গণপরিবহনে ১৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার

imrs-400x266সিটিএন ডেস্ক :

ঘরে কিংবা বাইরে নারী এমনকি মেয়েশিশুরাও এখন অহরহ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এখন আর কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। নতুন করে গণপরিবহনে নারী ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশ অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনারই আসামি ধরতে পারছে না। বাস্তবায়ন হচ্ছে না হাইকোর্টের নির্দেশনাও।

সর্বক্ষেত্রেই অবহেলা ও উদাসীনতার একটি সুস্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে। গত ২ বছরে শুধু গণপরিবহনে কমপক্ষে ১৮ জন নারী ধর্ষণ বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

গত বছর রাজধানীতে এক গারো তরুণীকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে চলন্ত অবস্থায় গণধর্ষণ করা হয়। এমন অবস্থায় রাজধানীসহ সারা দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবী নারীদের মধ্যে নতুন করে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। মহিলারা এখন গণপরিবহনে উঠতেও ভয় পাচ্ছেন। এক ধরনের অজানা আতংক এবং নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে সর্বত্র। এ প্রসঙ্গে নারী নেত্রীরা প্রচ- ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পুলিশের উদাসীনতা ক্ষমার অযোগ্য। রাষ্ট্রও এর দায়িত্ব এড়াতে পারে না। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা এখনও সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হচ্ছেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নের সম্মুখীন করছে। সরকারকে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।

১১ মে রাতে রাজধানীর অদূরে সোনারগাঁর আড়াইহাজারে চলন্ত বাসে এক নারী শ্রমিককে বাস ড্রাইভার ও সহকারীসহ চারজন মিলে গণধর্ষণ করে। ১৩ মে ময়মনসিংহের চুরখাই এলাকায় বাসের চালক ও সহকারী মিলে এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। পরে মহাসড়কের পাশে থাকা লোকজন ওই তরুণীকে উদ্ধার করেন। তাঁরা বাসের চালক নুর উদ্দিনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

৩ মে আশুলিয়ার বাস কাউন্টারে ট্রাংক থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানায়, ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর ট্রাংকের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ১ মে চট্টগ্রামে ঈগল পরিবহনের বাস থেকে লাগেজ ভর্তি তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ, ১৯ এপ্রিল ঢাকা থেকে জামালপুরগামী ট্রেনে এক নারী যাত্রীকে ২-৩ বখাটে শারীরিক নির্যাতন করে। ২৫ এপ্রিল রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় এক গৃহবধূকে মাইক্রোবাসে নির্যাতন চালিয়ে ওই মাইক্রোবাসেই চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। ৩০ এপ্রিল দুপুরে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে চলন্ত শ্যালো নৌকায় দু’বোনকে হাত-পা বেঁধে গণধর্ষণ করে নৌকার মাঝিসহ একদল বখাটে। ২১ মার্চ বাগেরহাটের রামপাল এলাকায় চলন্ত নৌকায় গণধর্ষণ করা হয় এক গৃহবধূকে।

৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পরিত্যক্ত বগিতে এক তরুণীকে গণধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকু- এলাকায় চলন্ত প্রাইভেট কার থামিয়ে দুই তরুণীকে গণধর্ষণ করে ছিনতাইকারীরা।

২৩ জানুয়ারি গভীর রাতে বানারীপাড়ার চাখারের দুই তরুণী কুয়াকাটা থেকে বরিশালে বেড়াতে আসেন। বরিশাল থেকে বানারীপাড়া রুটের সেবা পরিবহন নামের একটি বাসে চাখারে যাওয়ার সময় তারা নির্যাতনের শিকার হন।

দুই তরুণীর যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পাঁচ শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

১ মার্চ গোপালগঞ্জ সদরের ভেন্নাবাড়ী এলাকায় এক মেয়েশিশুকে মাইক্রোবাসে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।

সর্বশেষ টাঙ্গাইলের মধুপুরে একটি বাসে এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চালক নয়ন ও তার দুই সহযোগী রেজাউল ও আব্দুল খালেক। শনিবার সকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

শুক্রবার ধনবাড়ী থেকে ঢাকাগামী ‘বিনিময় পরিবহনের’ একটি যাত্রীবাহী বাসে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ওই নারী গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী এক খালার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার সকালে গাজীপুরে ফেরার জন্য ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে টিকেট কেটে বিনিময় পরিবহনের বাসে ওঠেন। এ সময় বাসে অন্য কোনো যাত্রী ছিল না। শুধু তার স্ত্রীকে নিয়ে বাসটি রওনা হয়। এরপর বাসের সব জানালা-দরজা বন্ধ করে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়।

২০১৩ সালে ১৯ হাজার ৬০১টি নারী-মেয়েশিশু নির্যাতনের মামলা হলেও বিচার শেষ হয়নি একটিরও। এরই মধ্যে ২০১৪ সালে নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে আরও ২১ হাজার ২৯১টি। গত বছর ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ২ হাজার ৯৫১টি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বাধিক। কিন্তু এসব অভিযোগের একটিরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি।

বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে প্রায় ৫ হাজার নারী ও মেয়েশিশু নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এসব সহিংসতার মধ্যে রয়েছে, এডিস নিক্ষেপ, অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা, পাচার, খুন এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতন।

কিন্তু এসব নির্যাতনের অভিযোগের মধ্যে কতগুলোর বিচার হয়েছে তার কোনো প্রতিবেদন কখনোই প্রকাশ করা হয়নি। ফলে নারী নির্যাতনের ঘটনার অধিকাংশই থানায় নথিভুক্ত বা আদালতে মামলা হয় না। সে কারণে নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি, যা দ্বিগুণের মতো। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধী বিচারের ঊর্ধ্বে থেকে যায়, তাদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনা হয় না।


শেয়ার করুন