মিয়ানমারের সীমান্তে বাংলাদেশ জঙ্গি বিমান ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে বলে কতিপয় সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রচারিত হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল হাসান।
তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামে যে যুদ্ধবিমান উড়েছে তা ছিল বিমান প্রতিরক্ষা সতর্কতার (এয়ার ডিফেন্স অ্যালার্ট) নিয়মিত কার্যক্রম। এর সঙ্গে মিয়ানমার প্রসঙ্গ সম্পর্কিত নয়।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকাটাইমসের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
একটি গণমাধ্যম আইএসপিআরের সূত্র উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করে, মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া হিসেবে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী চট্টগ্রামে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ।
পত্রিকাটি জানায়, যুদ্ধবিমানের মধ্যে রয়েছে চারটি মিগ-২৯এস ও কয়েকটি এফ-৭ ফাইটার। বিএনএস বঙ্গবন্ধু মিসাইল ফ্রিগেটসহ সাত থেকে নয়টি যুদ্ধজাহাজ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইএসপিআরের পরিচালক ঢাকাটাইমসকে জানান, ফেসবুক ও সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের খবর তারা দেখেছেন। তবে খবরটি সত্য নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোনো ধরনের মুভমেন্ট করেনি।
রাশিদুল হাসান বলেন, যে পত্রিকায় তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদটি ছাপা হয়েছে, তারা তাকে ‘মিসকোড’ করেছে। তাদের সেটি সংশোধন করার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে আইএসপিআর পরিচালক আজ চট্টগ্রামে যুদ্ধবিমান ওড়ার কথা নিশ্চিত করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সেটি চট্টগ্রামের আকাশেই উড়েছে। এই বিমান ওড়ার বিষয়টি ছিল এয়ার ডিফেন্স অ্যালার্ট রুটিন ওয়ার্ক। সাধারণত ছুটির দিনে এই রুটিন ওয়ার্কগুলো হয়ে থাকে। আজ ছুটির দিনেও এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এর সঙ্গে মিয়ানমারের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।’
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মিয়ানমার সীমান্তে যুদ্ধবিমান ওড়া কিংবা যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের খবর বানোয়াট ও অসত্য বলে জানান এই সেনা কর্মকর্তা।
গত কিছুদিন ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেদেশের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। পুড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বাড়িঘর। হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম আশ্রয়ের জন্য হাজির হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) হিসেব মতে ইতিমধ্যে ৫৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন ঘটনায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লোকজনের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ আহত। তাদের মধ্যে দুজন চট্টগ্রাম হাসপাতালে মারা গেছে। আরো অনেক গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এরই মধ্যে বেশ কবার মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশি গ্রামে ওপার থেকে গুলি এসে পড়ার খবর জানা যায়। তিন দফা বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে মিযানমারের সামরিক হেলিকপ্টার। এসব ঘটনায় বাংলাদেশ ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায়্।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের অমানবিক নির্যাতনে ঘটনায় উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। তারা এমনকি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও মিয়ানমারের ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো হচ্ছে।
—ঢাকাটাইমস