চ করে উচ্চ আদালতে রীট হয়। রীট হওয়ার সাথে সাথেই একদম ঢিলে হয়ে যায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধনকে বৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। ১৪ই মার্চ বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন। এরপর সরকার সে বার ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বেঁধে দেন। এর মধ্যে সিম নিবন্ধন না করলে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ৩০ এপ্রিলেও অর্ধেকের বেশি সিম নিবন্ধ হয়নি। তাই বাধ্য আরো একমাস সময় বাড়িয়ে আজ ৩১ মে পর্যন্ত করা হয়। এ বারে সিম নিবন্ধনে সাড়া পড়লে কাঙ্খিত সফলতা আসেনি। প্রথম দিকে মানুষ সে ভাবে সাড়া দেয়নি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে একদম ভিড় লেগে গেছে সিম নিবন্ধন পয়েন্টগুলোতে।


শেয়ার করুন