চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী দিয়ে চলছে উখিয়া হাসপাতাল

indexশফিক আজাদ, স্টাফ রিপোর্টার :

উখিয়া উপজেলার আড়াই লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণের জন্য প্রতিষ্টিত ৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় সুইপার ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। মুর্মূষ রোগী আসলে তাকে সাথে সাথে কক্সবাজার হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ সরকার গ্রামে-গঞ্জের এসব হাসপাতালে ডাক্তার শূণ্যতা পুরণের জন্য বিভিন্ন কার্যকরি পদক্ষেপ হাতে নিলেও এখানে তা মানা হচ্ছেনা। কাগজে-কলমে বিভিন্ন রোগের অভিজ্ঞ ৫জন এমবিবিএস  ডাক্তারের পদ পূরন থাকলেও বাস্তবে নেই। এসব ডাক্তারেরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে মাসের পর মাস ছুটি নিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকুরী করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, এ উপজেলার আড়াই লক্ষ মানুষের সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রদানের একমাত্র মাধ্যম উখিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র । ১৯৫২ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান সরকারের শুরুতেই বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ানে ৫ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল উন্নীত করণ করা হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সরঞ্জাম সহ অন্যান্য উপকরণ ও বরাদ্দ দেন সরকার। ৫জন ডাক্তারের পদ পুরণ থাকার পরও হাসপাতালের চিত্র অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। স্থানীয় গ্রামবাসির পক্ষে জাফর আলম অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানান, এখানে ডাক্তার পোস্টিং দিলেও ১৫/২০ দিনের বেশী থাকতে চায় না। দেন দরবার করে তারা বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতালে চলে যায়। যার ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালটির এহেন করুণ অবস্থা।

সরজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে  কোন ডাক্তার নেই। সুইপার ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ডাক্তার না থাকায় জটিল ও গরীব রোগীরা প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে বলে রাজাপালং ইউনিয়নের টিএন্ডটি গ্রামের রশিদা বেগম নামে এক মহিলা রোগী অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, গত বৃহস্পতিবারে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন তাকে কক্সবাজার হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়েছে। পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসারত কোটবাজারের আমির হোছন(৪০) জানান, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু রবিউল হাছান (৪) কে নিয়ে এসেছেন গত বৃহস্পতিবারে, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় ওয়ার্ডবয়েরা চিকিৎসা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। কর্মচারীরা তাকে প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তাৎক্ষণিক জটিল রোগীদের রেফার করার কারনে সম্প্রতি হিজলিয়া এলাকার এক ড্রাইভারের প্রতিমধ্যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।  তার অভিভাবকরা অভিযোগ বলেন, যদি রোগীটা উখিয়া হাসপাতালে সেবা দিতে পারত, তাহলে তার অকালে মৃত্যু হত না।

হাসপাতালের ইর্মাজেন্সী বিভাগে গিয়ে কথা হয় সুমতি সেন একজন মেডিকেল এসিসটেন্টএর সাথে, সে জানান, আমি এখন এসেছি, ডাক্তার  না থাকায় কিছুক্ষণ রোগী দেখাশোনা করব। মুর্মূষু রোগী আসলে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, কক্সবাজার হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। যেহেতু এখানে সরকারী ডাক্তার থাকার পরও নিয়মিত ডিউটি করছে না। ইর্মাজেন্সী রুমের বাইরে বেঞ্জে ঝিমূতে থাকা বাগান মালী ছিদ্দিক সাংবাদিক দেখে চমকে উঠে বললেন, স্যার হাসপাতালে ডাক্তার নাই, তাই রোগীও কমে গেছে। টিকেট কাউন্টারে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের বর্হিবিভাগে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন রোগী বারান্দায় বসে আসে। কথা হলে তারা বলেন, এই হাসপাতালে প্রায় সময় ডাক্তার থাকেনা।

আপনি একটু পত্রিকায় লিখুন। যাতে গরীব, দুঃখী মানুষ চিকিৎসা সেবা পায়। এছাড়াও ইসিজি, এনেস্থেসিয়া, রক্ত পরীক্ষা সহ একাধিক ল্যাব্রটারীর দরজা বন্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মচারী জানালেন, টেকনেসিয়ানের অভাবে হাসপাতালের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তারা জানান, ২০০৪ সালে একটি উন্নত মানের এক্সরে মেশিন সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। উক্ত এক্সরে মেশিনটি ব্যবহৃত না হওয়ায় বর্তমানে তা বিকল হয়ে গেছে। ঔষধের গুনগত মান ধরে রাখার জন্য দুইটি কক্ষে স্থাপিত শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে পড়েছে। এব্যাপারের জানাতে চাওয়া হলে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, এ হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সমপরিমাণ জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ঔষধ বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি। তাছাড়া ৩১ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কারণে শত চেষ্টা করেও রোগীদের যথাযত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা।


শেয়ার করুন