জামায়াতমুক্ত দেশ গড়ার প্রথম পদক্ষেপ!

index20সিটিএন ডেস্ক:
গণতন্ত্রকে বিকশিত এবং নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল করতে আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ব্যানার এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে করা হচ্ছে বলে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে প্রকাশ্যে বলা হলেও এর পেছনে মূল কারণ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতকে জনপ্রতিনিধিহীন করে তোলা, স্থানীয়ভাবে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করা এবং জাতীয়ভাবে জামায়াতকে নির্মূল করা। এছাড়া দলের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানো এর পেছনের আরো একটি কারণ। আওয়ামী লীগের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র মতে, এ পর্যন্ত যত স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সবই নির্দলীয়ভাবে হলেও অন্তরালে স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনেই হয়েছে। তাই এসব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব প্রার্থীই দলীয় সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও সমর্থন দেয়া-নেয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার আইন থাকলেও সব নির্বাচনই মূলত দলীয়ভাবে হয়ে এসেছে।

সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হওয়ার আইন থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনে দলীয় ‘মুড’ চলে আসে। এর চেয়ে ‘আইন সংশোধন করে দলীয়ভাবে এই নির্বাচন হওয়াই ভালো’ বলে মনে করেন তিনি। এজন্য আইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে জোরেশোরে। সোমবার এ সংক্রান্ত একটি আইনেরও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের অনুমোদন দেয়ার বিষয় অনুসন্ধান করে আওয়ামী লীগের যেসব রাজনৈতিক সমীকরণ রয়েছে, তা হলোথ বিগত পৌরসভা, মেয়র এবং উপজেলা নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় সারাদেশে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এই ভরাডুবির কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে চরম বেকায়দায় পড়তে হয়েছে।

সূত্র জানায়, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত যেন এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারে, এ ধরনের একটি কারণও এখানে কাজ করেছে। নির্দলীয় খোলসে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার সুযোগে একরকম দলীয় আবহ চলে আসে এসব নির্বাচনের ক্ষেত্রে। এসব নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয় আওয়ামী লীগকে। একটানা প্রায় ৭ বছর ক্ষমতায় থাকায় দলের কোন্দল খুব একটা নিরসন হয়নি। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে দলের একাধিক প্রার্থী দেখা যায়। এজন্য সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। এরপর সারা দেশের পৌর মেয়র নির্বাচনগুলোতেও। তাই দলীয় প্রার্থী চিহ্নিত করতে ভোটারদের সহজ হবেথ এই ভাবনা থেকেই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

গাজীপুর সিটিতে আজমত উল্লাহ আর জাহাঙ্গীর ইস্যু নিয়ে দলের অভ্যন্তরে দলাদলি সৃষ্টি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হারতে হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহকে। নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী লীগদলীয় সমর্থন নিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং শামীম ওসমানের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছে। পরে আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ নিয়ে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বিজয়ী হলেও তার একরকম ‘সুশীল’ বনে যাওয়ার ঘটনাটি আওয়ামী লীগ ভালোভাবে নেয়নি। এসব বিষয় মাথায় রেখে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের জন্য আইনি প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানান, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে ভোটারদেরও সহজ হবে দলের প্রতীক দেখে দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে। এটি গণতন্ত্র বিকাশের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতাদের মতে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে যারাই নির্বাচন করে বিজয়ী হন, তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব (আরপিও) অধ্যাদেশ থাকায় সমর্থনের বিষয়টি থাকে পর্দার আড়ালে। পর্দার আড়ালে দলীয় সমর্থন নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও পরে তাদের অবস্থা এবং অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। বনে যান ‘সুশীল’। নির্বাচিত হয়ে দলের অবস্থানের বিরুদ্ধে কথা বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেন না তারা। এ ধরনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণে দলীয়ভাবে এবং দলীয় প্রতীক নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবেই হয়ে আসছে। এটিও উদাহরণ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

এছাড়া জনপ্রশাসনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা, বাংলাদেশেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে দলীয়ভাবে, প্রতীক ব্যবহার করে। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে করার ব্যাপারে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ক্ষমতাসীনরা।

জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দলীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সংশোধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

তবে বিএনপির এই সমালোচনাকে অমূলক বলে মনে করে ক্ষমতাসীন জোট। তাদের সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, পৃথিবীর প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশেই স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়। এখানে সমালোচনার কোনো সুযোগ নেই। গণতন্ত্র চর্চার জায়গা থেকেই সরকার স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে যতই নির্দলীয় বলা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে সেই আবহ বজায় রাখা যায় না। বরং লুকোচুরি না করে প্রকাশ্যে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে করাই তো ভালো। এখানে সমালোচনা বা দোষের কিছু নেই। বরং সুশৃক্সখল প্রক্রিয়া এটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, সব স্থানীয় নির্বাচনেই দলীয় একটা ভাব চলে আসে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনেও দল থেকে প্রার্থী ঠিক করে দেয়া হয়। কাজেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে সমস্যা কোথায়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়। বাংলাদেশে হলে দোষ কোথায়। স্থানীয় নির্বাচনেও সবাই বলেথ অমুক দলের অমুক প্রার্থী। প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া যদি সমস্যা না হয়, তাহলে দলীয় প্রতীক দিলে সমস্যা কেন হবে। এতে বরং নির্বাচন আরো সুশৃক্সখল হবে। এটি হবে বর্তমান সরকারের একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সারাদেশে নির্বাচন তো দলীয়ভাবেই হয়; শুধু দলীয় প্রতীক থাকে না। সর্বশেষ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল। বিএনপির সমালোচনা অমূলক। বিএনপি এখন অমূলক এবং অপ্রয়োজনীয় একটি দলে পরিণত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তখন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে এ বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। মূলত একটি সাধারণ প্রক্রিয়ার মধ্যে স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে নিয়ে আসার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সৈয়দ আশরাফ স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে দলীয় প্রতীকে করার ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করে আসছিলেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দায়িত্ব দেন। তবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন আইনি বিষয়াদি দেখভাল করছেন। যাযাদি


শেয়ার করুন