গোসল ফরজ হয় কখন?

3331ইসলাম ডেস্ক :

এমনিতে প্রতিদিন গোসল করা জরুরি। পাক পবিত্র থাকতে হাদিসে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে কখনো কখনো গোসল ফরজ হয়ে থাকে। না জানার কারণে ফরজ গোসলগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে করা হয় না। এতে শরীর অপবিত্রই রয়ে যাবে। জেনে নিন গোসল কখন ফরজ হয়, কীভাবে ফরজ গোসল করতে হয়।
গোসল ফরজ হওয়ার কারণগুলো নিম্নরূপ
এক. জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় বীর্যপাত হওয়া।
দুই. স্ত্রী সহবাস। বীর্যপাত না হলেও গোসল ফরজ হবে।
এ বিষয়টি অনেক মানুষের জানা নেই। অনেক লোক স্ত্রী সহবাসে বীর্যপাত না করলে গোসল না করেই কাটিয়ে দেয়। এটি মারাত্মক ধরনের ভুল। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শরীয়তের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয।
তিন. নারীদের ঋতু¯্রাব বা নেফাস হওয়া। ঋতুবতী নারীর স্রাব বন্ধ হলে, গোসলের মাধ্যমে তাকে পবিত্র হতে হবে। এই গোসলও ফরজ গোসলের অন্তর্ভূক্ত। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েজ স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমণ কর তাদের কাছে। যেভাবে আল্লাহ তোমাদের হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সূরা বাকারা : ২২২)
হায়েজ ও নেফাস থেকে গোসল করার পদ্ধতি নাপাকী থেকে গোসল করার পদ্ধতির অনুরূপ। তবে বিদ্বানদের মধ্যে কেউ ঋতুবতীর গোসলের সময় বরই পাতা ব্যবহার করা মুস্তাহাব বলেছেন। কেননা এতে অধিক পরিস্কার ও পবিত্র হওয়া যায়। বরই পাতার বদলে সাবান বা শ্যম্পু ব্যবহার করলেও উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হয়।
আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরজ বলে উল্লেখ করেছেন। দলিল হচ্ছে, নবী সা. এর কন্যা যয়নবকে যারা গোসল দিচ্ছিলেন, তিনি তাদের বললেন, ‘যয়নবকে তিনবার গোসল করাও, অথবা পাঁচবার অথবা সাতবার অথবা এর চাইতে অধিকবার, যদি তোমরা তা মনে কর।’ (বুখারী শরীফ : ১২৫৩)
তাছাড়া বিদায় হজ্জে আরাফা দিবসে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় বাহণ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করলে নবী সা. বলেন, ‘তোমরা তাকে পানি ও বরই পাতা দ্বারা গোসল দাও এবং পরিহিত দু’টি কাপড়েই কাফন পরাও।’ (বুখারী শরীফ : ১২৬৭)
গোসলের ফরজ
১) গড়গড়া কুলি করা।
২) নাকে পানি দেয়া ও
৩) সারা দেহে পানি ঢালা।
গোসলের সুন্নত
১) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গোসল করা।
২) ক্রম বজায় রাখা।
৩) প্রথমে ওজু করা।
৪) দু হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া।
৫) শরীর থেকে নাপাকি ঘঁষে দূর করা।
৬) মেছওয়াক করা।
৭) সারা দেহে তিন বার পানি ঢালা।
গোসলের মুস্তাহাব সমূহ
১) উচু স্থানে বসে পোসল করা যাতে পনি গড়িয়ে যায় ও গায়ে ছিটা না লাগে।
২) পানির অপচয় না করা।
৩) বসে গোসল করা।
৪) লোক সমাগম স্থানে গোসল না করা।
৫) পাক জায়গায় গোসল করা।
৬) ডান থেকে শুরু করা।

ফরজ গোসলের মসনুন পদ্ধতি

১) মনে মনে নাপাকি দূর করার নিয়ত করা।
২) শুরুতে লজ্জাস্থানে লেগে থাকা নাপাকি ধুয়ে ফেলা।
৩) সাবান বা অনুরূপ কিছু দিয়ে হাত ধোয়া।
৪) নামাজের অজুর মতো পূর্ণাঙ্গ অজু করা।
৫) পানি দিয়ে তিনবার মাথা ভিজানো।
৬) প্রথমে শরীরের ডান অংশে এবং পরে বাম অংশে পানি ঢালা।
৭) তারপর সারা দেহে পানি ঢালা।
৮) গোসল শেষে এই দোয়া পড়া
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

উল্লেখ্য, ফরজ গোসলের পর কাপড় তিনবার ধুতে হবে। প্রতিবার কাপড় ভিজিয়ে চিপে তারপর আবার ধুতে হবে। এভাবে তিনবার ধোয়া সুন্নত।


শেয়ার করুন