চট্টগ্রামে আসছে মোটাতাজা গরু : স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে উদ্যোগ নেই

2015_09_09_16_55_49_1gPvqvd8QUIhpItu1yRPUJSTIQxBJ9_800xautoসিটিএন ডেস্ক :

আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই মুসলমান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামের বাজারে আনা হচ্ছে মোটাতাজা গরু।

যেসব অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের বাজারে গরু আনা হচ্ছে সেখানকার খামারীরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বিভিন্ন দেশী-বিদেশি কোম্পানির ইনজেকশন ও পাউডার ব্যবহার করে স্বল্প সময়ে গরু মোটাতাজা করেছেন। যা পরোক্ষভাবে গরুর শরীরের মাংসকে বিষে পরিণত করেছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে মানবদেহে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরণের জটিল রোগ হতে পারে। এ ধরণের গরু কেনা থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কুরবানি উপলক্ষে ভারতের গরুর পরিবর্তে দেশী গরুর দিকেই ঝুঁকছেন তারা। যেগুলোকে মোটাতাজা করতে কোন ধরণের ইনজেকশন বা ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কিনা তা তারা নিশ্চিত নন। এছাড়া মোটাতাজা গুরু বিক্রি বন্ধে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ড. শরফরাজ খাঁন বাংলামেইলকে বলেন, ‘গরু মোটাতাজা করতে যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। রান্নার পরেও তা যায় না। ফলে মানবদেহে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে যায়। এতে মানুষের লিভার ও কিডনী বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হতে পারে।’

কুষ্টিয়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থকে যেসব গরু চট্টগ্রামে আসছে সেগুলোকে মোটাতাজা করতে কি ধরণের খাদ্য দেওয়া হয় সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানালেন নগরীর অন্যতম বড় গরু বাজার বিবিরহাটের ইজারাদার মোক্তার আহমেদ।

তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘সাধারণত স্থানীয়ভাবে যারা গরু মোটাতাজা করে সেসব গরুই আমরা বিক্রি করি। বিশেষ করে কোরবানি উপলক্ষে ভারত থেকে আনা গরু বেশি বিক্রি করা হয়। তবে এবার ভারতের গরু কম থাকায়, মিয়ানমার ও দেশীয় গরু বেশি আসছে। কুষ্টিয়া থেকে যেসব গরু আনা হয় সেগুলোকে কি ধরণের খাদ্য দেওয়া হয় তা আমরা কিভাবে জানবো ? তারা গরু মোটাতাজা করতে ট্যাবলেট বা ইনজেকশন ব্যবহার করে থাকতেও পারে।”

বাজারের ইজারাদার হিসেবে এ ধরণের গরু বিক্রি বন্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরণের কোন সিদ্ধান্ত এখনো নিইনি। তবে ক্রেতারা চাইলে ক্রয়কৃত গরু ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে নিতে পারেন।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নগরীতে গরু নিয়ে আসেন ব্যাপারিরা। যা নগরীর সাগরিকা বাজার, বিবিরহাটসহ অন্যান্য স্থায়ী ও অস্থায়ী বাজাওে বিক্রির জন্য নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, রাজশাহী, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, মেহেরপুর, জামালপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, পাবনা, কুমিল্লা, ফেনীসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রামের বাজারে গরু নিয়ে আসেন গরু ব্যাপারীরা। এরমধ্যে কিছু গৃহস্তের থাকলেও অধিকাংশই খামারের গরু। যেগুলোকে মোটাতাজা করতে ব্যবহার করা হয় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন ধরণের ওষুধ।

তবে সাগরিকা গরু বাজারের বিট মালিক মো. আলী আকবর খাঁন জানিয়েছেন, এবার কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু বাজারে আনতে নিষেধ করা হয়েছে। ব্যাপারিরা এই ধরনের গরু বাজারে আনবেনা বলে কথা দিয়েছে ।

তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু ব্যবসায়ীরা আনবে না। কারণ এসব গরু মরে যায়। বিগত কয়েক বছর এই ধরনের গরু মারা গিয়ে ব্যবসায়ীরা অনেক টাকা লোকসানে পড়েছেন।’

এদিকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বাজার ইজারাদারদের সাথে এক বৈঠকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন, অর্থ ও ট্রাফিক) একেএম শহিদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি গরুর বাজারে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকবে। ক্রেতারা যাতে কোনভাবে প্রতারিত না হন, তার জন্য প্রতিটি গরুর বাজারে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য পশু ডাক্তার থাকতে হবে।’ তবে এউদ্যোগ কারা নেবে সেই বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করেননি।

চট্টগ্রাম ভেটেরেনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান ড. একেএম সাইফুদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা নিয়ে আমাদের দেশে যা হচ্ছে তা কিছুটা বাড়াবাড়ি, অস্বাস্থ্যকর ভাবে হয়তো কিছু হয়। তবে এজন্য সবাইকে ঢালাও ভাবে দোষ দেওয়া যাবে না। এতে দেশীয় খামারিরা লোকসানের শিকার হবেন।


শেয়ার করুন