চার দিন ধরে নো-ম্যানস ল্যান্ডে হাজারো রোহিঙ্গা

সিটিএন ডেস্ক :

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালি আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে গত চার দিন ধরে হাজারো রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। সীমান্ত রক্ষী বিজিবির কড়া পাহারায় রোহিঙ্গারা নো ম্যানস ল্যান্ডের ধান খেত ও বেঁড়ি বাধের উপর রাত-দিন কাটাচ্ছে। বুধবার সরেজমিন গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। তবে বিজিবি, আইএনজিও এবং বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা আত্নীয় স্বজনরা খাদ্য সরবরাহ করে আসছে। অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছে রোহিঙ্গারা।
গত রোববার থেকে নতুন করে উখিয়ার পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে আবারো বানের স্রোতের রোহিঙ্গা আসা শুরু হয়। এবার বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গাদের বিজিবি কোন স্থানে যেতে দেয়নি। তবে অনেকেই রাতের আধারে কুতুপালং, বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার ও মঙ্গলবার দুই দিন ধওে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করা এসব রোহিঙ্গারা চরম বিপর্যয়ে পড়ে। শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে অনেক পরিবার খুব বেকায়দায় পড়ে ভেজা ছাড়া কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।

বরাবরের মতো সীমান্তে দায়িত্বপালনকারি বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন রুবেল জানিয়েছেন, উপরের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকবে।
তিনি বলেন, নতুন করে সীমান্ত পার হতে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে কমকরে হলেও ১৫-২০ হাজার রোহিঙ্গা। এদের থাকার সংস্থান করতে বেগ পেতে হবে। তাই তাদের আটকে রেখে জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এসব প্রশ্ন জানতে পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলা হয়। তারা পুরোনোদের মতোই মার-কাট ও নির্যাতনের কাহিনীই শুনিয়েছেন।

বুচিডং মান্নানপাড়ার মোহাম্মদ রফিক (৪০) সহ অসংখ্য রোহিঙ্গা জানান, সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীদের হাতে একপ্রকার জিম্মি অবস্থায়ও নিজ ঘরে থাকার চেষ্টা করেছি। কোথাও যেতে না পেরে জমানো খাবারসহ প্রয়োজনীয় পণ্যে টান পড়ে। হাট-বাজারে যাওয়া নিষেধ, কাজকর্ম বা ব্যবসা বাণিজ্য নেই। ফলে চরম খাদ্য সংকটে গত ৯ অক্টোবর বুচিডং এর সাংগ্রীবিল, মগনামা, কুয়াংডং, ডাব্রং মং, আলী সংসহ অর্ধ ডজনাধিক গ্রাম থেকে প্রায় ২৫-৩০ হাজারের মত রোহিঙ্গা বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে অং ঝাই পাহাড়ে সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে টাকা পয়সা, স্বর্ণাংকার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে ফেলেছে।

রোহিঙ্গাদের সেবারত আইএনজিও এসিএফের ডিপিএম ইসমাইল ফারুক মানিক জানিয়েছেন, প্রায় ২০ হাজারের মত খিচুড়ির প্যাকেট তারা এখানে বিতরণ করেছে। খিচুড়ি শেষ হওয়ায় পুষ্টি সমৃদ্ব বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছে। আর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বিশুদ্ধ পানি, ইউএনএইচসিআরসহ বেশ কিছু সাহায্য সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের মাঝে জরুরী ত্রান সামগ্রী বিতরন করছে।
এদিকে শূন্য রেখায় আটকে পড়ার খবর পেয়ে ক্যাম্পে অবস্থান নেয়া অনেক স্বজন নতুন আসাদের দেখতে বা খাবার দিতে এসে আটকে পড়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। মতলব (৫৮) এদের একজন। বুচিদং থেকে তার মেয়ে ও জামাই আসার খবর পেয়ে বালুখালী ক্যাম্প থেকে ভাত নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তুৃ তার কাছে নিবন্ধনের কোন কার্ড না থাকায় নতুনদের দলের হিসাব করে তাকেও আর ক্যাম্পে যেতে দেয়নি বিজিবি। একই দশায় পড়েছেন কুতুপালং ক্যাম্প থেকে স্বজনদের জন্য খাবার নিয়ে আসা সিরাজ খাতুন (৪০)। তাকেও নতুনদের সাথে সময় কাটাতে হচ্ছে।

পালংখালী এলাকার বাসিন্দা শাহাদত হোসেন জুয়েল বলেন, সরকার জেলা প্রশাসন ও সেনা সদস্যদের দিয়ে সুশৃংখলভাবে ত্রাণ বিতরণ করার পর থেকে আশ্রয়ে আসা রোহিঙ্গারা নিয়মমাপিক ত্রাণ পাচ্ছেন। এসব রোহিঙ্গারা ওপারে থেকে যাওয়া স্বজনদের ফোন করে এখানে পাওয়া সুযোগ সুবিধার কথা জানিয়ে চলে আসতে উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে গত একসপ্তাহ ধরে আবারো রোহিঙ্গা আসা বেড়েছে। এছাড়াও সীমান্তের কিছু লোকজন রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাণিজ্য করায় অনুপ্রবেশে সহযোগিতা দেয়। একারণে অনুপ্রবেশ বাধাগ্রস্ত না হয়ে আরো উস্কেযায়।


শেয়ার করুন