চা-দোকানি বাবুল ইস্যু : গরম কথায় রাজনীতিকরা

02সিটিএন ডেস্ক:

চা-বিক্রেতা বাবুলের মৃত্যু ঘিরে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সরগরম কথাবার্তা ঝরছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মুখ থেকে। মানবাধিকার কমিশনও এ বিষয়ে কড়া কথা বলে দিয়েছে। সবারই ভাষ্যÑ দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচার নিশ্চিত করা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত চা-দোকানির মৃত্যুর ঘটনা দ্রুত বিচার আইনের আওতায় নিয়ে ১ মাসের মধ্যে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চলমান রাজনীতিবিষয়ক বঙ্গবন্ধু একাডেমির আয়োজনে আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি জানান।

সুরঞ্জিত বলেন, এ মৃত্যু চাঞ্চল্যকর ঘটনা। মানুষ যার ওপর সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে সেই পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সেখানে তদন্তের কী আছে?

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিবেকহীন ও অবিশ্বাস্যরকম বেপরোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকার বিগত কয়েক বছর বিচারবহির্ভূত হত্যা, বে-আইনি গুম ও গুপ্তহত্যা সংঘটিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যে ছাড়পত্র দিয়েছিল তাতে তারা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

চা-দোকানি বাবুল মাতব্বরের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

বাবুলের মৃত্যু হত্যাকাণ্ডÑ অভিযোগ করে রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে দলের পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, পুলিশ এখন কর্তৃত্ববাদীর ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে। কিন্তু তাদের কর্তৃত্ববাদী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ মানুষের সেবক এবং এটা তার একমাত্র ধর্ম। আমরা চাই পুলিশ আমাদেরকে রক্ষা করবে।

পুলিশের কারণে গরিব চা বিক্রেতার অকাল মৃত্যু এবং তাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হলোÑ এর জবাব কে দেবে প্রশ্ন রেখে প্রয়াত ড. আরএ গণির স্মরণ সভায় মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, পুলিশের মধ্যে বড় ধরণের বৈপ্লবিক সংস্কার দরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে পুলিশ, সেই পুলিশ এখন সংকটের কারণ। পুলিশ এখন বন্ধু বেশে শত্র“। রক্ষাকারী থেকে হত্যাকারী।

গত বৃহস্পতিবার বাবুলের মৃত্যুর পরই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতির মাধ্যমে বলেছেন, পুলিশ এখন নিজেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। তা আরেকবার প্রমাণিত হলোÑ চা-বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরের কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে নির্দয়ভাবে কেরোসিনের চুলার আগুন দিয়ে তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে।

ফখরুল বলেন, ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ পুলিশের কর্তব্য হলেও তা অনুসরণ করাকে তারা ঘৃণা করছে। দুষ্টকে দমন না করে, বরং পুলিশই এখন চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে দুষ্টদের উৎসাহিত করছে। গরিব মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের মতো অমানবিক ও নির্দয় কর্মকাণ্ড দেখে দেশবাসী এখন হতবাক ও বিস্মিত। গরিব মানুষদের কাছ থেকে পুলিশের চাঁদা আদায়ে জুলুমবাজি ও পৈশাচিক কর্মকাণ্ড দেশকে চরম নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাবুল হত্যাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এদের চিহ্নিত করে রুখে দেওয়া দরকার।

গত বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ-ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। ‘রক্ষক এখন ভক্ষকের ভূমিকায়’ উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে পুলিশ অবহেলা করছে।

তিনি বলেন, পুলিশের এসব কর্মকাণ্ড আগের মতো এবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। তারা যদি ব্যবস্থা না নেন, তবে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে।

বাবুল মাতব্বরের কাছে কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসী চাঁদা চাইতে যায়নি। পুলিশ ও পুলিশের সাথে সংশ্লিষ্টরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ব্লগার আরিফ জেবতিক লিখেছেন, ন্যায়বিচার না পাওয়ার ক্ষোভ যদি একের পর এক জমতে থাকে, তাহলে এক স্ফুলিঙ্গই সেই বারুদের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তাই পুলিশকে এখনই সামলানোর পরামর্শ তার। বাবুল মাতুব্বরের পোড়া লাশের গন্ধে আমাদের কিন্তু ঘুম আসে না।

গত বুধবার মিরপুর ১ নম্বর গুদারাঘাটে চাঁদা না পেয়ে পুলিশ চা-বিক্রেতা বাবুলের চায়ের দোকানের কেরোসিনের চুলায় বাড়ি মারলে কেরোসিন ছিটকে তার গায়ে আগুন ধরে যায় বলে অভিযোগ উঠে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবুল মাতব্বর মৃত্যুবরণ করেন। সম্পাদনা : দীপক চৌধুরী


শেয়ার করুন