কক্সবাজার পৌরসভা

জামায়াতের ‘চেয়ারে’ জামায়াতই!

Cox municipleশাহেদ মিজান, সিটিএন

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল বরখাস্ত হওয়ায় এক নম্বর প্যানেল মেয়র হিসেবে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হচ্ছেন জিসান উদ্দিন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনি যে কোন দিন মেয়রের চেয়ারে বসবেন। তবে সবকিছু চাপিয়ে সর্বত্র যে বিষয়টি জেলাজুড়ে সাড়া ফেলেছে তা হলো, ‘জামায়াতের চেয়ারে তো জামায়াতই এসে বসছেন!’
বাঁকামুখোদের মতে, সরকার মামলার অজুহাতে জামায়াতে ইসলামির নেতা বলেই সরওয়ার কামালকে তড়িগড়ি করে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তাঁর অন্য কোন অপরাধ ছিল না। বরং সবসময় সরকার ও সরকারি দলের মানুষদের মন জুগিয়ে চলেছেন সরওয়ার কামাল। তারপরও তিনি সরকারের রোষানল থেকে রেহাই পাননি। তাই বলে সরওয়ার কামালকে সরিয়ে যাকে এনে বসানো হচ্ছে তিনি আসলে কে? এই প্রশ্ন এখন পুরো জেলাজুড়ে।
খোঁজ নিয়ে যতদূর জানা যায়, জিসান উদ্দিন বর্তমানে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হলেও তিনি আসলে যুবদলের কেউ নন! যুবদলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও মনে করেন, জিসান উদ্দিন যুবদলে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন!
সংশ্লিষ্টদের মতে, জিসান উদ্দিনের অন্তরজুড়েই আছে জামায়াতে ইসলামির আদর্শ। তিনি ছাত্র জীবন থেকে ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামির ‘ঘোরতর সমর্থক’দের একজন। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হলেও তিনি প্রতিমাসেই জামায়াতের ফান্ডে নির্ধারিত হারে মোটা অংকের টাকা জমা দেন।
জামায়াতে ইসলামির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মী জানান, জিসান উদ্দিন পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রকাশ্য সমর্থনে। পৌরসভার নির্বাচনকালে জামায়াতের দাপ্তরিক সিদ্ধান্তই ছিল, জিসান উদ্দিনকে জিতিয়ে আনতে হবে।
তাহলে বাঁকামুখোরা বলতেই পারছেন, ‘জামায়াতের চেয়ারে তো আসলে জামায়াতই এসে বসছেন!’
সূত্র মতে, বিগত কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ১২নং ওয়ার্ডে জামায়াতের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মাওলানা আলগমীর। কিন্তু জিসান উদ্দিনকে সমর্থন দেয়ার জন্য মোহাম্মদ আলমগীরকে তার মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করেছিল জামায়াতে ইসলামি। আলমগীর সরে দাঁড়ালে জিসান উদ্দিনই জামায়াতের একক প্রার্থী হয়েছিলেন। একই সাথে জিসানের জন্য কোমর বেঁধে নির্বাচন পরিচালনা করেছিলেন স্থানীয় জামায়াত নেতা-কর্মীরা। জেলা জামায়াত পরোক্ষভাবে তাতে সব ধরণের সহযোগিতা করেছিলেন। এমনকি জামায়াতের মেয়র প্রার্থী সরওয়ার কামালেরও সমর্থন ছিল এই জিসানের প্রতি। সে ধারায় জিসান উদ্দিনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন স্থানীয় জামায়াত নেতা ফজলুল কাদের।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, সরওয়ার কামাল মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই প্যানেল নির্বাচনে তাঁর একক চেষ্টায় জিসান উদ্দিনকে প্যানেল মেয়র-০১ হিসেবে তুলে আনার সবধরণের কলকাঠি নেড়েছিলেন আর জিসান উদ্দিন প্যানেলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে এক নম্বর প্যানেল মেয়র হয়েছিলেন। আর এই দুঃসময়ে সেই জিসানই মেয়র সরওয়ার কামালের মেয়র পদ কেড়ে নিতে ‘ছুরি চালানো’র সব আয়োজনে নেপথ্যে কাজ করে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বরখাস্ত করাতে যা কিছু করার করেছেন বলেই মনে করেন বিএনপি ও জামায়াতের একটি বৃহৎ অংশ।
সূত্র মতে, কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পর নিজের আদর্শ ধামাচাপা দিয়ে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতার মদদে যুবদলে ঢুকে পড়েছেন জিসান।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও জিসান উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


শেয়ার করুন