জঙ্গি রাশিকের মা অজ্ঞান, বাবা মুখ দেখতে চান না

fileআদরের ছোট ছেলে তাজ-উল-হক রাশিক জঙ্গি- এ কথা শুনেই মা জাহানারা বেগম অজ্ঞান। আর বাবা রবিউল হক নিহত জঙ্গি ছেলের মুখও দেখতে চান না’।

‘রাশিক মাকে বলেছিলেন, ‘মা, আমি বেকার বসে থেকে লাভ কি? চাকরি নেই’। এমন আদরমাখা কথায় মা নির্ভয়ে ছিলেন। তবে ছেলে যে জঙ্গি হয়েছেন- তা জানতেন না’।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সকালে এসব তথ্য জানান রাজধানীর কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ে নিহত জঙ্গি রাশিকের ধানমণ্ডির বাসার ম্যানেজার আলমগীর হোসেন।

ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সড়কের ৭২ নম্বর ‘ধানমণ্ডি প্রাইড’ নামের ৬তলা ভবনের ৩য় তলার বি-৩ ফ্ল্যাটে হক-বেগম দম্পতির বসবাস।

রাশিক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসেম্বরে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) পাস করেন। গত জানুয়ারি মাস থেকে বাসায় আসেন না তিনি।

রাশিকের বড় ভাই তাজ-উল-হক রাজিব পেশায় আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার। রাশিকের বাবা লন্ডন ফেরত রবিউল হক গত প্রায় ১৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে ধানমণ্ডি প্রাইডের এ ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন।

জাহাজ বিল্ডিং নামে পরিচিত কল্যাণপুর ৫ নম্বর রোডের ৫৩ নম্বর বাড়ি তাজ মঞ্জিলে গত সোমবার (২৫ জুলাই) রাতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। পরে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ভোরে ‘স্টর্ম-টোয়েন্টি সিক্স’ অপারেশন চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এতে নয় জঙ্গি নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে যে আটজনের পরিচয় এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে তাদেরই একজন তাজ-উল-হক রাশিক।

ধানমণ্ডি প্রাইডের ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি প্রায় ১৭ মাস ধরে এ অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার হিসেবে রয়েছি। রাজিবকে প্রায়ই দেখলেও রাশিককে মাত্র একবার দেখেছি’।

‘সবাই বলতেন, রাজিব-রাশিক খুবই ভালো ছেলে। বাবা খুবই পরহেজগার মানুষ। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। রাশিক শুনতাম, লেখাপড়া করেন। এর বাইরে কিছু জানি না’।

আলমগীর জানান, ‘গতকাল (বুধবার) কিছু আত্মীয়-স্বজন এসেছেন। মায়ের তো জ্ঞান ফেরেনি। বাবা তো হার্টের রোগী। ছেলে জঙ্গি শোনার পর থেকে একবারও বের হননি’।

‘ধানমণ্ডি প্রাইড’ অ্যাপার্টমেন্টের সেক্রেটারি ডা. এম এ জলিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘রবিউল হক খুবই ভদ্র মানুষ। কারো সঙ্গে কোনো টু শব্দ করেননি- এতো ভালো মানুষ’।

তিনিও বলেন, ‘রাশিক জঙ্গি শোনার পর থেকে তার মা অজ্ঞান। বাবা কিছুদিন আগে ব্যাংকক থেকে হার্টের চিকিৎসা করে এসেছেন। কিন্তু রাশিক কখনো দেখতে আসতেন না’।

ডা. জলিল বলেন, ‘গত প্রায় ১৫ বছর ধরে রবিউল হক এ অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকেন। এর মালিক গুলশানের এক বাসিন্দা। কোনোদিন তাদের খারাপ কিছু দেখিনি’।

জানুয়ারি মাসে রাশিক ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। বড় ভাই রাজিব আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার। রাশিকের কথা শুনে বাবা একেবারেই অসুস্থ হয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি।

রাশিক কিভাবে জঙ্গি হলেন, তার মধ্যে জঙ্গি হওয়ার মতো খারাপ কিছু দেখেছেন কি-না- এমন প্রশ্নে জলিল বলেন, ‘কোনোদিন রাশিকের মধ্যে খারাপ কিছু দেখিনি’।

‘রাশিকের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিল, রাশিক ফোন করতেন। তবে কিছুদিন পর পর ফোন করে মাকে বলতেন, আমি চট্টগ্রামে চাকরি করছি’- বলেন ডা. জলিল।

‘পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তারা আর জিডি করেননি। চার মাস আগে বাসা থেকে বলে গেছেন, আমি একটা চাকরিতে যাচ্ছি। এর মধ্যে আর বাসায় আসেননি’।

‘এমন একজন ছেলে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ায় পরিবারের সবার সঙ্গে আমরাও ব্যথিত। পরিবারের কারো কথা বলার মতো অবস্থা নেই’ বলেও জানান ডা. এম এ জলিল।

ধানমণ্ডি প্রাইডের চারজন নিরাপত্তাকর্মীর একজন নাম প্রকাশ না করে বাংলানিউজকে বলেন, র‌্যাবের লোকজন এসে একবার তথ্য নিয়ে গেছেন।

রাশিকের মা-বাবাকে থানায় নিয়ে আবার বাসায় দিয়ে গেছে পুলিশ। আত্মীয়-স্বজন একের পর এক আসছেন। পরিবারের সবাই শোকে শোকাহত বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা,


শেয়ার করুন