অবিভক্ত বাংলার জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন মন্ত্রী

খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ : 

তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলার  এমএলএ খান বাহাদুর জালাল আহমদ চৌধুরী যে সময় জন্ম সে সময় অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশের দোর্দণ্ড প্রতাপ। ভারতে তখন তাদের সোয়াশত বৎসরেরও অধিক শাসনকাল অতিবাহিত। ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে সুদীর্ঘ কয়েক শতাব্দী এক নাগাড়ে ভারতের শাসক ছিল মুসলিম জাতি। কিন্তু বাংলার মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর মীর জাফরগীরির কারণে ব্রিটিশের হাতে তারা দীর্ঘকালীন এ শাসনভার হারিয়ে সুযোগ-সুবিধা থেকে দূরে সরে পড়ে। ব্রিটিশ শাসনের গোড়া থেকেই তারা নিজেদেরকে বৃটিশের সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি।

১৯৪৭ সনে ভারত উপ-মহাদেশ থেকে ব্রিটিশের বিদায় ও ভারত-বিভক্তির ৬৫ বৎসর আগে ১৮৮১ সালে জন্মগ্রহণকারী খান বাহাদুর জালাল আহমদ চৌধুরী তাঁর কর্মজীবনের মূল্যবান সময়  প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করেই কাটিয়েছেন। এ সময় দেশের বিশেষতঃ অনুন্নত ও অনগ্রসর বৃহত্তর চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নতি এবং এলাকাবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন কাজে তাঁকে বিবিধ অন্তরায়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

বাংলার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিকাশে যে কয়েকজন বাঙালি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম চকরিয়ার খান বাহাদুর জালাল আহমদ চৌধুরী।হার্মাদের কেল্লা নামে খ্যাত  হারবাং গ্রামে কোনো ভালো স্কুল না থাকায়  সেরেস্তার বাবা সোয়াজান  চৌধুরীর কর্মস্থল চট্টগ্রামে লেখাপড়া শুরু করেন। সোয়াজান চৌধুরী চট্টগ্রাম আদালতের সেরেস্তার  হওয়ার আগে  কক্সবাজার মহকুমা আদালতে সেরেস্তার ছিলেন। ওই সময় তিনি কক্সবাজারের জমি কিনে বাসা তৈরি করেছিলেন।   যেটা কক্সবাজার শহরের ঝাউতলাস্থ জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর বাংলো নামে পরিচিত  ছিলেন এক  সময়। পরে তৎকালীন টাউন হল ময়দানে (প্রাক্তন ইপিআর ফিল্ড ও বর্তমানে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ ও ডিজিএফ কক্সবাজারের অফিস) নামে পরিচিত হন। অল্প বয়সে জালাল উদ্দিন  আহমদ চৌধুরী মাতাকে হারান। পিতার চাকুরীর সুবাদে চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠেন তিনি এবং ওই খান থেকে ম্যট্রিক পাশ  করেন। ১৯০৩ সালে হাই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন  কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে।কলকাতা শিক্ষা বোর্ড এর আওতায় সেন্ট  জেভিয়ার্স  কলেজ থেকে সাফল্যের

১৯০ ৫ সালে  এফ  এ পাশ করেন। এফ এ পাশের পর উচ্চ  শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ওখান থেকে ১৯০৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ এবং ১৯১০ সালে বিএল  পাশ  করেন। শিক্ষার মাধ্যম ছিল উর্দু। সমগ্র কক্সবাজার এলাকার দ্বিতীয় গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী (প্রথম ছিলেন বরইতলীর গোলাম কাদের ডেপুটি)।

শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে কিছুদিনের জন্য পটিয়ায় এক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরে চট্টগ্রাম জজ আদালত ও ঢাকা হাইকোর্টে আইন-ব্যবসায় অল্প দিনের মধ্যে সুনাম অর্জন করেন। তিনি প্রায় জটিল মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আদালতের রায় তার পক্ষে নিতে সক্ষম ছিলেন বিধায় তার সুনাম ও যশ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তিনি চট্টগ্রাম আাদালতের থেকে হাই কোর্ট এবং কলকাতা আদালতেও ওকালতি করেন। সেখানে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। আইন পেশার পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে  সমাজ  সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকার মুসলমান সমাজে ইংরেজী শিক্ষা প্রচলনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালান। চট্টগ্রামের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ খানবাহাদুর আবদুল  আজিজ বি-এ সাহেবের সঙ্গে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন, এবং ওই সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ওই প্রচেষ্টায় তারা সফলও হয়েছিলেন।তাদের প ্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম েজেলায় শিক্ষা বিস্তার লাভ করে এবং তারা শিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহ সৃষ্টি না করলে চট্টগ্রাম সহ কক্সবাজার অনেক পিছিয়ে থাকতো বলে মনে করেন অনেকেই।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম-প্রবাসী কক্সবাজারবাসীদের কল্যাণে ১৯৩৭ সালে কক্সবাজার সমিতি চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন বহু বছর এ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং প্রাদেশিক সড়ক  বোর্ডের সদস্য ছিলেন। প্রাদেশিক সড়ক  বোর্ডের সদস্য থাকাকালে আরাকান সড়ক নির্মাণ করতে কর্তৃপক্ষকে রাজী করান এবং আরাকান সড়ক সংস্কার ও চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়ার আধুনগর পর্যন্ত সড়ক সংস্কার করা হয় তারই তত্বাবধানে।পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে  লোহাগাড়ার আধুনগর পর্যন্ত মোটরগাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করেন তিনি। সমজ হিতৈষী এবং জনহিতকর কাজ করায় এসময়েই ব্রিটিশ সরকার তাঁকে খান বাহাদুর উপাধি দেন। পরে তিনি রাজনীতির প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠেন । এ সময় ভারত উপমহাদেশে সর্বত্র এক আওয়াজ ‘ভারতবর্ষের স্বাধীনতা’।

ইংরেজ সরকারের যুদ্ধের বিপক্ষে ভারতবর্ষের সবাই একমত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশরা কথা দিয়েছিল যুদ্ধে তাদের সহযোগিতা করলে যুদ্ধের পর তারা এ দেশ ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু যুদ্ধের পর ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া দূরের কথা উল্টো তিল পরিমাণ লজ্জিত না হয়ে সমগ্র এশিয়ায় বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের ঔপনিবেশিক শোষণ চাপিয়ে দেয়। যার ফলে তখনকার মুসলিম ও হিন্দু নেতৃবৃন্দ যুদ্ধের বিপক্ষেই মত দিতে লাগলেন। আরো দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়ায় উদ্দেশ্যে সূদুর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে বৃটিশরা বৃটিশ এ নীতির বিরুদ্ধে তথা যুদ্ধের বিপক্ষে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী (১৮৮১-১৯৫৭) ও স্বাধীনতা সংগ্রামী পীর নুর আহমদ, মহিম চন্দ্র দাশ, আবদুল মজিদ সিকদারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি প্রদান করে। ইংরেজ সরকার বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মুসলিম ও হিন্দু নেতাদেরকে বশ আনার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু দেশপ্রেমিক খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী তার সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন। তৎপর চট্টগ্রামের তৎকালিন ব্রিটিশ জেলা প্রশাসক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এক বৈঠকের আহ্বান করেন। ওই সময় খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী অসুস্থ ছিলেন। তাকে  স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া জেলা প্রশাসকের অফিসে। তিনি প্রশাসক এর প্রস্তাব নাকচ করে ঘোর বিরোধিতা করেন এবং চরম বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ক্ষিপ্ত হয়ে জালাল উদ্দিন আহমদকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে বলেন, ‘জানেন, আপনাকে আমি এখন কারাগারে পাঠাতে পারি।’ এ সময় অসম সাহসী, দেশদরদী অসুস্থ জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনপূর্বক রক্ত চক্ষু রাঙিয়ে বাঘের মতো গর্জে উঠে জেলা প্রশাসকের উদ্ব্যতপূর্ণ আচরণের জবাব দেন এভাবে, ‘মনে রাখবেন, আপনি যদি আমাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠান তবে জেল হাজত থেকেই আমি আপনাকে ভারত উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করব।

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে ভোটাধিকার ও আইন সভার সদস্য সংখ্যার যথেষ্ট বৃদ্ধি এবং স্বায়ত্বশাসন প্রবর্তন প্রাদেশিক পর্যায়ে সরকার গঠনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৯৩৭ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রাদেশিক ও বঙ্গীয় বিধান সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাংলায় মুসলমানদের জন্য ১১৭টি আসনে এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক প্রজা পার্টি এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ নির্বাচনে কক্সবাজার ও বাঁশখালী আসন থেকে চকরিয়ার খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ‘কৃষক প্রজা পার্টি’ (কেপিপি) থেকে এবং সাংবাদিক-সাহিত্যিক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী মুসলিম লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

১৯৩৭ সালের শুরুতে এ কে ফজলুল হক কক্সবাজারে খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর জনসভায় বক্তব্য রাখেন। কক্সবাজার শহরের ঝাউতলাস্থ জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর বাংলোতে বিশ্রামের পর বিকেলে তৎকালীন টাউন হল ময়দানে (প্রাক্তন ইপিআর ফিল্ড ও বর্তমানে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ ও ডিজিএফ কক্সবাজারের অফিস) নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন এ কে ফজলুল হক। ওই নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী  মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকীকে ৩৪৫২ ভোটে হারিয়ে খান বাহাদুর জালাল আহমদ চৌধুরী জয় লাভ করেন। জালাল আহমদ চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোটের পরিমারণ ২৫৯৮৭ ভোট। ওই নির্বাচনে এ কে ফজলুল হকের দল ‘কৃষক প্রজা পার্টি’ (কেপিপি)ও বিশাল ব্যবধানে জয়ী হন। ‘কৃষক প্রজা পার্টি’ (কেপিপি) সংখ্যাগরিষ্ট অর্জন করতে না পারায় প্রথমে কংগ্রেসের সাথে মন্ত্রীসভা গঠনের ইচ্ছে প্রকাশ করলেও অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস এর বিরোধিতার কারণে মুসলিম লীগের সাথে কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠনে বাধ্য হয়। কিন্তু ১৯৩৭ সালের ১৫ অক্টোবর এ কে ফজলুল হক মুসলিম লীগে যোগদান করলে ‘কৃষক প্রজা পার্টি’ (কেপিপি) এর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে । যদিও ফজলুল হক অফিসিয়ালি কৃষক প্রজা পার্টি বিলুপ্ত ঘোষণা করেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪১ সালের ২১ জুলাই ভাইসরয় ন্যাশনাল ডিফেন্স কাউন্সিল (জাতীয় প্রতিরক্ষা কাউন্সিল)-এ যোগদান এবং সরকারি যুদ্ধ প্রচেষ্টার সঙ্গে সহেযাগিতা দান প্রশ্নে জিন্নাহর সঙ্গে ফজলুল হকের মধ্যে মতবিরোধ এবং মুসলিম লীগের পার্লামেন্টিয়ান সদস্যদের বিরোধিতার মুখে একই বছরের ১ ডিসেম্বর ফজলুল হকের প্রথম মন্ত্রীসভার পতন ঘটে।

পরে একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর গঠিত দ্বিতীয় মন্ত্রীসভা তথা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সাথে শ্যামা-হক মন্ত্রীসভা মুসলিম লীগের অনবরত বিরোধিতার মুখে ১৯৪৩ সালের ২৮ মার্চ ফজলুল হকের পদত্যাগের মাধ্যমে দ্বিতীয় মন্ত্রীসভারও পতন ঘটে।

ফজলুল হকের দ্বিতীয় মন্ত্রীসভা পতনের পর বাংলার গর্ভনর স্যার জন হাবার্ট ‘ জাতীয় সরকার’ গঠনের কথা বলে ফজলুল হককে পদত্যাগে বাধ্য করে। সর্বদলীয় মন্ত্রী সভা গঠনের ধারণা দেওয়া হলেও কিছুদিনের মধ্যে মুসলিম লীগের নেতা খাজা নাজিমুদ্দীনকে মন্ত্রীসভা গঠনের আহ্বান জানানো হয় এবং ১৯৪৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি ১৩ সদস্য বিশিষ্ট এক মন্ত্রীসভা গঠন করেন। এই মন্ত্রীসভায় কৃষক প্রজা পার্টি মনোনীত কক্সবাজার আসনে নির্বাচিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীকে (ফজলুল হক মুসলিম লীগে যোগদান করায় অন্যান্য বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এর মতো তিনিও মুসলিম লীগার হয়ে যান এবং শ্যামা-হক মন্ত্রী সভা গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে তুমৃল সমালোচনা করে খাজা নাজিম উদ্দিনের পক্ষালম্বন করেন) জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রথম মন্ত্রী। উল্লেখ্য, ১৯৪৩-৪৫ সালের সেই সময়ে অবিভক্ত বাংলার গভর্নর ছিলেন অনারেবল রিচার্ড গার্ডিনার কেউজী এবং প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার ছিলেন যথাক্রমে সৈয়দ নওশের আলী ও সৈয়দ জালালুদ্দিন হাশেমী। খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ (জনস্বাস্থ্য ও স্বায়ত্বশাসন) ছাড়া মন্ত্রী পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যবর্গের মধ্যে ছিলেন খাজা স্যার নাজিমুদ্দিন (স্বরাষ্ট্র), এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দ্দী (সিভিল সাপ্লাই), তুলসীচন্দ্র গোস্বামী (অর্থ), মৌলভী তমিজ উদ্দিন খান (শিক্ষা), খান বাহাদুর সৈয়দ মোয়াজ্জেমুদ্দিন হোসাইন (কৃষি), তারকনাথ মুখার্জী (রাজস্ব) প্রমুখ।

খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর  আমলেই বাংলা প্রদেশের(বর্তমান বাংলাদেশ) সমস্ত থানা হাসপাতালে রোগীদের জন্য কমপক্ষে চার থেকে ৮টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়। ওই মন্ত্রীসভাকে বেশ কয়েকটি সমস্যাকে মোকাবেলা করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, অন্যটি সরকারের বিরোধিতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান বাহিনী বার্মা (মিয়ানমার) দখল করে চট্টগ্রাম উপকূলে এসে পৌঁছলে ব্রিটিশ সরকার বাংলার পতন অত্যাসন্ন ভেবে জাপানকে ঘায়েল করার জন্য নৌ- যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল করে দেয় (যা উবহধরষ ঢ়ড়ষরপু নামে অভিহিত)। খাদ্য ভান্ডার অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুতদারের ফলে ১৯৪৩ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এ সময় বেসামরিক সরবরাহ মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলকাতায়, জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিষয়ক মন্ত্রী খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে লঙ্গরখানা ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেন। অনেকটা সফলও হয় তিনি ।এ সময়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের পক্ষে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য খান বাহাদুর মোহাম্মদ আলী সে প্রশ্নটির জবাবে থানাওয়ারী একটি তালিকা পেশ করেন। তাতে সাতকানিয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ইত্যাদি থানাগুলোতে মৃতের সংখ্যা ’NIL’ বলে দেখানো হয়। অধিবেশনে উপস্থিত চট্টগ্রাম প্রতিনিধি খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে খান বাহাদুর জালাল আহমদ চৌধুরীও সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারি হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকি তুলে ধরে বলেন, যেখানে কোন রেল লাইনই আদৌ নেই, সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ’NIL’-এর ব্যাপার আসে কিভাবে?

১৯৪৫ সালের ২৮ মার্চ বাজেট বরাদ্দের সময় ২০ জন সরকার সমর্থক সদস্য বিরোধী দলে যোগ দিলে ১০৬-৯৭ ভোটে খাজা নাজিম্দ্দুীন মন্ত্রী সভার পতন ঘটে।

খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী অত্যন্ত পরিশ্রমী, করিৎকর্মা এবং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে সব সময় জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত  ব্যস্ত ছিলেন। জীবনের শেষ  সময়ে তিনি উপমহাদেশের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর শীর্ষত্ব গ্রহণ করে ধর্ম-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন এবং জীবন  কাটিয়ে দেন।

আজীবন  মানুষের আদাযে ব্যতিব্যস্ত খান বাহাদুর জালাল আহমদ চৌধুরী ১৯৫৭ সালে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর  অনেক পরে পাকিস্তান সরকারের আমলে হারবাং এলাকায় কে বি জালাল উদ্দিন সড়ক  নামকরণ করেন।


শেয়ার করুন