খালেদা দেশে নেই তাই বিএনপির ঈদ আনন্দে খরা

2015_09_16_18_13_32_UM3NeSpuNupw7oexBEt4nwJYEj8N8X_originalসিটিএন ডেস্ক :

চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে যাওয়ায় ঈদ আনন্দে খরা লেগেছে বিএনপিতে। বিশেষ করে এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।

অন্যান্য বার ঈদের সময় খালেদা জিয়া দেশে থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও এবার তিনি লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের কাছে অবস্থান করছেন। ফলে চেয়ারপারসনকে প্রতিবারের মতো ঈদের দিনটিতে কাছে পাচ্ছেন না বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এবারই প্রথম বারের মত খালেদা জিয়া ঈদ উদযাপন করছেন দেশের বাইয়ে লন্ডনে তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে।

বিএনপির একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া এবার ঈদের দিন দেশে না থাকার কারণে অনেকেই হতাশ। কারণ প্রিয় নেত্রীকে এবার ঈদে তারা কাছ থেকে দেখতে পারবেন না। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবে না। এছাড়া খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়েও অনেক নেতাই চিন্তিত।

নেতাদের চিন্তিত হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দলের সংস্কার নিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। ফলে অনেক নেতাই ভয়ে আছেন। এই আলোচনায় বহু নেতাকর্মী দল থেকে ছিটকে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। সেইসঙ্গে পদ-পদবী পরিবর্তনের পাশাপাশি অনেকেই দল থেকে বহিস্কৃত হতে পারেন বলেও আশঙ্কা কাজ করেছে। এছাড়াও রাজপথে সশরীরে আন্দোলন না থাকার কারণে অনেক নেতার উপর নেমে আসতে পারে শাস্তির খড়গ। আর এই কারণেই ঈদের আনন্দ ঠিক মত উপভোগ করতে পারছে না নেতাকর্মীরা।

এদিকে প্রতি বছর ঈদে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলের সিনিয়র নেতা, তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে খালেদা জিয়া ঈদ উদযাপন করলেও এবার এর ব্যত্যয় ঘটতে যাচ্ছে। ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে একদিকে দেখা দিয়েছে হতাশা আর অন্যদিকে ভয়। তবে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঈদ উদযাপন করার বিষয়ে অনেক নেতাকর্মী আবার খুশিও হয়েছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীদের ভাষ্য, আমরা (বিএনপির নেতাকর্মীরা) প্রতি বছরই ম্যাডামের (খালেদা জিয়া)সঙ্গে ঈদ উদযাপন করি। কিন্তু ম্যাডামের ছেলে (তারেক রহমান) গত ৮ বছর ধরে তার মার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারেনি। তাই ম্যাডামকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট আমরা মেনে নিয়েছে। মো-ছেলের আনন্দে আমরাও আনন্দিত।

গত ১৫ সেপ্টম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য গেছেন খালেদা জিয়া। তার ছেলের (তারেক রহমান) সঙ্গে ঈদ করেই তিনি দেশে ফিরবেন বলে ১৩ সেপ্টম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক, দলের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করা হলেও এবার সেটা হচ্ছে না বলে বাংলামেইলকে জানিয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন।

তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হবে না। তবে দলের পক্ষ থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। তিনি ঢাকাতেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন। বাংলামেইলকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ম্যাডাম দেশে নেই তাই ঈদ আমি ঢাকাতেই করবো এবং ঈদের দিনটি দলীয় নেতাকর্মী ও আত্মীয়-স্বজন সঙ্গে নিয়েই উদযাপন করবো।’

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমানও এবার ঈদ উৎসব উদযাপন করবেন ঢাকায়। মুঠোফোনে বাংলামেইলকে তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই এবার ঢাকাতে ঈদ উদযাপন কবরো। ম্যাডামকেও (খালেদা জিয়া) ঈদের শুভেচ্ছা জানাবো।

দলের পুনর্গঠনের বিষয়ে খালেদা-তারেকের মধ্যে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তারা পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা করবেন। কিন্ত এই বিষয় নিয়ে নেতাকর্মীদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমার মনে হয়, দল থেকে কেউ ছিঁটকে পড়বেন না। তবে বিগত আন্দোলনে রাজপথে যারা সক্রিয় ছিলো তাদের অগ্রধিকার দেয়া হবে।’

প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকায় ঈদ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার হায়দার আলী। খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে ঈদ করা প্রসঙ্গে তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘ঈদের দিন ম্যাডাম ঢাকায় থাকলে নেতাকর্মীদের জন্য ভালো হত। তবে বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারকে রহমানকেও পাশে পাওয়া দল ও ম্যাডামের জন্য অনেক বড় একটি বিষয়। কারণ এই সুযোগে তারা দলের পূনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা করতে পারবেন।’

দল পূনর্গঠনে জন্য খালেদা-তারকের মধ্যে কি ধরনের আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলকে কিভাবে আরো বেশী শক্তিশালী করা যায়, দলকে শক্তিশালী করতে কাউকে দলে নিতে হবে আবার কাউকে বাদও দিতে হবে। এই বিষয়েগুলো নিয়েই মূলত আলোচনা হবে তাদের মধ্যে। তবে সবাই দল থেকে বাদ যাবেন না।’

বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবার ঈদ উদযাপন করবেন নিজ গ্রাম রবিশালে। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘ম্যাডাম এবারের ঈদ ঢাকাতে করবেন না। তাই এবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ভাই ও বোনদের সঙ্গে ঈদ করবো।’

খালেদা জিয়াকে ছাড়া এবারের ঈদ উদযাপন কেমন হবে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ম্যাডামকে ছাড়া এবারের ঈদ হতাশায় পরিণত হবে এবং ঈদ আনন্দদায়কও হবে না।’

অপরদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী ২২ সেপ্টম্বর দেশে ফিরবেন বলে বাংলামেইলকে জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান। তবে মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার কথা জানতে চাইলে তার ব্যক্তিগত সহকারি ইউনুস বাংলামেইলকে বলেন, ‘স্যারের (মির্জা ফখরুল) দেশে ফেরার কথাটি এখন পর্যন্ত আমি অবগত নই।’

তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী মঙ্গলবার দেশে ফিরলে তিনি ঢাকাতেই ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।


শেয়ার করুন