কক্সবাজারে

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পূর্নবাসনে ‘বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নিয়ে শংকা

untitled-9_144786এম. শাহজাহান চৌধুরী শাহীন :

প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক কক্সবাজারের সদর উপজেলার খুরুশকুলে ‘বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নিয়ে তৈরী হয়েছে নানা শংকা। মাটির ভরাট নামে বরাদ্দকৃত অর্থ হরিলুট ও কতিপয় জনপ্রতিনিধির চাপের কারণে বরাদ্ধ ছাড় না দেয়ায় অভিযোগে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনিশ্চিয়তার মুখে পড়ছে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারণ নির্মাণ কাজও। কারণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে বসবাসকারী জলবায়ু উদ্বাস্তু প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারকে ‘খুরুশকূল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে’ পূনর্বাসন করার কথা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হবে মূলতঃ কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে বসবাসকারী জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর জন্য। খুরুশকুল মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানের ২৫৩.৩৫ একর জমিতে এই বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহন করা হয়। এ প্রকল্পে ৪ হাজার ৪ শত ৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পূনর্বাসনের কথা রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে মাটি ভরাট কাজে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। আর কাজ বাস্তবায়নকারির পক্ষে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির বাধায় এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো উপক্রম হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ৪১.২৫ একর জমিতে মাটি ভরাট কাজের জন্য ৫ হাজার মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্ধ দেয়া হয় দেড় হাজার মেট্রিক টন গম। কাজ বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় খুরুশকূল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমকে সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রকল্প কমিটিও গঠন করা হয়। কাজের দেখ ভাল করতে কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাকী বিল্লাহ।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, বরাদ্ধ দেয়া দেড় হাজার মেট্রিক টন গম নিয়ে ভাগবাটোয়ারা চলেছে। কাজের শুরুতে কোন প্রকার কাজ না করে দফায় দফায় ভাগবাটোয়ারা শুরু করে প্রকল্প কমিটি। এতে বিরোধ দেখা দেয় এক জনপ্রতিনিধির। ওই জনপ্রতিনিধি ভাগবাটোয়ারার বিষয়টি জানতে পারে নিজের ভাগ না পাওয়া নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ শুরু করেন। এতে বেকায়দায় পড়ে প্রকল্প কমিটি। এর পরেও সম্প্রতি মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজসে বরাদ্দ দেয়া দেড় হাজার মেট্রিক টনের মধ্যে মাত্র ২/৩ শত মেট্রিক টনের মতো গমের বিনিময়ে মাটি ভরাট কাজ করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় শ্রমিকরা।

তবে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে মাটি ভরাটের তেমন কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ওখানে দেখা গেছে, ঢেবা, নিচু জমি ও খাল ঠিক আগের মত রয়ে গেছে।

প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, এই হরিলুটের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের একটি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে মাটি ভরাট প্রকল্প কমিটির দায়িত্বে থাকা লোকজনের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় চাপের কারণে প্রশাসনও বরাদ্ধ পাওয়া গমের ছাড়পত্র দিচ্ছে না।

এ নিয়ে গত ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. জহিরুল হকের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় প্রকল্পের কাজে ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রতিনিধি দল পরিদর্শনকালে জুন মাসের মধ্যে বরাদ্দ হওয়া ৫ হাজার মেট্রিক টন গমের বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪১.২৫ একর জমির মাটি ভরাট কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়ের পর আরও চার মাস অতিবাহিত হলেও প্রস্তাবিত মাটি ভরাট কাজের ৪১.২৫ একরের মধ্যে অর্ধেক কাজই শেষ করা যায়নি। সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর দ্রুত কাজ এগিয়ে নিতে ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বরাবরে। এতে প্রতি সপ্তাহে কাজের অগ্রগতি জানাতেও নির্দেশ দেয়া হয়। অথচ এরপরও কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি।
কিন্তু মাটি ভরাট প্রকল্প কমিটি দেড় হাজার মেট্রিক টন গমের বিনিময়ে মাটি ভরাট কাজ শেষ করা হয়েছে দাবি করে বরাদ্ধ পাওয়া অপর সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন গমগুলো ক্ষমতাসীন দলের একটি প্রভাবশালী মহলের চাপে প্রশাসন ছাড়পত্র (ডিও) দিচ্ছে না অভিযোগ তুলেছে।

এব্যাপারে মাটি ভরাট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, প্রকল্পটির কাজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। প্রকল্পটিতে একটু হের-ফের হলেই বিপদে আমাদের পড়তে হবে। এ কারণে প্রকল্পটিতে যে কারো লুটপাটের সুযোগ নেই। বর্তমানে প্রকল্পের কাজের জন্য প্রশাসন প্রভাবশালী মহলের চাপে বরাদ্ধ পাওয়া গমও ছাড়পত্র (ডিও) দিতে পারছে না।

প্রকল্প কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও খুরুশকুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প হওয়ায় আমরা দ্রুত এবং খুবই সতর্কতার সাথে কাজ করছি। এ কারণে অনেকের অন্যায় আবদার পূরন করা সম্ভব হচ্ছে না। এনিয়ে ক্ষমতাসীন একটি প্রভাবশালী মহল স্থানীয় প্রশাসনকে কাজের বিপরীতে গমের ছাড়পত্র (ডিও) দিতে বাধা দিচ্ছে। এমনকি আমাকে চাপে রাখতে মহলটি আমাকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও বহিস্কার করেছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে বলেন, প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে কাজের গতি বাড়াতে একটি ফ্যাক্স-বার্তা এসেছে। কিন্তু সরকারী দলের এক জনপ্রতিনিধির বাধার কারণে ছাড়পত্র দিতে পারছি না। তাতে কাজ বাস্তবায়নে একটু জটিলতা তৈরী হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন জানান, নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা কাজ বাস্তবায়ন চাই। আমি ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি কমিটিকে কাজ করার জন্য ছাড়পত্র ছাড় দিতে। কিন্তু এরপরও কেউ ছাড়পত্র না দিলে সংশ্লিষ্টরাই দায়ী থাকবে।


শেয়ার করুন