চৌফলদন্ডীতে চরম অর্থনৈতিক সংকটে রাখাইন সম্প্রদায়

49f3f0dd-51aa-4108-bff3-2538fefef3f4বিশেষ প্রতিবেদক

চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পতিত হতে চলেছে সদর উপজেলা চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের রাখাইন সম্প্রদায়। প্রভাবশালীদের দখলে পড়ে বিলীন হওয়ার পথে এখন তাদের দীর্ঘদিনের আয়-রোজগারের পথ। ধর্ম এবং সংস্কৃতি ও এর থেকে বাদ যায়নি। এভাবে চলতে থাকলে একদিন চৌফলদন্ডী রাখাইন শূন্য হয়ে পড়বে। এই আশংকার কথা জানিয়েছেন, খোদ ইউনিয়নটির রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের রাখাইন সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকা যাতে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে না যায় সেজন্য সরকারি খরচে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বাঁধ। প্রায় ৩ কিলোমিটারের এই বাঁধেই ঙাপ্পি নামক এক ধরণের মাছ শুকায় রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন। এছাড়া বঁাঁধ সংলগ্ন এলাকা ব্যবহার করে শ্মশানে মরদেহ নিয়ে যাওয়া, বাঁধের উপর প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উড়ানো উৎসব আয়োজনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় আচারাদি পালন করে আসছেন তাঁরা। ফলে সাগর সংলগ্ন এই বাঁধ তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। সেই বাঁধই দিন দিন চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের দখলে। বাঁধ সংলগ্ন জায়গা দখল করে তাঁরা নির্মাণ করছেন দালান। প্রতিষ্ঠা করছেন দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে নোটিশ দেয়া হলেও কোন কাজ হয়নি। স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের বাধা ও কোন কাজে আসেনি। উল্টো বাধা উপেক্ষা করে নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। সাম্প্রতিক সময়ে সে ধরণের একটি স্থাপনা নির্মাণ করেছেন সৌদি প্রবাসী জনৈক ফখর উদ্দিন কাজল। দক্ষিণ রাখাইন পাড়ার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকাতেই দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নির্মিত ভবনটির নির্মাণকালীন সময়েই প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নোটিশ দেয়া হয়েছিল তাঁকে। নির্দেশ দেয়া হয়েছিল নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। প্রশাসনের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। সর্বশেষ গত ৬ মার্চ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি নোটিশ প্রদান করা হয়। পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী সাক্ষরিত ওই নোটিশ আগামী এক সপ্তাহের ১২ মার্চ মধ্যে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও ফখর উদ্দিনের লোকজন বলছেন তাঁরা কোন নোটিশ পাননি। গতকাল ৮ মার্চ স্থাপনা সংলগ্ন এলাকায় যেতেই একজন লোক ছুটে আসেন এই প্রতিবেদকের কাছে। নিজেকে ফখর উদ্দিন কাজলের লোক পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, যে জায়গায় তাঁরা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। যেটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তার কাছে আছে। এ সময় স্থাপনাটির ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন তিনি। এদিকে যতোই অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে বাঁধ সংলগ্ন জায়গা, ততোই সংকুচিত হয়ে পড়ছে রাখাইন সম্প্রদায়ের আয়ের উৎস। দখলবাজদের কারণে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে ঙাপ্পি শুকানোর কাজ। একমাত্র আয়ের এই উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকায় তাঁদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বিগ্নতা। বিষয়টি স্বচক্ষে দেখে সাংবাদিক সুনীল বড়–য়া ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এভাবে বাঁধ দখল করে রাখাইন সম্প্রদায়ের জীবিকা হুমকির মুখে ফেলানোর চেষ্টার দৃশ্য দেখে আমি অবাক হয়েছি। প্রশাসন অবৈধ দখলবাজদের উচ্ছেদ করে এই সম্প্রদায়ের পাশে এসে দাঁড়াবে। সেটাই আমার প্রত্যাশা। চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মংওয়েন এবং সাবেক মেম্বার থোইনক্য রাখাইন অস্পষ্ট বাংলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যেতে থাকলে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না। জানা গেছে, বর্তমানে চৌফলদন্ডী ইউনিয়নে চার থেকে সাড়ে চারশ রাখাইন পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যার হিসেবে যা প্রায় চার হাজার। ইউনিয়নের উত্তর, মধ্যম ও দক্ষিণ। রাখাইন পাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন তাঁরা। যাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস ঙাপ্পি। স্থানীয় ভাষায় যা নাপ্পি নামে পরিচিত। সাগর থেকে ছোট ছোট চিংড়ি মাছ এনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয় নাপ্পি । পরবর্তীতে যা পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঙাপ্পি বা নাপ্পি উপরই নির্ভর করে চলে তাদের অর্থনীতির চাপ।


শেয়ার করুন