খালেদার পরবর্তী গন্তব্য অনিশ্চিত

ডেস্ক রিপোর্ট : আদালত থেকে বের হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোথায় যাবেন, তা এখনো অনিশ্চিত। আদালত জামিন দিলে গুলশানের নিজ বাসভবনে ফিরে যাওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত থাকলেও সরকারের আচরণ ও পরিস্থিতির ওপর তা নির্ভর করবে বলে বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
গত ৩ জানুয়ারি থেকেই নিজের গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা করে কার্যালয়ে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। প্রথমদিকে কার্যালয় পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখলেও গত ১৯ জানুয়ারি প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু বিএনপিনেত্রী কার্যালয় থেকে বের হননি। এর মধ্যে মামলায় কয়েক দফা হাজিরার তারিখ পড়লেও আদালতে যাননি তিনি। এই প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। আজ আদালতে গেলে এটা হবে দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময় পর তার ওই কার্যালয় থেকে বেরোনোর ঘটনা।
বিএনপির সূত্রমতে, আদালতে গেলে জামিন পাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সেক্ষেত্রে আদালত থেকে বের হয়ে গুলশান কার্যালয়ে না ফেরার সম্ভাবনাই বেশি। আদালত থেকে সরাসরি গুলশানের বাসায় গেলে কী লাভ-ক্ষতি হতে পারে, তার হিসাব করেছেন দলের নেতারা। তবে এখন গুলশান কার্যালয়ে ফিরে গিয়ে আন্দোলনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক কিছু অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তারা। এজন্য গুলশানের বাসভবনেই ফিরে যেতে পারেন তিনি। এ ক্ষেত্রে আদালত থেকে বের হয়ে স্বল্প সময়ের জন্য দলের নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে পারেন।
গত তিন মাসে আন্দোলন সফল না করে খালেদা জিয়ার ঘরে ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা দলের পক্ষ থেকে দফায় দফায় জানানো হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল আদালত থেকে বাসায় ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নেতাকর্মীরা জানতে পারলে দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘ তিন মাসের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের এত ত্যাগের পর হুট করে এই সিদ্ধান্ত হওয়ায় অনেকেই ক্ষুব্ধ। সঙ্গত কারণে সিনিয়র নেতারা আন্দোলনের কৌশল হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বিক্ষুব্ধদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। নেতারা বলছেন, দীর্ঘ তিন মাসের আন্দোলনের এই পর্যায়ে সফলতা পেতে নতুন কৌশলে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে এই মুহূর্তে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরেই শুরু করা হবে আন্দোলনের নতুন কৌশল। বিএনপির সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে অধিকাংশ নেতাকর্মী মামলার কারণে আত্মগোপনে থাকায় এবার নিজেই নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারেন বিএনপিপ্রধান। উদ্দেশ্য দুটিথ এক. নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করা, দুই. জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনের মাঠ প্রস্তুত করা।
এদিকে, খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করা নেতা-নেত্রী ও স্টাফদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও কাজ করছে। নেত্রীর বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তল্লাশি কিংবা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে গ্রেপ্তারসহ নানা রকম ভাবনার মধ্যে পড়েছেন তারা। কারণ, কার্যালয়ে যেসব নেতাকর্মী রয়েছেন, তাদের প্রায় সবার নামেই একাধিক মামলা রয়েছে।
সেখানে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতে যাবেন কিনা, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অনেকে বলছেন, ম্যাডামের সঙ্গে বের হয়ে যাবেন। কেউ বলছেন, কার্যালয়ে থাকবেন। যখন প্রয়োজন হবে, তখন যাবেন। আবার কেউ কেউ গ্রেপ্তার আতঙ্কেও রয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতে যাবেন কিনা, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারণ, চলমান পরিস্থিতিকে সরকার এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে পারেনি। এছাড়া ম্যাডামের নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে।
খালেদা জিয়া আদালতে গেলে চলমান আন্দোলন কর্মসূচির কী হবেথ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবরোধের কর্মসূচি তো চলারই কথা। এছাড়া আদালতের সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের আন্দোলনের কৌশল ঠিক করা হবে।
আদালত থেকে ফিরে বিএনপি চেয়ারপারসন কোথায় যাবেন জানতে চাওয়া হলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এটা আদালতের সিদ্ধান্ত ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যেসব নেতাকর্মী অবস্থান করছেন, তারা কোনো ধরনের আতঙ্কে আছেন কিনাথ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের যে আচরণ, তাতে আতঙ্কে তো আছেই। অতীতে তারা বিরোধী দলের ওপর গুলি থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্যাতন করেছে। তাদের দ্বারা সবকিছু সম্ভব।
খালেদা জিয়া আদালতে গেলে তিনি গুলশান কার্যালয় থেকে বের হবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বের হবেন না; পরে বের হবেন।
একই বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, তারা ম্যাডামের কার্যালয়ে থাকবেন, নাকি চলে যাবেন, সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। আর খালেদা জিয়াও তাদের কিছু জানাননি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, তিনি যথারীতি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আদালতে যাবেন। এখানে থাকার প্রশ্নই আসে না। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন এখানে থাকা না থাকার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকেই গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবস্থান করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল এবং প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন “িার ও শায়রুল কবির খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। খালেদা জিয়াকে সহায়তা করার জন্য তার গৃহকর্মী কুলসুম রয়েছেন প্রথম দিন থেকেই। এরপর ১৭ ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা পর্যবেক্ষণে সফররত ইইউ প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রবেশ করেন কার্যালয়ে। এরপর থেকে তিনিও সেখানেই অবস্থান করছেন। যায়যায়দিন


শেয়ার করুন