জঙ্গিবাদের সঙ্গে লড়ছে বাংলাদেশ

95360_35সিটিএন ডেস্ক:

রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে উগ্রপন্থি দলগুলোর উত্থানের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বাংলাদেশে। কিছু রাজনৈতিক ভাস্যকার ও মানবাধিকার কর্মীরা এমন বার্তা দিয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে ইতালি ও জাপানের নাগরিক হত্যার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। এর আগে এ বছর উগ্রপন্থিদের হামলায় নিহত হন কয়েকজন ব্লগার। জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা চার ব্লগার হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এসব সিরিজ হত্যাকাণ্ড এবং বাংলাদেশে গড়ে ওঠা আনসার বাংলা ও আন্তর্জাতিক জিহাদি নেটওয়ার্কের মধ্যে যোগসূত্রের আলোকে মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের শঙ্কা বাড়ছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ গ্রাপলস উইথ ইসলামিস্ট মিলিট্যান্টস’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চার ব্লগার হত্যার দায় স্বীকার করা আনসার বাংলা ততটা পরিচিত ছিল না। পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের সঙ্গে আইএসের যোগসূত্র থাকতে পারে। এদিকে, আইএস দাবি করেছে, তাদের সদস্যরা গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকাতে ইতালির ত্রাণকর্মীকে হত্যা করেছে। আর শনিবার হত্যা করেছে দেশের উত্তরাঞ্চলে এক জাপানি নাগরিককে। এসব হত্যাকাণ্ড আর স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর যোগসূত্রের আলোকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের শঙ্কা বাড়ছে। মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে অতীতে ইসলামপন্থি জঙ্গিবাদ তুলনামূলক বিরল ছিল এবং রাষ্ট্র তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমাজে ধর্মের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে বড় ধরনের আন্দোলন ও পাল্টা আন্দোলন হয়েছে। এ বিতর্ক চলার একই সময় সংঘটিত হয়েছে নির্বাচন ইস্যুতে দেশটির প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহিংস রাজনৈতিক বিভাজন। কর্তৃপক্ষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে শত শত মানুষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলায় মারা গেছেন। রোববার সরকারি কর্মকর্তারা দুই বিদেশী নাগরিত হত্যায় আইএসের দাবি নাকচ করে দেন। তারা দোষারোপ করেছেন দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশে কোন আইএস নেই।’ তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোকে পুলিশ বলেছে, তারা কমপক্ষে একডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা আইএসের জন্য সমর্থন বাড়াতে কাজ করছিল বলে দাবি করেছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে আইএসের রিক্রুটমেন্ট পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় তিনজন। এদিকে, ব্লগার হত্যাকাণ্ডগুলোর আগে পুলিশ ও সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞরা আনসার বাংলাকে ওতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিতো না। এখন তারা বলছেন, দলটি বড় ধরনের হুমকির কারণ। সিনিয়র এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘দলটি আদর্শগত ও কৌশলগত দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দলগুলোকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করে আসছে।’ ইন্টারনেট ফোরামে আনসার বাংলা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে পরিচিত। তারা আইএসের রিক্রুটমেন্ট ভিডিওগুলো বাংলায় ভাষান্তর করেছে। মে মাসে পুলিশ সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, সে মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের সঙ্গে লড়াই করতে আগ্রহী বাংলাদেশীদের তালিকা করছিল। এ বছর ব্লগার হত্যাকাণ্ডগুলোকে কেন্দ্র করে আনুমানিক একডজন ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছে। এদের প্রত্যেকেই কারাগারে রয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাফকাত মুনির বলেন, আনসার বাংলার উত্থান একটি বিপজ্জনক নতুন অধ্যায় আর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সমন্বিত একটি উগ্রবাদবিরোধী নীতি প্রয়োজন।


শেয়ার করুন