জেলার ১৬ ইউপির নির্বাচন সম্পন্ন: নিহত ২, আহত শতাধিক

1934616_1601061330214185_528613518361704757_n

শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন: 
বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে জেলার ১৬ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এতে কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গোলাগুলি, ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ নানা ঘটনায় ২ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মহেশখালীতে অন্তত ২০ কেন্দ্রে সংঘর্ষ হয়েছে। সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থক সাথে অন্যান্য প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে। এছাড়া মেম্বার প্রার্থীদের সমর্থকদের বিস্তর সংঘর্ষেও ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
তথ্য মতে, মহেশখালীতে ৭ ইউপি নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায় কালারমারছড়ার নির্বাচন। তাই গতকাল প্রথম দফার ইউপি নির্বাচনে মহেশখালীতে ৬টি ইউপির ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিদ্বদ্বি প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, ৬ ইউপিতেই সরকারদলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোট জালিয়াতি করেছেন। এর মধ্যে হোয়ানক, বড়মহেশখালী ও ছোটমহেশখালীতে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হোয়ানক ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী করিম চৌধুরী অভিযোগ করেন, সকাল থেকেই সরকার দলীয় প্রার্থী মোস্তফা কামালের সমর্থকরা প্রকাশ্যে কেন্দ্রে ঢুকে নৌকা প্রতীকে সিল মারে। ছনখোলাপাড়া, কালাগাজির পাড়া, টাইমবাজার, বানিয়াকাটা ও কালালিয়াকাটা কেন্দ্রে এসব ভোট জালিয়াতি করা হয়। এতে বাধা দেয়ার এনামের কয়েকজন সমর্থককে মারধর করা হয়েছে। তাই তিনি সকাল দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্র ছেড়ে দেন। অন্যদিকে বড় মহেশখালী ইউনিয়নে সকালে দিকে ভোট সুষ্ঠুভাবে চললেও বেলা তিনটারদিকে বড় মহেশখালী বালিকা বিদ্যালয়ে নৌকার প্রার্থী শরিফ বাদশার লোকজন ভোট জালিয়াতি করতে গেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীক এনায়েত উল্লাহ বাবুল ও তার লোক জন বাধা দেয়। এসময় ব্যাপক হামলা চালায় নৌকা সমর্থক চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন। এতে সংঘর্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ও তার ভাই জাহেদুল হক নাহিদসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন
গুরুত আহত হয়। মগরিয়াকাটা ভোট কেন্দ্রেও কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে দু’চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজনে গোলাগুলি হয়। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০জন আহত হন। এসময় আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কুতুবজোম ইউনিয়নে বিকাল ৩টার দিকে কুতুবজোম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায় ভোট কেন্দ্রে দু’মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্য ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া মাতারবাড়ী ইউনিয়নে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরান বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক এনামুল হক চৌং রুহুল এর লোক জন ভোট জালিয়াতির চেষ্টা করলে বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদ উল্লাহর লোকজনের বাধা দেয়। এতে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।
ধলঘাটা ইউনিয়নে ভোট চলাকালে ৭, ৮ ও ৯নং ভোট কেন্দ্র দু’চেয়ারম্যান প্রার্থী লোকজন দখলে নিতে চেষ্টা করলে তা সাময়িক বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু করা হয়।
টেকনাফে ভোট কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতি এবং সংঘর্ষে একজ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পুলিশসহ আহত অন্তত ২০জন। জনতা-পুলিশ ও বিজিবি সংঘর্ষে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, টেকনাফের সাবরাংয়ে শাহপরীর দ্বীপে ভোটগ্রহণ পরবর্তী ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে ৭নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে শফিক নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে মেম্বার পদপ্রার্থী নুরুল আমিন ও সেলিমের সমর্থকের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক শফিক শাহপরীরদ্বীপ মাঝরপাড়ার দুদু মিয়ার ছেলে ও সেলিমের সমর্থক।
এছাড়া টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দুই কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে দুই প্রার্থীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে। অন্যদিকে বাহারছড়া ইউনিয়নের দক্ষিন বড় ডেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংরক্ষিত মহিলা প্রার্থীর ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। একই ইউনিয়নের জব্বারিয়া শাহীন শরীফ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যে সীল মারায় এক ব্যক্তিকে এক মাসের সাজা প্রদান করা হয়েছে। এসময় উশৃংখল জনতাকে নিয়ন্ত্রনে আনতে ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। কুতুবদিয়ায়ও বিচ্ছিন্নভাবে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

১৭৩২ তালা/৬৩২

 


শেয়ার করুন