চকরিয়ায় লবণ মাঠে ডাকাতদলের হানাঃ ২ চাষী অপহৃত

goliসূত্র: কক্সবাজার নিউজ ডটকম :

কক্সবাজার জেলার প্রধান লবণ উৎপাদন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত চকরিয়ার খুটাখালীর দক্ষিণ বহলতলী ঘোনায় ডাকাত পড়েছে। ৩০/৩৫ সদস্যের ভয়ংকর, সশস্ত্র এই লবণ ডাকাত দল গত ২৬ ও ২৭ মার্চ দু’দিনে লবণ মাঠে হানা দিয়ে চাষীদের উৎপাদিত প্রায় ৭’শ মন লবণ লুট করেছে। যার বাজার মূল্য অন্তত তিন লাখ টাকা।এছাড়া ডাকাত দল গতকাল অপহরণ করেছে দুই লবণ চাষীকে। অপহৃত লবণ চাষী হলেন খুটাখালীর সাইফুল ইসলামের পুত্র মেজবাহ (৩৬) ও নাছির উদ্দিন (৫০) । দেশীয় বাজারে লবণের চাহিদাও দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চকরিয়ার একজন রাজনৈতিক গড্ফাদারের আশীর্বাদপুষ্ট ডাকাতদল লবণ উৎপাদন ক্ষেত্রে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

স্থানীয় লবণ চাষী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়- ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের বিকেলে ৩০/৩৫ সদস্যের একদল অস্ত্রধারী ডাকাত নৌ-পথে ট্রলার যোগে এসে বহলতলী মৌজার ৫৮২ ধ্র“ন আয়তনের দক্ষিণ বহলতলী ঘোনায় অবস্থান নেয়। অস্ত্রধারী ডাকাতদল লবণ চাষীদের মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করতে প্রথমে ২০-২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এসময় লবণ চাষীরা ভয়ে দ্বিগবিদিগ পালীয়ে গেলে ডাকাতরা অন্তত অর্ধশত লবণ চাষীর প্রায় ৭’শ মন লবণ নিজেদের দখলে নেয়। স্থানীয় লবণ চাষী এফাজ উল্লাহ জানান- ২৬ মার্চ সারা রাত ডাকাতরা থেমে থেমে ভারী অস্ত্রের গুলি বর্ষণ করে। গতকাল ২৭ মার্চ সকালে ডাকাতরা লবণ চাষী মেজবাহ (৩৬) ও নাছির (৫০) কে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘন্টা তিনেক পর ডাকাতদল অপহৃত মেজবাকে প্রচন্ড মারধর ছেড়ে দিলেও আরেক অপহৃত লবণ চাষী নাছিরের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এদিকে খুটাখালীর চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রহমান জানান- দক্ষিণ বহলতলী ঘোনা থেকে লবণ লুটের খবর পেয়ে বিষয়টি আমি চ করিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি। পরে চকরিয়া থানা পুলিশের এস,আই সুব্রত দেব ও এসআই জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ডাকাত দল কিছুক্ষণ গা ঢাকা দিয়ে ফের লবণ ক্ষেত্রের নিয় ন্ত্রণ নেয়। বহলতলীর লবণচাষী নেতা আব্দুর রহিম ক্ষোভের সাথে জানান, দুু’দফা বৃষ্টির পর ভর লবণ উৎপাদন সময়ে সশস্ত্র ডাকাতদলের উপদ্রব সহ্য করার মতো নয়। প্রত্যেক ডাকাতের হাতে ভারি অস্ত্র-শস্ত্র রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী লবণচাষীরা জানান, চকরিয়া পালাকাটার জিয়াবুল, মিজান, নাজেম, বাটাখালীর হামিদ, কাহারিয়াঘোনার ইব্রাহিম ও মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার আক্তার কামাল ডাকাতের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ সশস্ত্র ডাকাতদল লবণ মা ঠে হানা দিয়ে উৎপাদিত লবণ লুটপাট করছে।

একজন আতংকিত লবণচাষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডাকাতদের বাড়ি চকরিয়া থানা ও আদালতের আশেপাে শ হওয়ায় মারধর ও অপহরণের ভয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের ও মামলা করার সাহস পাচ্ছি না। তাছাড়া চকরিয়ার মুখচেনা এই ডাকাতদের আশ্রয়-প্রশয় দিচ্ছেন, চকরিয়ার জন-প্রতিনিধি নামধারী এক রাজনৈতিক গড্ফাদার। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া সার্কেলের এএসপি কাজী মতিউল ইসলাম জানান, আমি দাপ্তরিক কাজে মহেশখালী এসেছি। চকরিয়ায় ফিরে বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। চকরিয়ার ওসি জহিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে দ্রুত আমি বহলতলী লবণ ক্ষেত্রে পুলিশ পাঠিয়েছি। ফলে ডাকাতেরা লবণ ডাকাতিতে সুবিধা করতে পারেনি। অন্যদিকে একটি সূত্র জানায়- গত তিনমাস আগে চকরিয়া চরনদ্বীপ মৌজায় সন্ত্রাসীদের অভিযান চালিয়ে দিয়ে বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার করে। পাশাপাশি অস্ত্রের কারিগরকে আটক করে। সচেতন মহলের মতে- অস্ত্রের কারখানা ও কারিগরের অদৃশ্য গড্ফাদারদের গোয়েন্দা নজরদারীর আওতায় এনে ব্যবস্থা না নিলে চকরিয়ার বৃহত্তর উপকূলের লবণক্ষেত্র ও চিংড়ি ঘেরে ডাকাতি- লুটপাট চলতেই থাকবে।

 


শেয়ার করুন