জেলায় ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ

সিটিএন ডেস্কঃ

ভ্যাপসা গরম আর মাঝে মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি। এমন আবহাওয়ায় কক্সবাজারে বেড়েছে ভাইরাসজনিত রোগের প্রকোপ। জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক সবাই। ২৫০ শয্যার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছেন ৫০০-৭০০ জন। আর হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ৯০০-১০০০ রোগী।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সুমন বড়ুয়া জানান, গত প্রায় দুমাস ধরে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছিলেন রোগীরা। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে এর প্রকোপ। ক্রমেই বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই বয়স্ক ও শিশু। বয়স্কদের মধ্যে বেশির ভাগই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। হঠাৎ করে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তার ও নার্সরা।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতালসহ বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। গত এক সপ্তাহে আউটডোরে (বহির্বিভাগে) প্রায় তিন হাজার নারী, ১৫৮০ জন পুরুষ ও ১২০০ শিশু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। হাসপাতালের বেড ছাড়াও মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশুদেরও। তাদের সঙ্গে নির্ঘুম রাত কাটছে মা-বাবা ও অভিভাবকদের। আর রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার, নার্স, আয়া এবং ওয়ার্ড বয়দের।

কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বিগত সময়ের চেয়ে চলতি বছরের এ সময়ে জ্বর, সর্দি, কাশিতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক শিশুর জ্বর সহজে নামছে না। সব ধরনের সেবা দিয়ে তাদের সুস্থ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

কক্সবাজার শহরের মোহাজেরপাড়ার শাহাদত হোসেন নামে এক শিক্ষক জানান, গত সপ্তাহ ধরে দুই শিশুসহ পুরো পরিবার জ¦রে আক্রান্ত। বড়রা সহ্য করতে পারলেও বাচ্চাগুলোর কাহিল অবস্থা। চিকিৎসকরা নানা ওষুধ দেওয়ার পরও সুস্থ হতে সময় লেগেছে।

সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের পাওয়ার হাউস এলাকার মোহসেনা আক্তার বলেন, ‘প্রথমে জ¦র ও পরে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ায় চার বছর বয়সী ছেলেকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি গত ১৫ অক্টোবর। হাসপাতালে সিট না পেয়ে শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় সেবা নেই। দুদিন চিকিৎসার পর বর্তমানে সে কিছুটা সুস্থ।’

খুরুশকুলের কুলিয়াপাড়ার হালিমা আক্তার নামে রোগীর স্বজন শাহেদ ফেরদৌস বলেন, ‘গরমে কখনো শরীর থেকে ঘাম ঝরছে, আবার ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে গিয়ে হেরফের হয়েছে শরীরে তাপমাত্রার। জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে মাকে ভর্তি করেছি। সিট না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, ঠান্ডা আর গরমের মিশ্র প্রভাব এখন আবহাওয়ায়। যা অস্বস্তিকর প্রভাব ফেলেছে জনজীবনে। এতে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হচ্ছে নানা বয়সী মানুষ। পূর্বের পরিচিত রোগগুলো দিনদিন তার ধরন পাল্টাচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ উৎপাদনে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মনে হচ্ছে। তাই এসব ওষুধ প্রয়োগ হলেও কার্যকারিতা মিলছে না। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক দশকে পরিচিত সব রোগগুলো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল ভোগ করছে মানুষ। তীব্র গরমের মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি, একটু ঠান্ডার পর আবার গরম, এমন পরিস্থিতির কারণে সিজনাল ফ্লুর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এসব রোগের বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত। আতঙ্কিত না হয়ে কাশি, নাক দিয়ে পানি ঝরা, কিংবা জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।


শেয়ার করুন