চোরাই কাঠভর্তি গাড়ী আটক

“৪০টি অবৈধ করাতকলে দৈনিক ৫ হাজার ঘুনফুট কাঠ চিরাই”

আটকশফিক আজাদ, উখিয়া প্রতিনিধি ॥   

অভিনব কায়দায় স্থাপন করা অবৈধ স’মিল মুহুর্তেই সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা থাকায় প্রশাসনের অভিযান বিফল হচ্ছে। যে কারণে উদ্ধার হচ্ছে না অবৈধ করাতকল, ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে স’মিল বাণিজ্যের সাথে জড়িত সিন্ডিকেট। পরিবেশবাদী সচেতন মহলের দাবী অবৈধ স’মিল স্থাপনের দায়ে জায়গা মালিকদের ভ্রাম্যমান আদালতের আওতায় জেল জরিমানার মতো শাস্তির বিধান রাখা হলে অবৈধ স’মিল বাণিজ্য প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। তা না হলে উখিয়ার বন সম্পদ রক্ষা করা দুস্কর হয়ে পড়বে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে প্রতিষ্ঠিত ৪০টি করাত কলে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ঘনফুট চোরাই কাঠ সাইজ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। গত সোমবার স’মিলে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় শতাধিক ঘনফুট চোরাই কাঠভর্তি একটি চাঁদের গাড়ী ফাত্রাঝিরি বিজিবি সদস্যরা আটক করেছে।
জানা গেছে, পালংখালী, কুতুপালং কচুবনিয়া, রাজাপালং, রত্মাপালং, মরিচ্যা পালং, হলদিয়া ও জালিয়া পালং ইউনিয়নের অজপাড়া গাঁয়ে বনসমৃদ্ধ এলাকায় প্রায় ৪০টিরও অধিক অবৈধ করাতকলে প্রতিদিন ৫ হাজার ঘনফুট চোরাই কাঠ চিরাই করে বাজারজাত করা হচ্ছে। এসব স’মিল উদ্ধার করে বন সম্পদ রক্ষার জন্য বনকর্মীরা বার বার অভিযান চালিয়েও স’মিল উদ্ধারতো সম্ভব হচ্ছে না, উপরোন্তু স’মিল সিন্ডিকেট ও কাঠচোরদের হাতে নাজেহাল হচ্ছে। উপায়ন্তর না দেখে রেঞ্জ কর্মকর্তা উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে ২০টিরও অধিক অবৈধ স’মিলের তালিকা হস্তান্তর করেছে বলে জানা গেছে। রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম মিয়া জানান, অভিনব কায়দায় স্থাপন করা এসব অবৈধ করাতকল ৫ মিনিটের মধ্যে অপসারণ পূর্বক সরিয়ে ফেলার কারণে স’মিলের যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো জানান, এসব করাতকল উদ্ধার করতে গেলে কাঠচোর ও স’মিল সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত দুর্বৃত্তরা বনকর্মীদের উপর হামলা চালায়। তাই পুলিশ-বিজিবি ছাড়া উদ্ধার অভিযান এ মুহুর্তে চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে প্রশাসনের কোন প্রকার ধরপাকড় ও উদ্ধার অভিযান দীর্ঘদিন থেকে জিমিয়ে পড়ার কারণে কাঠচোর ও অবৈধ করাতকল সিন্ডিকেট আরো সক্রিয় হয়ে উঠে সরকারি বন সম্পদের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন গড়ে তোলা সামাজিক বনায়নে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গাছ লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। রাজাপালং ইউনিয়নের দরগাহবিল গ্রামের সাবেক ইউ,পি, সদস্য আলী চাঁন মেম্বার অভিযোগ করে জানান, টিএন্ডটি এলাকায় ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক বনায়নে দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে লুটপাট চালিয়ে প্রায় ১৫টি গামারি ও গর্জন গাছ নিয়ে গেছে। স্থানীয় সমিলে এসব চোরাই কাঠ সনাক্ত করা গেলেও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বনবিভাগ। ফাত্রাঝিরি বিজিবি’র সুবেদার সাদেক জানান, সোমবার বিকেলে স’মিলে চিরাই করার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় শতাধিক ঘনফুট চোরাইকাঠ সহ একটি চাঁদের গাড়ী আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, অবৈধ ভাবে প্রতিষ্ঠিত স’মিল থাকার কারণে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন গাছ-গাছালি লুটপাটের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন স’মিল মালিকের সাথে কথা বলে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, এলাকা ভিত্তিক বনবিট কর্মকর্তাদের সাথে তাদের মাসিক চুক্তিভিত্তিক লেনদেন পরিশোধের ভিত্তিতে স’মিল চালানো হচ্ছে। বড়ধরনের অভিযান চালানোর আগেই তারা খবর পেয়ে যায়। যে কারণে তাদের স’মিল গুলো নিরাপদে রয়েছে।
উখিয়া বনরক্ষা সহায়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, যেসমস্ত জায়গায় অবৈধ ভাবে স’মিল বসানো হয়েছে সে সব জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট জায়গা মালিকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া গেলে অবৈধ করাতকল বাণিজ্য বন্ধ করা সম্ভব ছিল। নতুবা যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব করাতকল উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি বন সম্পদ রক্ষা করা বন বিভাগের পক্ষে সম্ভব নয়। কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল সরকার জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি পুলিশের সহযোগীতায় একটি বৃহৎ আকারের অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে অকারণে কালক্ষেপন হলেও যেকোন মুহুর্তে উদ্ধার অভিযান চলতে পারে।


শেয়ার করুন