গরম জলের নদী!

boiling_102668_0যুগ যুগ ধরে রহস্য আর বিচিত্র সব কিংবদন্তির জন্ম দিয়ে আসছে আমাজন। এই তো কিছু দিন আগেও এই মহাবনের বিপুল সাম্রাজ্যের সবটুকু অংশে পা ফেলতে পারেনি মানুষ। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়ন আর অনুসন্ধিৎসুদের দুর্নিবার আগ্রহের ফলে আমাজনের অনেক রহস্যেরই কিনারা হয়েছে।

এই যেমন আমাজনের গভীরে একটি রহস্যময় নদীর সন্ধান পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন এক ভূবিজ্ঞানী। চার মাইল দীর্ঘ এই নদীর পানি এতটাই গরম যে কোনো কিছু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেদ্ধ হয়ে যায়।

আমাজনের ভেতরে এ ধরনের নদী থাকার গল্প দাদার কাছে প্রথমে শুনে বিশ্বাস করেননি ভূবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রেস রুজো।

তার ধারণা, আমাজনের ভেতরে গরম জলের নদী থাকা অসম্ভব। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, ছোট একটি নদীর পানি গরম করতে ভূমিতে বিপুল পরিমাণ তাপ প্রয়োজন। এ ছাড়া আমাজন অববাহিকায় কোনো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নেই। তবে ২০১১ সালে রুজোর ভুল ভাঙে। তিনি নিজ চোখে দেখে আসেন আমাজনের সেই ফুটন্ত জলের নদী।

পেরুর মায়ানটুইয়াসু এলাকার ওই নদীটির গল্প রুজো প্রথম শুনেছিলেন তার দাদার কাছে। দাদা তাকে বলেছিলেন, ১৬ শতাব্দীতে ইনকা সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাটকে হত্যা করে স্প্যানিশ বিজেতা আমাজনে যান স্বর্ণের খোঁজে। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তার সফরসঙ্গী লোকজন আমাজনের ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে- আমাজনের অধিবাসীরা নাকি নদীর পানিতে সাপ সিদ্ধ করে খায়।

এরও ১২ বছর পর পারিবারিক এক নৈশভোজে সেই নদীর কথা আবার আলোচনায় আনেন তার চাচি। চাচি জানান, তিনি ওই নদী পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।

এরপর সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির ভূ-প্রকৃতিবিদ্যার পিএইচডি শিক্ষার্থী রুজো সেই গরম পানির নদীটি খুঁজে বের করার সংকল্প করেন।

তবে আমাজনে এই নদী সন্ধানের আগে তিনি অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন, বাস্তবে এই ধরনের কোনো নদী আছে কি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী, সরকারি দপ্তর, তেল-গ্যাস ও খনি কোম্পানির কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে তাকে হতাশ হতে হয়। তাদের সবার কাছ থেকেই এই ধরনের নদীর অস্তিত্বের বিষয়ে নেতিবাচক উত্তর পান তিনি। ফলে একরকম সংশয় ঘিরে ধরে তাকে।

কিন্তু সংশয় সত্ত্বেও রুজো গরম জলের নদীর খোঁজে আমাজন ভ্রমণে বের হন। দিক নির্দেশনায় ছিলেন তার চাচি। অবশেষে চার মাইল দীর্ঘ সেই ফুটন্ত জলের নদীর সন্ধান পান রুজো। নদীটি প্রস্থে ২৫ মিটার এবং গভীরতা ৬ মিটার। এর পানি এতই গরম যে চা বানিয়ে খাওয়া যায়।

টেড ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুজো বলেন,“নদীর জলে হাত ডোবানোর আধা সেকেন্ডের মধ্যে তিন ডিগ্রি মাত্রার জ্বলুনি পাই আমি।”

তিনি আরো বলেন, “এই নদীর পানিতে পড়ে কোনো জীবজন্তুই বেঁচে থাকতে পারে না। ব্যাঙের মতো অনেক প্রাণীকে এই নদীতে আমি পড়তে দেখেছি। পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা রান্নার মতো (সেদ্ধ) হয়ে যায়।”


শেয়ার করুন