ছোট্ট একটি আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসির

গোলাম মাওলা রনি

rony_92767-400x271পবিত্র কোরআনের ছোট্ট একটি আয়াত। সেখানে বাক্য মাত্র দুটি, তাও আবার সংক্ষিপ্ত। অথচ অর্থ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিষয়বস্তুর গুরুত্বের কথা চিন্তা করলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। আয়াতটিতে আল্লাহপাক মানুষের রুহ এবং বুদ্ধি সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। সূরা বনি ইসরাইলের ৮৫ নম্বর আয়াতের বাংলা তর্জমায় বলা হয়েছে- ‘তারা আপনাকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে; বলে দিন- রুহ আমার রবের নির্দেশ মাত্র। তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই প্রদান করা হয়েছে; ব্যস এটুকুই- অথচ আয়াতটির গভীরতা প্রশান্ত মহাসাগরের অতলান্ত পেরিয়ে চলে যাবে অসীমের পানে। আবার যদি একে উচ্চতায় তোলা হয় তবে আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-তারা ভেদ করে পৌঁছে যাবে আদি ঠিকানায়- অর্থাৎ আরশে আজিমের সংরক্ষিত লোহ মাহফুজে।
আয়াতটির তাফসিরে প্রবেশের আগে সূরা বনি ইসরাইল সম্পর্কে কিছু বলে নিই। এটি আল কোরআনের ১৭ নম্বর সূরা। এটিকে যেমন সূরা বনি ইসরাইল বলা হয় তেমনি সূরা আল ইসরা নামেও রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। আল ইসরা শব্দের অর্থ, রাত্রিকালীন ভ্রমণ বা ঞযব হরমযঃ লড়ঁৎহবু অন্যদিকে; বনি ইসরাইল শব্দের অর্থ হলো ইসরাইলের সন্তানগণ বা ঈযরষফৎবহ ড়ভ ওংৎধবষ. সূরাটির ১১১টি আয়াত রয়েছে। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল হিজরতের ঠিক এক বছর আগে। সূরাটিতে পবিত্র মেরাজের ঘটনা বর্ণিত হলেও এটির মাধ্যমে মুসলমানগণ সর্বপ্রথম দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশনা পায়। এর বাইরে সূরাটিতে ব্যভিচার নিষিদ্ধকরণ, পিতামাতার প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য প্রদর্শন এবং তৎকালীন সময়ে মুসলমানদের দৈন্যদশার বিপরীতে মহান আল্লাহর প্রতি নির্ভর করে ধৈর্যশীল হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
ইমাম আল হাফিজ আবু আবদুল্লাহ বিন ইসমাইল আল বুখারি হজরত ইবনে মাসউদ (রা.)-এর রেওয়াতে বর্ণনা করেন- ‘সূরা বনি ইসরাইল, সূরা কাহফ এবং সূরা মারিয়াম সর্বাপেক্ষা সুন্দরতম সূরা এবং এগুলো হলো আমার কাছে মহামূল্যবান স্বর্ণখনি; অন্যদিকে ইমাম আহম্মদ ইবনে হাম্বল মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর রেওয়াতে বলেন, আল্লাহর রসুল (সা.) কখনো কখনো কোনো বিরতি না দিয়ে এমনভাবে রোজা রাখতেন যখন মনে হতো- তিনি হয়তো রোজা ভাঙবেন না। আবার কখনো কখনো অনেক দিন একনাগাড়ে এমনভাবে রোজা রাখতেন না যখন মনে হতো তিনি হয়তো আর রোজা রাখবেন না। তার নিত্যকার জীবনধারায় এই ব্যতিক্রমের মধ্যেও তিনি প্রতিরাতে নিয়ম করে সূরা বনি ইসরাইল এবং সূরা আজ-যুমার তেলাওয়াত করতেন।
মূল সূরার বিস্তারিত বর্ণনা বাদ দিয়ে এবার আমরা সরাসরি প্রসঙ্গে চলে যাই। ৮৫ নম্বর আয়াত নাজিলের শানে-নজুল বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম বুখারি (রহ.) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর রেওয়াতে বর্ণনা করেন, আমি একদিন আল্লাহর রসুল (সা.) সঙ্গে একটি খামারবাড়িতে ছিলাম। রসুল (সা.) একটি তালপাতার বোনা বিছানায় বসে আরাম ফরমাচ্ছিলেন। এমন সময় সেখান দিয়ে কয়েকজন ইহুদি যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে একদল অন্যদলকে বলল, তাকে (হুজুর (সা.)-কে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর তো! একদল বলল, কী দরকার জিজ্ঞাসা করার! কারণ সে হয়তো এমন জবাব দেবে যা শুনে তোমাদের একদম ভালো লাগবে না। অন্যদল বলল, আচ্ছা ঠিক আছে দেখি না কী বলে। শেষমেশ তারা একত্র হয়ে আল্লাহর রসুল (সা.)-কে রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। হুজুর (সা.) তাদের প্রশ্ন শুনে চুপচাপ রইলেন এবং কোনো উত্তর দিলেন না। আমি বুঝলাম হুজুরের প্রতি ওহি নাজিল হচ্ছিল। সুতরাং আমি তার কাছ থেকে একটু দূরে অবস্থান নিলাম। ওহি নাজিল সম্পন্ন হলে রসুল (সা.) নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করে ইহুদিদের শুনিয়ে দিলেন- ‘তারা আপনাকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে; বলে দিন রুহ আমার রবের নির্দেশ মাত্র। তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই প্রদান করা হয়েছে।’
এবার আমরা রুহ নিয়ে আলোচনা করব। একই সঙ্গে এ কথাও আলোচনা করব যে, মহান রব কেন রুহ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আমাদের হুঁশিয়ার করে দিলেন, আমাদের জ্ঞানের দৈন্য সম্পর্কে। আধুনিক বিজ্ঞানকে যদি বলা হয়, রুহ, আত্মা, মন, নফস, ইচ্ছাশক্তি সম্পর্কে কিছু বলার জন্য তবে বিজ্ঞান মাহরুম হয়ে পড়বে। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন একজন মানুষ ইচ্ছে করার সঙ্গে সঙ্গে তার পায়খানা এবং প্রস্রাবের দরজা খুলে যায় এবং ইচ্ছে না করলে কেনইবা তা বন্ধ হয়ে যায়। মানব শরীরের এই প্রক্রিয়াটি কীভাবে হয় এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিজ্ঞান ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কথা বলবে কিন্তু প্রকৃত ঘটনার ধারেকাছেও যেতে পারবে না। অন্যদিক মানুষের মনটি আসলে কোথায়! এটা দেখতে কেমন, ওজনইবা কতটুকু? বড় মনের আকার কেমন আর কিপটে মনের আকৃতিবা কতটুকু- এসব কথা বললে বিজ্ঞান প্রশ্নকারীকে এড়িয়ে যাবে নয়তো বলবে লোকটি পাগল হয়ে গেছে। অন্যদিকে রুহ, আত্মা ও নফস নিয়ে লোকজন হাজার হাজার বছর ধরে কেবল গবেষণাই করে যাচ্ছে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। আর এ কারণেই আল্লাহ বললেন, ওয়ামা উতিতুম মিনাল ইলাম ইল্লা কলিলা। অর্থাৎ তোমাদের খুব সামান্যই জ্ঞানদান করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো- মানুষের সহজাত জ্ঞান বুদ্ধিতে যদি রুহ সম্পর্কে বিস্তারিত না জানা যায় তবে করণীয়টা কী? এক্ষেত্রে জবাব হলো- প্রথমত, নিজেদের চিন্তাচেতনাকে সীমিত করা এবং দ্বিতীয়ত, ঐশী জ্ঞান বা এলমে মারেফতের সন্ধান করা। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে রুহ সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তাতে মনে হয়েছে এটি একটি বায়বীয় বস্তু যা কিনা আল্লাহর হুকুমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর হুকুমে মানুষের শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এটি যতক্ষণ শরীরে থাকে তখন শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং ইন্দ্রিয়সমূহ একে অপরের সঙ্গে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। বিজ্ঞান একে মানব কোষের প্লোটোপ্লাজম নামক এক ধরনের পদার্থের ক্রিয়া-বিক্রিয়াকে বুঝিয়েছে। এই ক্রিয়া-বিক্রিয়া যতক্ষণ সচল থাকে ততক্ষণ মানব শরীরে এক ধরনের চৌম্বক শক্তি তৈরি হয়, যা কিনা একদিকে শরীরের হাড়সমূহকে একটির সঙ্গে অপরটিকে সংযুক্ত রাখে- অপরদিকে শরীরকে মাটির সঙ্গে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে আটকে রাখে এবং অপরদিকে মহাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রসমূহের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক তৈরি করে দেয়। ফলে মানুষ ভারসাম্য রক্ষা করে জমিনের বুকে চলাফেরা করতে পারে, প্রয়োজন মতো লাফ দেয় কিংবা সাঁতার কাটে এবং বাতাসের মাধ্যমে শব্দ শুনতে পারে। মানুষের দেহ থেকে আল্লাহর নির্দেশে রুহ চলে যাওয়ার পর শরীরের মধ্যকার চৌম্বক শক্তি কাজ করে না- প্লোটোপ্লাজমের ক্রিয়া-কর্ম বা বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেহ মাটি, পানি, আকাশ, বাতাস, গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতির সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলে এবং পচতে পচতে তার আদিরূপ মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
রুহের মতো মন, নফস এবং আত্মাও বায়বীয় আকারে মানব শরীরে থাকে। রুহ হলো মানব শরীরের প্রধান উপকরণ। এটি আল্লাহর হুকুম হওয়ার কারণে এটির মর্যাদা বা কর্তৃত্ব সবার ওপরে। ইংরেজিতে রুহকে বলা হয় ঝঢ়ৎরঃ. অন্যদিকে মনের প্রতিশব্দ হলো গরহফ আর আত্মাকে বলা হয় ঝড়ঁষ. নফসকে বলা হয় ঝবষভ রুহের কারণে মন, নফস এবং আত্মার সৃষ্টি হয়। রুহের ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু মন নফস এবং আত্মার উন্নতি এবং ধ্বংস সাধন সম্পূর্ণরূপে মানুষের ইচ্ছেশক্তি এবং কর্মকা-ের ওপর নির্ভর করে।
মানুষের মন- মনের গতি-প্রকৃতি ভালো মন, মন্দ মন ইত্যাদি নিয়ে এখানে আলোচনার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ মন সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানে। তার চেয়ে বরং ঝড়ঁষ বা আত্মা নিয়ে দু-চার কথা বলে নফস প্রসঙ্গে চলে যাই। মানুষের ব্যক্তিত্ব, কর্মশক্তি, সফলতা ইত্যাদির ধারককে বলা হয় আত্মা। মানুষের আত্মা অমর। রুহ এমন- কেবল একটি খোদায়ী হুকুম। তেমনি আত্মা খোদায়ী হুকুম না হলে এটি মানুষের কর্মকা- ধারণ করার জন্য একটি অমর বায়বীয় পাত্র। মানুষ জীবিত অবস্থায় এটি জমিনে অবস্থান করে। অন্যদিকে মৃত্যুর পর আত্মার গন্তব্য মানুষের কর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। কোনো কোনো আত্মা বাতাসের সঙ্গে জমিনে ভেসে বেড়ায় আবার প্রশান্ত আত্মা চলে যায় ঊর্ধ্বালোক।
এবার আমরা নফস সম্পর্কে কিছু আলোচনার চেষ্টা করব। মূলত মানুষের অভ্যন্তরীণ সব উন্নয়ন এবং অধঃপতন হয়ে থাকে নফসের কারণে। মানুষ যদি ইচ্ছে করে তবে সে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং এটির উন্নয়ন ও শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে পারে। অন্যদিকে মানুষ যদি বেখেয়াল হয় তবে নফসই মানুষ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষের অধঃপতন এবং ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসে। নফস চার প্রকার- নফসে আমমার, নফসে লাওয়ামা, নফসে মূলহাসাহ এবং নফসে মুতমাইন্না। দুর্বল মানুষ সবসময় নফসে আমমার দ্বারা পরিচালিত হয়ে কুকর্ম, নাফরমানী এবং জুলুমে শয়তানকে ছাড়িয়ে যায়। অন্যদিকে প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে মানুষ এই ধ্বংসাত্মক নফসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে করতে এক সময় নফসে লাওয়ামার অধিকারী হয়ে যায়। বান্দা তখন তার জীবনের সব কুকর্মের জন্য প্রতিনিয়ত অনুশোচনা করতে থাকে এবং আল্লাহর দরবারে তওবা করে অধিক ভালো কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে। এরূপ চেষ্টার ফলে মানুষ একদিন উন্নত নফস বা নফসে মূলহামার অধিকারী হয়ে যায়। বান্দা তখন ইচ্ছে করেও মন্দ কাজ করতে পারে না। আল্লাহর রহমতের চাদরে আবৃত থেকে মানুষ এক সময় সর্বোচ্চ মাকাম অর্থাৎ নফসে মুতমাইন্নার হালতে পৌঁছে যায়। এই অবস্থার মানুষকে বলা হয় প্রশান্ত আত্মার অধিকারী যারা দুনিয়াতে থেকে বেহেশতী সুখ-শান্তি এবং সুগন্ধ লাভ করে।
রুহ যেমন আল্লার একটি নির্দেশ তেমনি মানুষের পদমর্যাদা মানসম্মান এবং সম্ভ্রমও কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ। মহান আল্লাহর হুকুমে মানুষ এগুলো লাভ করে। আবার আল্লাহ তার হুকুম উঠিয়ে নিয়ে গেলে মানুষ সব কিছু হারায়। মানুষ যখন ওগুলো লাভ করে তখন কৃতজ্ঞচিত্তে তা সংরক্ষণ, পরিচর্যা করতে হয়। আমরা আজকের প্রসঙ্গের একদম শেষ পর্যায় চলে আসছি। এখন বলব কেন আল্লাহ রুহ প্রসঙ্গে খুব সংক্ষেপে বললেন এটি আল্লাহর একটি নির্দেশ মাত্র এবং পরবর্তী বাক্যে বললেন তোমাদেরকে খুব সামান্যই জ্ঞানদান করা হয়েছে!
মানুষকে চিন্তার জগতে একচ্ছত্র স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। দুনিয়াতে কোনো কাজ করতে গেলে মানুষকে হাজারো বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু চিন্তার জগতে সে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে এবং এই কাজ করতে গিয়ে সে প্রায়ই সীমা অতিক্রম করে। চিন্তার জগতে সীমা অতিক্রমের ফলে মানুষ ব্যক্তিগত ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। প্রথমে সে নিজেকে ধ্বংস করে এবং পরে তার ধ্বংসলীলা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের মাঝে ছড়িয়ে দেয় মহামারী রূপে। কাজেই মানুষের উচিত নয় সেই সব বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ঘাঁটাঘাঁটি করা, যা কিনা তার মন-মস্তিষ্ক এবং চিন্তাচেতনা জিন্দেগীভর চেষ্টা করেও জয় করতে পারবে না। রুহ তেমনি একটি বিষয় যা মানুষের চিন্তা দিয়ে পরিপূর্ণরূপে আবিষ্কার করা অসম্ভব। আর তাই ওটা যে মানব শরীরে আল্লাহর একটি নির্দেশ হিসেবে কাজ করে সে ব্যাপারে চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যেই সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল।
আল্লাহ মানুষকে অতি অল্প জ্ঞানদান করেছেন। এই অল্প জ্ঞানের একটি মারেফতি এবং একটি শরিয়তী উদাহরণ দিয়ে আজকের লেখা শেষ করব। প্রথম ঘটনাটি বহু হাজার বছরের পূর্বেকার ঘটনা, যখন জমিনের একটি এলাকার লোকজন জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় খুবই পারদর্শী হয়ে উঠল। তারা তাদের বিদ্যাবুদ্ধির জন্য বড়াই করত এবং কথায় কথায় দাম্ভিকতা করে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করত, আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিলেন এই জনপদ ধ্বংস করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য। এই সময়ের কিছুদিন আগে হজরত জিবরাইল (আ.) ওই জনপদ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন ৮-১০ বছরের একটি বালক পথের ধারে বসে ধুলোবালি নিয়ে খেলছে। জিবরাইল (আ.) কৌতূহলবশত বালকটির কাছে গেলেন এবং বললেন- আচ্ছা বলত জিবরাইল কোথায় আছে। বালক উত্তর করল- দাঁড়ান বলছি। এই কথা বলে সে সামান্য সময়ের জন্য চোখ বুঝল এবং একটু পর চোখ খুলে বলল- আমি আসমান-জমিনের সর্বত্র তন্নতন্ন করে জিবরাইলকে খুঁজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। আমার মনে হচ্ছে, আমাদের দুজনের মধ্যে কেউ একজন জিবরাইল হবেন- হয়তো আপনি, নয়তো আমি!
দ্বিতীয় ঘটনাটি হাল আমলের একটি বৈজ্ঞানিক উদাহরণ। পৃথিবীর মানুষ মঙ্গলগ্রহে পাথফাইন্ডার নামের একটি নভোযান পাঠালো ১৯৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর। পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব প্রায় ৫০ লাখ মাইল। নভোযানটি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬০০ মাইল গতিতে ছুটতে ছুটতে মঙ্গলে পৌঁছল ১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই বিকাল ৪টা ৫৬ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড সময়ে। ৫০ লাখ মাইল দূরে বসে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা পাথফাইন্ডার নামক নভোযানটি নিয়ন্ত্রণ করতে থাকলেন। নভোযানের মধ্য থেকে সোজারনার নামক ছয় চাকার একটি রোবট গাড়ি মঙ্গলের মাটিতে লাফিয়ে পড়ল। রোবটটি মঙ্গলের মাটিতে ঘোরাফেরা শুরু করল এবং একটির পর একটি ছবি তুলে মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীতে পাঠাতে থাকল। এ কাজ করতে গিয়ে রোবটটি হঠাৎ একটি পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গেলে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা ৫০ লাখ মাইল দূরে বসে কম্পিউটারের সাহায্যে সোজারনারকে উল্টানো অবস্থা থেকে সোজা করল এবং নতুন করে ছবি তোলার পর্যায়ে নিয়ে এলো।
এই যদি হয় মানুষের অতি সামান্য জ্ঞানের বহর এবং ক্ষমতা তাহলে মহাবিশ্বের মালিক এবং সব জ্ঞানের জন্মদাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জ্ঞানের বিশালত্ব কিরূপ হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে আমরা কেবল বলতে পারি- সুবহানাল্লাহে বিহামদিহি! সুবহানাল্লাহিল আজিম! রব্বানা লাকাল হামদ! হামদান কাসিরান! তৈয়্যেবান! মুবারাকান ফিহে! বাংলাদেশ প্রতিদিন
লেখক : কলামিস্ট


শেয়ার করুন