চাকরির নামে যৌনতার ফাঁদ!

788888সিটিএন ডেস্ক :

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খবরের কাগজে প্রকাশিত আপাত নিরীহ ওই বিজ্ঞাপনের পাতা ফাঁদে পড়ছেন আবার কলকাতা সহ এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু বেকার আর যুবক৷ জীবিকার টানে যেমন ফাঁদে পড়ছেন, তেমনই তাঁরা আবার ফাঁদে পড়ছেন অতিরিক্ত উপার্জনের আশায়ও৷ আর, তাঁদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে ওই যৌনতাকেই৷
তবে, ওই ফাঁদে পড়ে যত না সন্তুষ্টি হচ্ছে যৌনতার, তার থেকে ঢের বেশি খোয়া যাচ্ছে এবং লোপাট হচ্ছে টাকা৷ আসলে, টাকা লোপাটের জন্যই আপাত নিরীহ ওই বিজ্ঞাপনে পাতা হচ্ছে ফাঁদ৷ আর, ওই যৌনতার ফাঁদে পড়েই খোয়া যাচ্ছে এবং লোপাট হচ্ছে টাকা৷ বেকার আর যুবকদের কাছ থেকে টাকা লোপাটের মাধ্যম হিসেবেই, রাজ্যজুড়ে ব্যবহার করা হচ্ছে ওই যৌনতার ফাঁদকেই৷
যদিও, এ ভাবে কোলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু বেকার আর যুবকের টাকা লোপাট হতে থাকলেও, পুলিশের তরফে সেভাবে কোনও ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে না৷ পুলিশের কাছে যে এই ধরনের কারবারের বিষয়ে কোনও খোঁজখবর নেই, তাও কার্যত অসম্ভব৷ তবে, ওই কারবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারার কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, টাকা লোপাটের বিষয়ে পুলিশের কাছে সেভাবে কোনও অভিযোগও দায়ের হচ্ছে না৷
কেন? কারণ, খবরের কাগজের আপাত নিরীহ ওই বিজ্ঞাপন দেখে জীবিকার টানে অথবা অতিরিক্ত উপার্জনের আশায় কোনও বেকার অথবা যুবক ফোন করছেন৷ আর, তখনই তাঁদেরকে ফেলা হচ্ছে যৌনতার ফাঁদে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই ফাঁদেই তাঁরা পড়েও যাচ্ছেন৷ কিন্তু, ওই যৌনতার বিষয়টি যেহেতু গোপন রাখতে চাইছেন তাঁরা, সেই কারণে, প্রতারিত হলেও, তাঁরা আর অভিযোগও দায়ের করতে চাইছেন না৷
এমনিতেই, বিভিন্ন খবরের কাগজে বিভিন্ন ঢং আর রঙের এমন নানা বিজ্ঞাপন থাকে, যে সব আবার নানা কাণ্ডের শরিকও হয়ে ওঠে৷ কী থাকে না ওই সব বিজ্ঞাপনে! অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে শুরু করে কৌতূহলী নানা কাণ্ডেরও সাক্ষী ওই সব বিজ্ঞাপন৷ তবে, ওই সব বিজ্ঞাপনের মধ্যেই আবার এমন কিছুও থাকে, আপাতভাবে তা নিরীহ-ই মনে হয়৷ যেমন, কোনও বিজ্ঞাপনে দেওয়া হয়েছে ফোন নম্বর৷আর, তার সঙ্গে বলা হয়েছে পার্ট টাইম জব৷ সেখানে অবশ্য কোনও একটি জায়গার নামও উল্লেখ রয়েছে৷
তেমনই কোনও বিজ্ঞাপনে আবার দেওয়া হয়েছে, পার্ট টাইমের জবের জন্য ছেলে চাই৷ এ ক্ষেত্রেও ফোন নম্বর আর জায়গার নামও উল্লেখ থাকে৷ এই ধরনেরই আপাত নিরীহ বিজ্ঞাপন আবার প্রকাশিত হচ্ছে খোদ কর্মখালি বিভাগেই৷ স্বাভাবিকভাবেই, ওই সব বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করবেন কোনও বেকার অথবা যুবক৷ কিন্তু, ফোন করলেই ভাঙবে চমক৷ কেন? কারণ, ওই সব বিজ্ঞাপনে প্রকাশিত ফোন নম্বরে কথা বললে, ফোনের ওপার থেকে কোনও রাখঢাক না করেই বলে দেওয়া হবে বিষয়টি৷ কীভাবে এই ধরনের পার্ট টাইমের জবে জয়েন করা যাবে? ফোনের ওপারের ব্যক্তি বললেন, প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে৷ তার জন্য এক হাজার টাকা লাগবে৷ রেজিস্ট্রেশনের পরই আপনাকে সার্ভিস দেওয়া হবে৷ কীভাবে মিলবে সার্ভিস? তিনি বলেন, আপনার প্রোফাইল আমাদের কাছে রাখা হবে৷ আপনার শারীরিক গঠন, আপনাকে কেমন দেখতে এবং আপনার অন্য কোনও যোগ্যতার বিষয়টিও থাকবে ওই প্রোফাইলে৷ আপনি যে এলাকায় সার্ভিস দিতে চান, তাও থাকবে৷ যে ম্যাডাম পছন্দ করবেন ওই প্রোফাইল, সেই ম্যাডামকে সার্ভিস দিতে হবে৷
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ম্যাডাম যেখানে যেতে বলবেন, সেখানে গিয়েই ওই ম্যাডামকে খুশি করতে হবে৷ কত সময় দিতে হবে এই সার্ভিসের জন্য? ফোনের ওপার থেকে ওই ব্যক্তি বললেন, খুব বেশি হলে তিন-চার ঘন্টা৷ কিন্তু, টাকা কীভাবে পাওয়া যাবে? তিনি বলেন, ম্যাডামকে খুশি করার পর, ওই ম্যাডাম-ই আপনাকে টাকা দেবেন৷ তার পর ওই টাকা থেকে কমিশন বাবদ ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে আমাদের৷ একই সঙ্গে তিনি অবশ্য সতর্কও করে দিয়েছেন, কোনও ম্যাডাম সার্ভিস নেওয়ার পর টাকা দিতে না চাইলে, ওই ম্যাডামের সঙ্গে কোনও রকম তর্ক-বিতর্ক করবেন না৷ এই ধরনের ক্ষেত্রে আমরা ওই ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলে নেব৷
সেক্ষেত্রে, সার্ভিস দেওয়ার জন্য টাকা কীভাবে মিলবে? ওই ব্যক্তি বলেন, এরকম ক্ষেত্রে টাকা নাও পাওয়া যেতে পারে৷ কোনও ম্যাডাম খুশি না হলে, তিনি টাকা নাও দিতে পারেন৷ কমিশন আর রেজিস্ট্রেশনের জন্য টাকা কীভাবে দিতে হবে, তার জন্য কি আপনাদের অফিসে যেতে হবে? তিনি বলেন, আমাদের অফিসে আসার প্রয়োজন নেই৷ আমরা একটা অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দেব৷ ওই অ্যাকাউন্টেই রেজিস্ট্রশেন ফি জমা দিন৷ রেজিস্ট্রশেন ফি জমা দিলেই আপনাকে সার্ভিস দেওয়া হবে৷ কমিশনের টাকাও ওই অ্যাকাউন্টে জমা দেবেন৷ প্রতিদিন কি সার্ভিস দেওয়া হবে? তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে চারটি সার্ভিস দেওয়া হবে৷
অন্য একটি বিজ্ঞাপনের নম্বরে যোগাযোগ করলে, সেখান থেকেও একই ধরনের কথা বলা হয়েছে৷ তবে, এখানে রেজিস্ট্রেশন ফি এক হাজারের বদলে পাঁচশো টাকা দিতে হবে৷ আর, কমিশন দিতে হবে ৩০ শতাংশ৷ আর, দু’টি নম্বর থেকেই বলা হয়েছে, পার্ট টাইমের এই জবের বিষয়টি গোপন রাখা হবে৷ দু’টি নম্বরেই জানতে চাওয়া হয়, ম্যাডামদের খুশি করার এই জব কতটা নিরাপদ? দু’টি নম্বর থেকেই বলা হয়েছে, যে ম্যাডাম সার্ভিস নেবেন, তিনিও তো নিরাপদ আর গোপনীয়তার বিষয়টি দেখবেন৷ কাজেই, সেজন্য ভয়ের কোনও কারণ নেই বলেই ওই দু’টি বিজ্ঞাপনের নম্বর থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে৷
একই সঙ্গে ওই দু’টি নম্বর থেকেই বলা হয়েছে, সার্ভিস নেওয়ার জন্য কোনও ম্যাডাম তাঁর নিজের জায়গায় যেতে বলবেন৷ তাও, কোথায়, আর, সেই জায়গা কি নিরাপদ? এই একই বিষয়ে ওই দু’টি নম্বর থেকেই বলা হয়েছে, ম্যাডামের ফ্ল্যাট হতে পারে৷ হোটেল অথবা অন্য কোনও জায়গাও হতে পারে৷’’ কিন্তু, রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিলেই যে সার্ভিস দেবেন, তার কী নিশ্চয়তা আছে? প্রথম নম্বর থেকে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিলেই আপনাকে সার্ভিস দেওয়া হবে৷ আর, ফোনের ওপারে থাকা দ্বিতীয় নম্বরের ব্যক্তি বলেন, এখনও পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করিয়ে কেউ সার্ভিস পাননি, এমন কোনও ঘটনা নেই৷
শুধুমাত্র তাই নয়৷ ওই দ্বিতীয় নম্বর থেকেই বলা হয়, অন্য কোথাও হয়তো রেজিস্ট্রেশন করিয়ে সার্ভিস দেওয়া হয় না৷ ১০ বছর ধরে আমরা সার্ভিস দিচ্ছি৷ আমাদের এখানে রেজিস্ট্রেশন করালে, গ্যারান্টি রয়েছে৷ ওই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়, এই ধরনের সার্ভিস কীভাবে দিতে পারছেন আপানারা? কোনও রাখঢাক না রেখেই তিনি বলেন, পুলিশ থেকে রাজনৈতিক দলের নেতা, সবাইকে টাকা দিতে হয়৷ তবে, এই ধরনের পার্ট টাইমের জবের জন্য ফোনের ওপার থেকে যতই নিশ্চয়তা দেওয়া হোক না কেন, বাস্তব কিন্তু অন্য কথাই বলছে৷
বাস্তব বলছে, আপাত নিরীহ ওই সব বিজ্ঞাপনের নম্বরে ফোন করলেই যেখানে মিলছে যৌনতার হাতছানি, সেখানে ওই যৌনতার ফাঁদে পড়বেন না এমন বেকার অথবা যুবকের সংখ্যাও আবার কম নয়৷আর, ওই ফাঁদে পড়েই, অনেকেই রেজিস্ট্রেশনও করাচ্ছেন৷ কিন্তু, কথা মতো তাঁকে সার্ভিস দিতেও পাঠানো হচ্ছে না৷ আর, এ ভাবেই কলকাতা সহ এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু বেকার এবং যুবকের টাকা লোপাটও হচ্ছে৷
সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান বলছে, অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজনে লন্ডনের প্রতি ২০ জন পড়ুয়ার মধ্যে একজন যৌনপেশার সঙ্গে যুক্ত৷তার মধ্যে আবার ছাত্রীদের থেকে সংখ্যায় বেশি রয়েছেন ছাত্ররা৷ এই ধরনের প্রবণতা থেকে মুক্ত নয় কল্লোলিনী এই তিলোত্তমাও৷ এই মহানগরীতেও কখনও অতিরিক্ত অর্থ, কখনও আবার নেহাত সখ অথবা আদিমসুখের জন্য যৌনপেশার সঙ্গে যুক্ত পড়ছেন অনেকেই৷ তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন অভিজাত গৃহবধূ, তেমনই রয়েছেন কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীও৷
কোলকাতায় ওই ধরনের প্রবণতা দেখা দেবে না-ই-বা কেন! এমনিতেই সেই কবে থেকেই ফুটপাথের লোহালক্কড়ের ভিড়ে লজ্জা ভাঙছে তিলোত্তমা৷ আর, এখন, সেক্স টয়ে মজে যৌনতার আড় ভাঙছে কলকাতা৷ তার উপর, চিনা মডেলের নকল উষ্ণতায় রাত জাগছে কলকাতা! শুধুমাত্র সেটাও আবার নয়৷ চিনকে টপকে কলকাতা মাতাচ্ছে থাই মডেল-ও৷ এ দিকে, কলকাতায় এখন দশটা-পাঁচটার নতুন ডিউটি! আর, বাংলা-বাজার জুড়ে জিগোলোর রমরমা৷ এবং, ইতিমধ্যেই পৌঁছেও গিয়েছে, সুনীলের নীরা সোনাগাছিতে!
সূত্র: কোলকাতার গণমাধ্যম


শেয়ার করুন