চীনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। দুই দিনের সফরে আজ ঢাকা আসছেন তিনি।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অভ্যর্থনা জানাবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের দুটি জেট চীনের প্রেসিডেন্টের বিমানকে স্কট করে নিয়ে আসবে।

বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ তার এই সফরে সইয়ের জন্য সাতটি চুক্তিপত্র ও তিনটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

তিন দশক পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সফরে অর্থায়নের জন্য উপস্থাপন করতে আরো ২৮টি প্রকল্পের তালিকাও তৈরি করেছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা।

ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, এসব প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের জন্য শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। ক্রমান্বয়ে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে এসব প্রকল্পের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি হবে।

সারসংক্ষেপে দেখা যায়, একটি অনুদান, দুটি কাঠামোগত এবং তিনটি ঋণচুক্তি প্রস্তুত রয়েছে।

সমঝোতা স্মারকগুলোর একটি চীনের আর্থিক সহায়তায় নবম, দশম ও একাদশ মৈত্রী সেতু নির্মাণের বিষয়ে।

আরেকটি হবে দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে। এর আওতায় জরুরি অপারেশন কেন্দ্র নির্মাণ, সরকারি কর্মকর্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকর্মীদের প্রশিক্ষণ, আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হবে।

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি সই হবে। এর বাইরে বিনিয়োগ ও উৎপাদন শক্তিশালীকরণ, সেতু নির্মাণে বিশেষ সহায়তাসহ ২৮টি প্রকল্পের জন্য সমঝোতা স্মারক সই হবে।

এর বাইরেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অন্য কোনো এজেন্ডা থাকতেও পারে। দুই দেশের চূড়ান্ত সমঝোতার মধ্যে এ অর্থের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী চীনের সঙ্গে চুক্তির জন্য বাচাই করা ২৮ প্রকল্পের মধ্যে দুটি রয়েছে শিল্পোন্নয়ন প্রকল্প, রেলের উন্নয়নে পাঁচটি, সড়ক পরিবহনে চারটি, বিদ্যুতের সাতটি, জ্বালানির একটি, জীবনমান উন্নয়নে পাঁচটি এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে চারটি।

সফরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকবেন দেশটির তিনজন স্টেট কাউন্সিলর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ ২৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

উল্লেখ্য, গত ৩০ বছরের মধ্যে চীনের কোনো প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। চীন এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সাতটি সেতু ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা দিয়েছে।

চীনের একটি অগ্রবর্তী প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করেছে। যা শুক্রবার দুপুরে দুই দেশের স্বাক্ষর শেষে ঋণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে।

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিম এ বিষয়ে ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের স্মারক ও দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথে এক ঐতিহাসিক নবযাত্রার সূচনা করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।

বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্টের সফর উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার অংশ হিসেবে ৩০ বছর পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সফরে ২৫টির বেশি চুক্তি ও সমঝোত স্মারক সই হবে। এ চুক্তি সইয়ের ফলে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, ভৌত অবকাঠামো, সড়ক সেতু, রেল ও জলপথে যোগাযোগ, কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও সহজ হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এসব চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্র সম্পদসহ দুর্যোগ মোকাবেলা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সংযোজিত হবে।’

মাহমুদ আলী বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অভ্যর্থনা জানাবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের দুটি জেট চীনের প্রেসিডেন্টের বিমানকে স্কট করে নিয়ে আসবে।’


শেয়ার করুন