জার্মানিতে খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে শরণার্থীদের

Pastor Gottfried Martens prays with people from Iran during a baptism service in the Trinity Church in Berlin, Aug. 30, 2015. Hundreds of mostly Iranian and Afghan asylum seekers have converted to Christianity at the evangelical Trinity Church in the leafy Berlin neighborhood. Most say true belief prompted their embrace of Christianity, but there’s no overlooking the fact that the decision will also greatly boost their chances of winning asylum by allowing them to claim they would face persecution if sent home. (AP Photo/Markus Schreiber)

সিটিএন ডেস্ক :

মাথা নুইয়ে দিলেন মোহাম্মদ আলি জনোবি। যাজক তার মাথার কালো চুলে ‘পবিত্র’ পানি ঢেলে দিলেন।

যাজক গটফ্রাইড মার্টেন্স এই ইরানি শরণার্থীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি শয়তান আর তার দুষ্কর্ম থেকে দূরে থাকবে? তুমি কি ইসলাম থেকে দূরে থাকবে?’

‘জি,’ মনেপ্রাণে জবাব দিলেন জনোবি। এরপর মার্টেন্স তার আশীর্বাদের হাত বুলালেন এবং ‘পিতা,পুত্র এবং পবিত্র ভূতের নামে’ তাকে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করলেন।
জনোবির নাম এখন মার্টিন- তিনি আর মুসলিম নেই, খ্রিস্টান হয়েছেন।

ইরানি শহর সিরাজের কাঠমিস্ত্রী জনোবি পাঁচ মাস আগে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন।

বার্লিনের উপকণ্ঠের একটি ইভানজেলিক্যাল ট্রিনিটি চার্চে যে শত শত শরণার্থী প্রত্যাশীকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা দেয়া হয়েছে জনোবি তাদেরই একজন। এদের বেশিরভাগ ইরানি ও আফগান শরণার্থী।

জনোবির মত অনেকেই বলছেন, তারা সত্যি সত্যিই খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এখন তাদের শরণার্থীর মর্যাদা পাওয়া সহজ হবে এবং তারা দাবি করতে পারবেন যে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণের পর দেশে ফেরত পাঠানো হলে তারা নিপীড়নের শিকার হবেন।

মার্টেন্স শিকার করেন যে অনেকে জার্মানিতে থাকার জন্য ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তবে তার দাবি, খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষায় তাদের জীবন বদলে যায়। এ কারণে ধর্মান্তরিতদের ৯০ ভাগই আবার গির্জায় ফিরে আসে।

‘আমি ভালো করেই জানি যে কিছুটা শরণার্থী মর্যাদার আশায় লোকজন এখানে আসেন। আমি তাদের যোগদানের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি কারণ আমি জানি যে এখানে আসলে প্রত্যেকেই বদলে যাবেন।’

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল গত সপ্তাহে বলেছেন যে ‘ইসলাম জার্মানির অংশ’।

কিন্তু আফগানিস্তান এবং ইরানের মত দেশে কোনো মুসলিম খ্রিস্টান হলে তার মৃত্যুদণ্ড কিংবা কারাদণ্ড হতে পারে। এ কারণে খ্রিস্টান হলে কোনো শরণার্থীকে আফগানিস্তান কিংবা ইরানে হয়তো ফেরত পাঠাবে না জার্মানি।

তবে শরণার্থী সুবিধা পাওয়ার জন্য খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নেয়ার কথা কেউই প্রকাশ্যে স্বীকার করছে না। কারণ এতে আবার জার্মানিতে শরণার্থী মর্যাদা পেতে সমস্যা হতে পারে। এমনকি নিজ দেশে পরিবারের হেনস্তা হওয়ার ভয়ে অনেকে পরিবর্তিত নাম প্রকাশেও রাজি নয়।

অনেকেই বলছেন, তারা বিশ্বাসের কারণে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তবে একজন ইরানি নারী বলেছেন, শরণার্থী সুবিধা পাওয়ার জন্য বেশিরভাগ লোক গির্জায় যাচ্ছে বলেই তিনি বিশ্বাস করেন।

জার্মানিজুড়ে গির্জায় খ্রিস্টান অনুসারীদের সংখ্যা যখন ক্রমাগত কমছিল তখন মার্টেন্স দেখছেন যে তার র্গিজায় অনুসারীদের সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই বছরের মধ্যে অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে ১৫০ থেকে ৬০০ তে উন্নীত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই শরণার্থী।

মুসলিমদের খ্রিস্টান বানানোর লক্ষ্যে মার্টিন্স তিন মাসের কোর্স চালু করেছেন। কেউ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে তার শরণার্থী সুবিধা পেতে সহায়তা করেন তিনি।

জার্মানির আরো বহু গির্জায় অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে। যেমন হ্যানোভারের লুথেরান চার্চ এবং রেইনল্যান্ডে। এদের বেশিরভাগই ইরানি ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান।

জার্মানিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঠিক কতজন মুসলিম খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। দেশটিতে প্রায় ৪০ লাখ মুসলমানের বাস।

তবে বার্লিনে মুসলিমদের খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের সংখ্যা বাড়ছে। একে ‘অলৌকিক’ বলে মন্তব্য করছেন মার্টিন্স।

তিনি জানান, তার গির্জায় আরো ৮০ জন লোক ধর্মান্তরিত হওয়ার পথে রয়েছে। এদের বেশিরভাগই ইরানি ও আফগান শরণার্থী।

জার্মানিতে শরণার্থী প্রত্যাশীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চলতি বছর এই সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটা গত বছরের তুলনায় চারগুণ।

এদের বেশিরভাগই আসছেন সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে। সিরীয়রা সহজেই শরণার্থী মর্যাদা পেলেও অন্যরা হয়তো সাময়িকভাবে থাকার অনুমতি পাবেন।

তবে কিসের ভিত্তিতে শরণার্থী মর্যাদা দেয়া হয় এবং নিজ দেশে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে কত লোক শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছে তা জানাতে অস্বীকার করেছে জার্মানির ‘ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি’।

তবে রবিবার সম্পূর্ণ সাদা পোশাকে জনোবি যখন খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নিতে আসেন তখন তিনি স্বীকার করেন যে নতুন ধর্ম তাদের নতুন জীবন দেবে।

‘এখন আমরা মুক্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি খুশি যে এখানে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে এবং তারা জার্মানিতে উন্নত শিক্ষার সুযোগ পাবে,’ বলছিলেন জনোবি।

সুত্র: এপি


শেয়ার করুন