জিকা ভাইরাসের লক্ষণ ও প্রতিকার

03স্বাস্থ্য ডেস্ক

জিকা ভাইরাস আবিষ্কৃত হয় ১৯৪৭ সালে। এটি একটি মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস সমগোত্রীয় RNA ভাইরাস। ইয়েলো ফিভার গবেষকরা উগান্ডার জিকা বনে বানরের উপর গবেষণা করার সময়ে তারা বানরের শরীরে এই ভাইরাসের দেখা পান। তখন জিকা বনের নাম অনুসারেই এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে নাইজেরিয়াতে প্রথম মানুষের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। এরপর সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে থাকা এই ভাইরাসটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দেশে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জিকার প্রভাব :
২০১৫ সালে জিকা ভাইরাস মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি প্রথম ধরা পড়ে ব্রাজিলে। জিকায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে গর্ভবতী নারীদের ছোটমাথার বাচ্চা (Microcephaly) জন্মদানের হার অনেক বেড়ে যায়। শুধুমাত্র অক্টোবর ২০১৫ থেকে জানুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত ব্রাজিলে ৩৫০০ ছোটমাথার শিশু জন্মগ্রহণ করেছে যাদের মস্তিষ্কের একটি বড় অংশ তৈরিই হয়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা আরো বাড়বে। রোগটি মশাবাহিত হওয়ায় তা খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত ল্যাটিন আমেরিকাতে শুরু হয়ে মধ্য ও উত্তর আমেরিকার কিছু অংশে (মেক্সিকো, আমেরিকা, কানাডা) ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে জিকায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। এছাড়াও জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউরোপেও প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এক গর্ভবতী নারীর শরীরে জিকা ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছে স্পেন।

জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগীর লক্ষণ :
১. প্রতি ৫ জন জিকা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের মাঝে ১ জনের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
২. সাধারণভাবে জ্বর, চামড়ার র‌্যাশ, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথা, চোখের পর্দার প্রদাহ (Conjunctivitis) ইত্যাদি হয়ে থাকে। এছাড়াও মাথা ব্যাথা এবং মাংসপেশীর ব্যাথা থাকতে পারে। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
৩. লক্ষণগুলো সাধারণত মারাত্মক আকার ধারণ করে না এবং এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।
৪. জিকায় আক্রান্ত হলে সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না এবং মৃত্যুর সম্ভাবনাও অত্যান্ত ক্ষীণ।

প্রতিকার ও প্রতিষেধক :
জিকা ভাইরাস দমনের জন্য এখনো কোনো টিকা বা নির্দিষ্ট ওষুধ উদ্ভাবিত হয়নি। তবে আক্রান্ত রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিতে হবে। প্রচুর পানীয় খাবার খাওয়াতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

এ ভাইরাস থেকে প্রতিকারের উপায় হিসেবে মশা থেকে নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদে রাখতে হবে। ঘর-বাড়ি মশামুক্ত রাখতে হবে। ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে। মশার বিস্তার রোধ করতে হবে। মশানাশক ও মশারি ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদে থাকতে হবে।

বাংলাদেশে প্রায়শই কোনো রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না দিয়ে ভয় জাগিয়ে দেয়া হয়। অযথা ভীতি নিয়ে না থেকে সঠিকভাবে জানুন। নিজে সচেতন হয়ে অন্যকে জানান। সে অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করুন।


শেয়ার করুন