জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে চান প্রতিবন্ধী রূপম

unnamedএম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন:

অদম্য মেধাকে কাজে লাগিয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী রূপম কান্তি দাশ। কুতুবদিয়া দ্বীপাঞ্চলের অধিবাসি নিজের মেধা দিয়ে পৃথিবীকে জয় করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
মেধা ও শ্রম কাজে লাগিয়ে জীবনের কয়েকটি ধাপ সে পার করেছে। এইচএসসি ভালো ফলাফল করতে পেরে সে খুশি। তবে আরো উচ্চ শিক্ষার জন্য তার অর্থ প্রয়োজন । তার বাবার সে সার্মথ্য নেই।
সারাদেশে যখন গেল এইচএসসিতে ফলাফল বিপর্যয়ের করুণ চিত্র তখন এই অদম্য মেধাবী নানা প্রতিকুল অবস্থা পেরিয়ে ৩.৩০ পয়েন্ট পেয়ে এইচএসসিতে যোগ্য আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পুরো জেলায আরো একবার চমক সৃষ্টি করেছে এ রূপম। শারীরিক পরিস্থিতিগত কারণে রূপমকে দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবেন সে একজন প্রতিবন্ধী। লাঠিতে ভার দিয়ে চলাচল করে থাকে এই তরুণ। কথা প্রকাশের ক্ষেত্রেও রয়েছে একটু জটিলতা। একটু-একটু আধো ভাষায় কথা বলা এবং লাঠিতে ভার দিয়ে চলাচল করলেও তার ইচ্ছা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারীদের কার্যালয়ের বারান্দার এক কোণে বসবাস করে রূপম কান্তি দাশ। কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ধুপী পাড়ার বাসিন্দা লাতু কান্তি দাশের ছেলে রূপম কান্তি দাশ। ১৯৯১ সালে প্রলয়কারি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সে হারান মাকে।
ওই ঘূর্ণিঝড়ে মা দিপালী রাণী দাশ পরলোকগমন করলেও ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সকলের বড় রূপমের ইচ্ছার ডানায় বিষন্নতার কালো ছায়া নেমে আসেনি। নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে। কক্সবাজার জেলার সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার আর্থিক সহায়তায় রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম ফিলাব করে ২০১২ সালে কুতুবদিয়ার ধুরুং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩.৬৯ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করেন। নিতান্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধী রূপম আরেকটু শিক্ষার প্রত্যাশায় ছুটে আসেন কক্সবাজার শহরে। অবস্থান নেয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের সেই ক্লাব ঘরটিতে। তারপর ভর্তি হন কক্সবাজার সিটি কলেজে।
কথা হয় ভাগ্যবিড়ম্বিত রূপমের সাথে। প্রতিবন্ধী হওয়ায় কথার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা থাকলেও গানের প্রতি রয়েছে রূপমের প্রবল ইচ্ছা। গান নিয়ে বিভিন্ন সময় জাতীয় পর্যায়ের নানা প্রতিযোগীতায় অংশও নিয়েছে সে। এছাড়া কক্সবাজারের নানা অনুষ্ঠানে এ রূপমকে গান পরিবেশন করতেও দেখা গেছে।
তার লেখা-পড়ার খরচ যোগানোর এক প্রশ্নের উত্তরে রূপম জানান, মানুষের সহানুভূতিতে বেঁচে আছি । কিছু মহৎ হৃদয়ের মানুষ রয়েছে যারা আমাকে অল্প স্বল্প টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। আর ওই টাকায় নিজের দু’ বেলা খাওয়া, লেখা-পড়ার খরচ যোগিয়ে এবার এইচএসসিতে ৩.৩০ পয়েন্টে পেয়ে পাশ করেছি। এখন তার ইচ্ছা সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। তার পছন্দের বিষয় অর্থনীতি বিভাগ।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকা কিভাবে যাবে, আর কিভাবে ভর্তি কার্যক্রম চালাবে তার কিছুই জানে না রূপম। তবু তার ইচ্ছা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হয়ে পাশ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রবল ইচ্ছা তার। তার বিশ্বাস সমাজের মহৎ হৃদয়ের মানুষ গুলো তাকে সহায়তা করবে।


শেয়ার করুন