জান্নাতীদের জন্য ৮টি বিশেষ নেয়ামত

31268-400x266পরকালীন স্বর্গের নাম ‘জান্নাত’। দুনিয়ার জীবনে যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে, পরকালীন হিসাবে যার পাপের চেয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবেÑ তাদের জন্য আল্লাহ যে সকল স্বর্গ বা উদ্যান প্রস্তুত রেখেছেন তা-ই জান্নাত। জান্নাতের নেয়ামত এত বেশি যে, তা নিজ চোখে দেখার আগে কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। একজন মানুষের চূড়ান্ত সফলতা জান্নাত পাওয়া না পাওয়ার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ যে জান্নাত পেল সেই সফল হলো। নিচে কুরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাতীদের জন্য ৮টি বিশেষ নেয়ামাতের কথা উল্লেখ করা হলোÑ
জান্নাতের বিশাল বিস্তৃতি
জান্নাতের বিস্তৃতি অনেক বিশাল। নিজ দোখে দেখা ছাড়া জান্নাতের পরিমাণ অনুমান করা দুরূহ। আল্লাহ তালায়া বলেন, ‘তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে ও সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও জমিনের সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। [সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৩]। অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘তুমি যখন (জান্নাত) দেখবে, তখন দেখতে পাবে ভোগ-বিলাসের নানান সামগ্রী আর এক বিশাল রাজ্য।’ [সুরা আদ-দাহর : আয়াত ২০]
জান্নাতের শত স্তর
জান্নাতে শত স্তর রয়েছে। আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে এত দূরত্বÑ যতটা দূরত্ব আকাশ ও জমিনের মাঝে। রাসুল সা. বলেন, ‘জান্নাতে শত স্তর রয়েছে। প্রত্যেক স্তরের মাঝে দূরত্ব হলো আকাশ ও জমিনের দূরত্বের সমান। আর ফেরদাউস তার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে আছে। আর সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝরনা প্রবাহমান। এর উপরে রয়েছে আরশ। তোমরা আল্লাহর নিকট জান্নাতের জন্য দোয়া করলে জান্নাতুল ফেরদাউসের জন্য দোয়া করবে।’ [তিরমিজি : কিতাবুল জান্নাত]
জান্নাতের অট্টালিকা
জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সোনা-রূপার ইট দিয়ে নির্মিত হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সৃষ্টিকে কী দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে? রাসুলাল্লাহ সা. বললেন, পানি দিয়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘জান্নাত কী দিয়ে নির্মিত? তিনি বললেন, একটি ইট রৌপ্যের এবং আরেকটি ইট স্বর্ণের। তার গাঁথুনি হলো সুগন্ধিযুক্ত মেশক আম্বর। তার কংকর মোতি ও ইয়াকুতের। তার মাটি জাফরানের। যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করবে সে জীবন উপভোগ করবে, তার কোনো কষ্ট হবে না। চিরকাল জীবিত থাকবে, মৃত্যু হবে না। জান্নাতীদের কাপড় কখনো পুরানো হবে না। আর তাদের যৌবন কখনো বিনষ্ট হবে না’। [তিরমিজি : কিতাবুল জান্নাহ]
সর্বশেষ প্রবেশকারীর জন্য দশগুণ
সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারীকে দুনিয়ার চেয়ে দশগুণ বড় জান্নাত দান করা হবে। রাসুল সা. বলেন, ‘জাহান্নাম থেকে সবশেষে বের হয়ে আসা ব্যক্তিকে আমি চিনি। সে হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। তাকে বলা হবে, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর’। নবী সা. বলেন, ‘সে গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে দেখবে, লোকেরা স্ব স্ব স্থান অধিকার করে আছে। অতঃপর তাকে বলা হবে, ‘আচ্ছা সে যুগের (জাহান্নামের শাস্তি) কথা তোমার স্মরণ আছে কি? সে বলবে, হ্যাঁ, মনে আছে। তাকে বলা হবে, তুমি কী পরিমাণ জায়গা চাও, তা ইচ্ছা কর। সে ইচ্ছা করবে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি যে পরিমাণ ইচ্ছা করেছ তা এবং দুনিয়ার দশগুণ জায়গা তোমাকে দেয়া হলো। একথা শুনে সে বলবে, আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন? অথচ আপনি হলেন সর্ব শক্তিমান। বর্ণনাকারী ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এ সময় আমি রাসুল সা.কে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়েছে।’ [মুসলিম : কিতাবুল ঈমান]।
জান্নাতে চিরস্থায়ী বসবাস
মুমিন নর-নারী জান্নাতে চিরস্থায়ী বসবাস করবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিন পুরুষ আর মুমিন নারীর জন্য আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন জান্নাতের, যার নি¤œদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, আর জান্নাতে চিরস্থায়ী উত্তম বাসগৃহের; আর সবচেয়ে বড় (যা তারা লাভ করবে তা) হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই হলো বিরাট সাফল্য।’ [সুরা তওবা : আয়াত ৭২]
জান্নাতীদের চেহারা ও বয়স
জান্নাতীদের চেহারায় কোনো দাড়ি-গোঁফ থাকবে না। তাদের বয়স হবে ত্রিশ থেকে তেত্রিশের মাঝামাঝি। হজরত মুয়াজ বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেন, ‘জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের সময় তাদের চেহারায় কোনো দাড়ি-গোঁফ থাকবে না। চক্ষুদ্বয় লাজুক হবে। বয়স হবে ত্রিশ থেকে তেত্রিশ এর মাঝামাঝি।’ [তিরমিজি]
প্রথম খাবার ও পানীয়
জান্নাতীদের প্রথম খাবার ও পানীয় সম্পর্কে রাসুল সা. এর খাদেম সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল সা. এর নিকট দাঁড়িয়ে ছিলাম। ইতোমধ্যে ইহুদীদের পাদ্রীদের মধ্য থেকে একজন পাদ্রী আসল এবং জিজ্ঞেস করল, যেদিন আকাশ ও জমিন প্রথম পরিবর্তন করা হবে তখন মানুষ কোথায় থাকবে? রাসুল সা. বললেন, পুলসিরাতের নিকটবর্তী এক অন্ধকার স্থানে। অতঃপর ইহুদি আলেম জিজ্ঞেস করল, সর্বপ্রথম কে পুলসিরাত পার হবে? তিনি বললেন, গরিব মুহাজিরগণ (মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারী)। ওই ইহুদি পাদ্রী আবার জিজ্ঞেস করল, জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর সর্বপ্রথম তাদেরকে কী খাবার পরিবেশন করা হবে? রাসুল সা. বললেন, মাছের কলিজা। ইহুদি জিজ্ঞেস করল, এর পর কী পরিবেশন করা হবে? রাসুল সা. বললেন, এরপর জান্নাতীদের জন্য জান্নাতে পালিত গরুর গোশত পরিবেশন করা হবে। এরপর ইহুদি জিজ্ঞেস করল, খাওয়ার পর পানীয় কী কী পরিবেশন করা হবে? রাসুল সা. বললেন, সালসাবিল নামক ঝরনার পানিৃ। [মুসলিম]
খাবার হজম প্রক্রিয়া
জান্নাতীদের প্র¯্রাব-পায়খানা করার প্রয়োজন হবে না। এবিষয়ে হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘জান্নাতীরা পানাহার করবে কিন্তু থুথু ফেলবে না এবং পায়খানা-প্রস্রাবও করবে না। সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, তাহলে তাদের খাবার কোথায় যাবে? তিনি উত্তরে বললেন, ঢেকুর ও ঘামের মাধ্যমে তা হজম হবে। জান্নাতীরা এমনভাবে আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবিহ পাঠ করবে যেমন তারা শ্বাস গ্রহণ করে।’ [মুসলিম]।


শেয়ার করুন