গভীর মমতায় খালেদার কোলে রোহিঙ্গা শিশুর ভিডিও ভাইরাল!

নিউজ ডেস্ক :

ঢাকা: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে শিশুকে গভীর মমতায় আদর করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় ময়নার ঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে এক শিশুকে কোলে নিয়ে মায়ের মমতায় কোলে তুলে নেন তিনি।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া প্রথমে ওই রোহিঙ্গা শিশুকে নিজের কোলে নিয়ে আদর করার পর তার মায়ের কোলে ফেরত দেন। কিন্তু ওই শিশুটি ফের খালেদা জিয়ার কোলে আসার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়, এরপর বেগম জিয়া ফের ওই শিশুকে কোলে তুলে নেন এবং বেশ কিছুক্ষণ নিজের কোলে রেখে শিশুটির সঙ্গে মজা করেন।

শিশুটিও গভীর মমতা পেয়ে খালেদা জিয়ার কোল ছাড়তে চায়নি। এভাবে শিশুটির সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটে খালেদা জিয়ার। আর এই ভিডিওটিই ভার্চুয়াল জগতে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওটি দুপুর কয়েক লাখবার শেয়ার হয়েছে বলে জানা গেছে।

সোমবার দুপুরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে খালেদা জিয়া মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানান এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বার্মিজ সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শীতের আগেই ফিরিয়ে নিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানান। মানবতার সুরক্ষায় দেশটির প্রতি চাপ দিতেও আন্তর্জাতিক সম্পদায়ের প্রতি আহ্বান জানান বেগম জিয়া।

এই সফরে তিনি মোট ৪৫ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে যান। এই ত্রাণের মধ্যে আছে ১১০ টন চাল এবং পাঁচ হাজার শিশু ও পাঁচ হাজার সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য বিশেষ খাবার। ৪৫ ট্রাক ত্রাণের মধ্যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল বিতরণ করেছে নয় ট্রাক ত্রাণ। বাকি ত্রাণ হস্তান্তর করা হয়েছে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর কাছে।

ত্রাণ বিতরণকালে খালেদা জিয়া বলেন, মায়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে মায়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলকে আরো চাপ সৃষ্টি করতে হবে

খালেদা জিয়া বলেন, সরকার প্রথমে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে চায়নি। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে আমি আগেই সরকারকে অনুরোধ করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে পাঠাতে সরকারের তৎপরতা যথেষ্ট নয়। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সরকার কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

মায়ানমার বাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে সরকার সঠিকভাবে সেবা দিতে পারেনি বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের যেভাবে সেবা দেয়ার দরকার ছিল, সরকার সেভাবে সেবা দিতে পারেনি।

খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশ ছোট ও দরিদ্র দেশ। আমাদের হৃদয় আছে বলে আমার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। দেশের বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলো তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে তাদের স্থায়ী ভাবে আমাদের পক্ষে রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি প্রধান।

সোমবার বেলা পৌনে ১ টার দিকে উখিয়ার ক্যাম্পে পৌঁছান তিনি। এর আগে পৌনে ১১ টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউস থেকে উখিয়ার পথে রওনা হন তিনি।

এর আগে রবিবার রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউসে পৌঁছান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ গাড়িবহর নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও জনতার বিশাল ভিড় পার হয়ে টানা আট ঘণ্টায় কক্সবাজারে পৌঁছান তিনি।

উখিয়ার কুতুপালং, শফিউল্লাহ কাটা ও বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া অসহায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। এ ছাড়াও তিনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) পরিচালিত একটি চিকিৎসা ক্যাম্পও উদ্বোধন করেন।

পরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ শেষে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মাঝপথে চট্টগ্রাম ও ফেনিতে যাত্রা বিরতি দেন।

সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউজ থেকে তার গাড়িবহর ঢাকা ফেরার উদ্দেশে রওয়ানা হয় এবং রাতে চট্টগ্রামে যাত্রাবিরতি করেন বেগম জিয়া।

কক্সবাজার সার্কিট হাউজ ত্যাগ করার আগে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বেগম জিয়া বলেন, ‘আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন। এই কষ্টের ফল আপনারা পাবেন, এই শ্রম বৃথা যাবে না। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে খালেদা জিয়া
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় তিনি ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ ত্যাগ করেন। ফেনিতে কিছুক্ষণের যাত্রাবিরতি দিয়ে রাতে ঢাকায় পৌঁছবেন।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের জন্য রওয়ানা দেন খালেদা জিয়া। সোমবার রোহিঙ্গাদের তিনটি ক্যাম্প ও একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ঢাকার পথে ফের রওয়ানা দিয়েছেন বেগম জিয়া।


শেয়ার করুন