হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন

গুম ও গোপন আটক বন্ধ করুন

বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০১৩ সাল থেকে বিরোধী দলের কর্মীসহ কয়েক শ ব্যক্তিকে অবৈধভাবে আটক করেছে। তাদের গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করা হয়েছে।

গুম করার এই প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক এইচআরডব্লিউ। একই সঙ্গে অভিযোগের দ্রুত নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে জবাব এবং এ ধরনের গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর বিচার করতে বলা হয়েছে।

“‘তিনি আমাদের কাছে নেই’: বাংলাদেশে গোপনে আটক ও গুম’” শিরোনামের ৮২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালেই কমপক্ষে ৯০ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। যদিও গোপনে আটকে রাখার কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু এইচআরডব্লিউর কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, আটক হওয়া ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে। আর নয়জনের অবস্থা অজানা।

এইচআরডব্লিউ বলছে, ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ৪৮টি নিখোঁজের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোপন হেফাজতে নির্যাতন ও রূঢ় আচরণের অভিযোগ আছে।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া-বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, নিখোঁজের বিষয়ে যথার্থ তথ্য থাকা সত্ত্বেও সরকার আইনের তোয়াক্কা না করে এই ভয়ংকর চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে।

ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, মানুষজনকে আটক, তাদের দোষ ঠিক করা, শাস্তি নির্ধারণ, তাদের বাঁচিয়ে রাখা-না রাখার সিদ্ধান্তের পূর্ণ স্বাধীনতা যেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বিএনপির ১৯ জন কর্মীর নিখোঁজের ঘটনার উল্লেখ আছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা ও সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁদের তুলে নেওয়া হয়।

প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, প্রত্যক্ষদর্শীসহ মোট ১০০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এইচআরডব্লিউ। প্রতিবেদনে অভিযোগ ও আইনি কাগজপত্র যুক্ত করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউ বলছে, অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে বারবার দাবি করে আসছে আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। এই দাবিকে প্রায়ই সমর্থন দেন সরকারি কর্মকর্তারা। উল্টো তারা বলেন, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় গোপনে লুকিয়ে আছেন। এ ধরনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগও নেয় না পুলিশ।

গুম ছাড়াও রাষ্ট্রীয় গোপন হেফাজতে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে বলে জানায় এইচআরডব্লিউ।

সংস্থাটি বলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম এখনো চলছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে মোট ৩২০টি নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।

আন্তর্জাতিক আইন স্মরণ করিয়ে দিয়ে এইচআরডব্লিউ বলছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত স্বাধীন ও কার্যকর তদন্ত পরিচালনার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে বাংলাদেশে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো।

ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার, মানুষের জীবন ও আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করাকে একটি অভ্যাসে পরিণত করেছে। এমনকি সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করারও প্রয়োজন বোধ করছে না। বরং তারা নীরব থাকছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও তারা এমনটা প্রত্যাশা করছে। এই নীরবতা ভাঙা প্রয়োজন।’

–প্রথম আলো :


শেয়ার করুন