চরম খাদ্য সঙ্কটে দুর্গত মানুষ

 Cox Pic (4)শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:
চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে বন্যা কবলিত জেলার অন্তত ৫ লাখ দুর্গত মানুষ। সমানভাবে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সঙ্কটও চলছে দুর্গত ওইসব জনপদে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা একেবারে অপ্রতুল। এতে গৃহহীন মানুষগুলো মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এক সপ্তাহের টানা প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট দ্বিতীয় দফা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’র সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে জেলা সব ইউনিয়নের অন্তত ৪৫ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। প্লাবনে এসব এলাকার অন্তত ৭ লাখ মানুষ বন্যার শিকার হন। বন্যা কবলিত অন্তত ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্যোগের শিকার হয়। বানের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে ধান, চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তাই এসব মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে গৃহহীন হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। তবে অনেকে দিনের পর দিন পানিবন্দি থাকারও কথা জানা গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। কিন্তু বিতরণ করা ত্রাণ সামগ্রী চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। তাই বরাদ্দ পাওয়া ত্রাণে চলছে না দিন। এ কারণে অনাহারের দিন কাটাচ্ছে অসহায় দুর্গত মানুষগুলো। এতে চরম কষ্টে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
জানা গেছে, বন্যায় প্লাবিত জেলার এলাকাগুলোর পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো পানি নেমে না যাওয়ায় ৫ লাখ পানি মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। তাই দুর্গত মানুষদের দুর্ভোগ কমেনি একটুও। শুধু তাই নয়, বাসস্থান, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্কটের উপর বেড়েছে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। রোগে অনেক মানুষ নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছে।
অন্যদিকে যোগাযোগের কারণে দুর্গম এলাকা থাকা লোকজনের কাছে ত্রাণ পৌঁছেনি বলেও খবর পাওয়া গেছে। তারা ত্রাণ জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আসতে পারেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাদের জন্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এরকম লোকের চকরিয়ায় বেশি বলে জানা গেছে। Cox Pic (11)
জেলা প্রশাসনের মতে, দুই দফা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেনে’র প্রভাবে চকরিয়া উপজেলার ৮ ইউনিয়ন, পেকুয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়ন, কুতুবদিয়া উপজেলার ৩ ইউনিয়ন, মহেশখালী উপজেলার ৩ ইউনিয়ন, টেকনাফ উপজেলার দুই ইউনিয়ন, কক্সবাজার সদর উপজেলার দুই ইউনিয়ন ও উখিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন বেশি পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। এছাড়াও কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ৩ ইউনিয়ন এবং চকরিয়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৫ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পানিবন্দি রয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে বসতবাড়ি ও ক্ষেত খামার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়ক উপসড়ক, মৎস্য প্রজেক্টের। অনেকেই সহায়-সম্বল হারিয়ে হয়েছে সর্বশান্ত।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক আলী হোসাইন জানিয়েছিলেন, জেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় ৩১৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা বিতরণ করেছে। এই ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তার মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৩৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩৫ হাজার টাকা, কক্সবাজার শহরে দুই লাখ টাকা, রামু উপজেলায় ৬০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৯৫ হাজার টাকা, চকরিয়া উপজেলায় ১০৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা, পেকুয়া উপজেলায় ৩৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ এক লাখ ৭০ হাজার টাকা, মহেশখালী উপজেলায় ১৯ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা, কুতুবদিয়া উপজেলায় ২৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ এক লাখ ১০ হাজার টাকা এবং উখিয়া উপজেলায় ৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩০ হাজার টাকা।
তিনি দাবি করেন, জেলা প্রশাসনের এই বরাদ্দের বাইরেও স্ব-স্ব উপজেলা প্রশাসনও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিতরণ করেছে।
তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে দুর্গত এলাকার জন্য ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া এই ত্রাণের মধ্যে এখন ১৮৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এসব চাল ও টাকা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হচ্ছে।
জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বরাদ্দ ত্রাণ চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। এ কারণে দুর্গত মানুষগুলো চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানান, ঢল ও জলোচ্ছ্বাসের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পেকুয়া উপজেলা। উপজেলার পেকুয়া সদর, মগনামা, উজানটিয়া, শিলখালী ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে বিলীন হওয়ায় পুরো উপজেলা এবারের বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এখনো জোয়ার-ভাটা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পেকুয়া আশঙ্কাজনকভাবে ক্ষতি হলেও সমান বন্টনে সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বরাদ্দে আমাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। তাই বরাদ্দ পাওয়া ত্রাণের অপ্রতুলতার কারণে খাদ্য সঙ্কটে পড়ে মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।’
রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম বলেন, ‘এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যায় রামুর ১১টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে ৫ হাজারের বেশি বসতবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সেই সাথে হারিয়েছে ধান, চালসহ সংরক্ষণ করা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এতে সৃষ্টি হয়েছে খাদ্য সঙ্কট। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনে ত্রাণ দেয়া হলেও তাতে চাহিদা মিটছে না। আরো অনেক ত্রাণ প্রয়োজন।’ Cox Pic (13)
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, দ্বিতীয় দফা চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়ন কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি সম্পূর্ণভাবে এবং ৪টি ইউনিয়ন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২ লাখের মতো মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। এখনো দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিপুল মানুষের চাহিদা মিটানো কঠিন বিষয়। তাই খাদ্য সঙ্কট রয়েছে। এ জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আরো ত্রাণ চাওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার এই দুর্যোগ থেকে উত্তরণে অত্যন্ত আন্তরিক। তাই যা চাওয়া তাই দেবেন বলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।’


শেয়ার করুন