চামড়া কিনে ধরা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

leatherসিটিএন ডেস্ক :

বেশি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রামের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। চামড়ার ব্যবসায় অনভিজ্ঞতা আর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার জেরে সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে প্রতি বর্গফুটে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দামে চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা। এখন সংগৃহীত চামড়া নিয়ে ঘুরছেন ট্যানারি এজেন্টদের দ্বারে দ্বারে।

কয়েকজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের কোনো ট্যানারি এবার চামড়া কিনছে না। ঢাকার ট্যানারি এজেন্ট আর স্থানীয় আরতদাররা চামড়া কিনে নিচ্ছে। তবে তারা যে দাম দিতে চাইছে, তাতে লাভতো দুরে থাক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা চামড়াপ্রতি লোকসান দিতে হচ্ছে। তারপরও চামড়া বিক্রি করা যাচ্ছেনা।

কোরবানির পশুর চামড়া কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে আড়তদারদের সংগ্রহ করার নির্ধারিত দাম ঠিক করে দিয়েছে ট্যানারি এসোসিয়েশন। রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মও। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে বন্দর নগরীতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের লোকজন ও স্থানীয় মাস্তানরা এবারও চামড়ার ব্যবসায় ভাগ বসিয়েছেন। এধরনের মৌসুমি ব্যবসায়দের হাত ঘুরে চামড়া পৌঁছেছে আড়তদারদের কাছে।

এ ধরনের ব্যবসায়ীদের যাদের নেই চামড়ার বাজার সম্পর্কে নেই সামান্যতম জ্ঞান। সারা বছর চামড়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত না থাকা এবং অনভিজ্ঞতার কারণে চড়া দাম দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করে এখন নিজেরাতো পথে বসেছেনই একইসঙ্গে বিপাকে ফেলে দিয়েছে আড়তদারদেরও।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা প্রতিটি বড় গরুর চামড়া ২২০০ টাকায়, মাঝারি গরুর চামড়া ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় কিনেছেন। এক হিসেবে দেখা গেছে মওসুমি ব্যবসায়ীদের কেনা বড় গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম পড়েছে ৭০ টাকারও বেশি আর মাঝারি গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম পড়েছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা। অথচ সরকার ঢাকার বাইরে গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

বোয়ালখালী উপজেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ইদ্রিস মিঞা বাংলামেইলকে জানান, প্রতিবছরের মত এবারও তারা তিন বন্ধু মিলে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে চামড়া ব্যাবসায় নেমেছিলেন। ঈদের দিনে সবাই যখন কোরবানি দিয়ে আনন্দ করছিলো, তখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা। সারাদিনে সংগ্রহ করেছেন ৬টি বড় এবং ৮ টি মাঝাড়ি গরুর চামড়া। প্রতিটি বড় চামড়া কিনেছেন ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায়, মাঝারি গরুর প্রতিটি চামড়া কিনেছেন ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়।

তিনি আরো জানান, বিকেলে সেই চামড়া সিএনজি ভাড়া দিয়ে আগ্রাবাদের পাইকারি চামড়ার আড়তে নিয়ে দেখেন, আরতদাররা যে দাম দিতে চাইছে তা তাদের কেনা দামেও নেই। কেনা দামের চাইতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কমে চাইছে প্রতিটি চামড়ার দাম। অনেকে আবার দাম না পেয়ে চামড়ায় লবন দিয়ে রেখে দিয়েছেন পরে বিক্রির আশায়।

সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দামে চামড়া কেন কিনলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলামেইলকে তিনি বলেন, ‘সরকারের দাম ধরে বসে থাকলে আমি তো একটি চামড়াও কিনতে পারবনা। আমি না কিনলে তো আরেকজন আরও বেশি দামে কিনে নিচ্ছেন। শুরু থেকে সবাই বলছিলো, গরুর দাম বেশি তাই চামড়ার দামও বেশি হবে। অথচ আড়তে গিয়ে দেখি সম্পুর্ণ বিপরীত অবস্থা।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সদস্য ও সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় তিন লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। কিছু চামড়া ব্যাবসায়ীরা চামড়ায় লবন দিয়ে রেখে দিয়েছে। তবে বিপত্তি সৃষ্টি করেছেন মৌসুমি ব্যাবসায়ীরা। তারা নিজেরা চামড়ার দাম না জেনে বেশি দামে চামড়া কিনে বিপদে পড়েছেন আর আমাদেরকেও বিপদে ফেলে দিয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘তারপরও সমঝোতা করে একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও চামড়া কিনে নিচ্ছি। কিন্তু এবার চট্টগ্রামের কোন ট্যানারি চামড়া কিনছে না, ঢাকার ট্যানারি এজেন্টরা যে দাম দিতে চাইছে তাতে আমাদের অনেক টাকা লোকসান গুনতে হতে পারে।’

চট্টগ্রাম চামড়া আড়তদার সমিতির সহ-সভাপতি মো. আবদুল কাদের বাংলামেইলকে বলেন, ‘এমনিতেই বিশ্ব বাজারে চামড়ার দাম কম এই অযুহাতে ট্যানারি মালিকরা দাম কম দিচ্ছে। তারমধ্যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো এবার চট্টগ্রামের কোনো ট্যানারি চামড়া কিনছেনা। তাই ঢাকার ট্যানারি মালিকরা যে দামে চাইবেন সে দামে চামড়া বিক্রি করতে আমরা এক প্রকার বাধ্য। ফলে মৌসুমি চামড়া ব্যাবসায়ীরা এবার বেশ লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।’

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলামেইল-এ চট্টগ্রামের চামড়া সংকট নিয়ে ‘চট্টগ্রামে চামড়া কিনবে না কোনো ট্যানারি, ঢাকাই শেষ ভরসা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল- এক সময় চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি থাকলেও তারমধ্যে ২০টিই বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে। শেষ ভরসা অক্সিজেন এলাকার মদিনা ও কালুরঘাটের রিফ লেদার নামের দুটি ট্যানারি। কিন্তু গত মে মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক চিঠিতে কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে সে দুটিও। তাই এবার কোরবানি পশুর চামড়া নিয়ে নতুন সংকটে পড়তে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা- এমন ইঙ্গিত আগে থেকেই করা হয়েছিল সেই খবরে।


শেয়ার করুন