চলে গেলেন কবি উৎপল কুমার বসু

2015_10_03_22_10_30_EwPgdj5o1FF2OGym2HOszmcXuOeIog_originalমলয় রায়চৌধুরি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, হাংরি বুলেটিনে কবিতা লেখার অপরাধে যোগমায়াদেবী কলেজের লেকচারারের চাকরি থেকে ১৯৬৪ সালে বরখাস্ত হয়েছিলেন উৎপলকুমার বসু। আর এখন চলছে ২০১৫, এসময় তিনি অব্যাহতি পেলেন ৭৮ বছরের কর্মযজ্ঞ থেকে। ছেড়ে গেলেন ভুল-পুষ্পোদ্যান। একে মৃত্যু বলা যায়, কিন্তু তিনি তো বেচে থাকবেনই যতদিন আরও যারা বেঁচে আছে।

কলকাতার ভবানীপুরে ১৯৩৯ সালে জন্ম উৎপল কুমার বসুর। দশক বিবেচনায় ৫০এর দিকে শুরু হয় তার যাত্রা কবিতার দিকে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ চৈত্রে রচিত কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে পুরী সিরিজ, আবার পুরী সিরিজ, লোচনদাস কারিগর, খণ্ডবৈচিত্রের দিন, শ্রেষ্ঠ কবিতা, সলমাজরির কাজ, পদ্যসংগ্রহ, কবিতাসংগ্রহ, কহবতীর নাচ, নাইট স্কুল, টুসু আমার চিন্তামণি, বক্সিগঞ্জে পদ্মাপাড়ে।

তখন ১৯৬১ সাল। হাংরি হাংরি করে একদল কবি মেতে ছিলো নিজ সৃষ্টিতে, সেখানে উৎপল কুমার বসুও ছিলেন। হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তার লেখায় এক মাত্রা যোগ করে। তিনি সে মাত্রাযোগে নিজেকে অন্যতম এক কবিতে অবস্থান নেন, এবং হাংরি আন্দোলনের কবি হওয়ায় ১৯৬৪ সালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সেকারণেই চাকরি থেকে বরখাস্ত হন ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৫র দিকে তিনি চলে যান লন্ডন, সেখানেই বসবার, কবিতা থেকে মুখ সরিয়ে রাখা, আবারও সেই শিক্ষাকতা, তবে ফিরলেন। ৮০’র দিকে কলকাতায় ফিরে তিনি আবার কবিতা লেখা শুরু করলেন। নতুনত্বকে লাগাম বানিয়ে তিনি লিখতে শুরু করলেন। জায়গা করে নিলেন পাঠকের মনে। পরবর্তী সময় ২০০৬ সালে, তার কাব্যগ্রন্থ সুখ-দুঃখের সাথীর জন্য আনন্দ পুরস্কার এবং ২০১৪ সালে তাকে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়।

বর্তমান সময়ের মধ্যে ঢুকে বসে থাকা ছিলো তার একটা স্বভাব, শব্দের পিঠে হাত বুলিয়ে বসে এনে একে একে তৈরি করেছেন নতুন মাত্রা। নতুনত্ব নিয়ে বেঁচে ছিলেন যতদিন তারচেয়ে বেশিদিন বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। তার দুইটি লাইন স্মরণ করছি…

গাছে উঠে বসে থাকি। ফল খাই। ব্যক্তিমানুষের দিকে
আঁটি ছুঁড়ে মারি। নিচে হাহাকার পড়ে যায়। বেশ লাগে।


শেয়ার করুন