কয়েকটা লোক ইসলামকে হেয় করতে পারে না

fileইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা চাল‍ানোর নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামান্য কয়েকটা লোক ইসলামকে হেয় করতে পারে না।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক ওলামা সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে মানবিক ও উদার, শান্তি-সৌহার্দ্য ও সহনশীলতার ধর্ম ইসলাম। সবচেয়ে দুঃখ লাগে যখন সামান্য কিছু লোক ধর্মের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে। আমাদের পবিত্র ধর্মকে হেয় করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যখন কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাই, কেউ ইসলামিস্ট টেরোরিস্ট বললে আমি সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ করি। সন্ত্রাসী কোনো ধর্মের হতে পারে না। কিন্তু ভাবতে আমার নিজেরও কষ্ট লাগে। সামান্য কয়েকটা লোক কোথায় নিয়ে গেল আমাদের শান্তির ধর্মকে।

‘যারা সন্ত্রাস করে, মানুষ হত্যা করে তারা আদৌ কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে কিনা সেটা দেখা দরকার।’

পবিত্র কোরানের একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করলে সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করলো। আর কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে রক্ষা, করে সে যেন গোটা মানবজাতিকে রক্ষা করলো।

আরেকটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষ হত্যাকারী ও দুর্যোগ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।

সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কোরআন, হাদিস, ইসলামের পবিত্র বাণী মানবে না, নামাজ না পড়ে মানুষ খুন করতে যায়, তারা কী করে বেহেশতে যাবে। তারা কী করে ভাবে, তারা মানুষ খুন করে বেহেশতে যাবে।

ইসলামের মহান বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আলেম সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশের মানুষের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটা চেতনা সৃষ্টি হয়েছে। এ চেতনাকে আরও শাণিত করতে হবে।

তিনি বলেন, মানুষকে আরও ভালোভাবে বোঝাতে হবে জঙ্গিবাদের পথ ইসলামের পথ নয়। কেউ যেন সন্ত্রাসের পথে না যায়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। কিন্তু এখানে সুন্দর বিষয় হলো এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন, সহযোগিতা করেন। এটা এদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন। এবারও ঈদের জামাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পাহারা দিয়েছে যেন নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারে। আবার মুসলমান ভাইয়েরা এভাবে হিন্দুরা যেন পূজা-অর্চনা করতে পারে নির্বিঘ্নে সে ব্যবস্থা করে। এভাবে সবাই সবাইকে সহযোগিতা করেন। এটা আমাদের ইসলাম ধর্মই শিক্ষা দিয়েছে। অপরকে সহযোগিতা করা, অপরের প্রতি সহনশীল হওয়া।

সম্মেলনে আলেম সমাজের পক্ষ থেকে কওমী মাদ্রাসা সনদ দেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়নের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সনদ দিতে হলে ন্যূনতম একটা কারিকুলাম দরকার। আমরা কওমী মাদ্রাসা কমিশন গঠন করে দিয়েছি। কিন্তু কওমী মাদ্রাসার পাঁচটি বোর্ড একমত হতে পারেনি।

সবাইকে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সবাই একমত হোন অথবা যারা আগ্রহী তারা একমত হোন, আমরা বাস্তবায়ন শুরু করে দেবো।

সারাদেশে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ৫৬০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, লাখো শহীদ, জাতীয় চার নেতা এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শহীদ হওয়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আগস্টে বারবার আঘাত এসেছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে, যিনি এ দেশের বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই হত্যাকাণ্ডের ক’দিন আগে স্বামীর কর্মস্থলে চলে গিয়েছিলাম বলে আমরা দু’বোন রক্ষা পেয়ে যাই। মানুষ এতো শোক সইতে পারে না, আল্লাহ আমাদের সে শোক সইবার শক্তি দিয়েছেন।

‘বারবার আঘাত এসেছে। এই আগস্ট মাসেই হামলা করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। পরপর ১৩টি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল আমার ওপরে। নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে বলে আমি রক্ষা পেয়ে যাই। আল্লাহর ইশারা ছিল বলেই রক্ষা পেয়েছি। সরাসরি গুলি করা হয়েছে। আমাদের কোটালিপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। একজন চা দোকানের সাধারণ মানুষ সেটা উদ্ধার করেছেন। সে যাত্রায়ও বেঁচে যাই। এটাও আল্লাহর ইশারা ছাড়া সম্ভব নয়।’

‘সেজন্য মনে করি, আল্লাহ কিছু কাজ দেন, সে কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহই তাকে রক্ষা করেন। এই বিশ্বাস নিয়েই আমি যতো বাধা আসুক নির্বিঘ্নে কাজ করার চেষ্টা করি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার সভাপতি ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়া সংগ্রহ কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ।

দেশে আইএসের অস্তিত্ব নিয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত খুজেঁ বেড়াচ্ছি কোথাও আইএস খুঁজে পাইনি।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের নিন্দা জানিয়ে মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ বলেন, ইসলাম উদারতা ও সহনশীলতার ধর্ম। কিছু সংখ্যক মতলববাজ ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

ইসলামে অনর্থক গাছের পাতাও ছেঁড়া নিষেধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা মনে করে মানুষ হত্যা করে বেহেশতে চলে যাবে, তারা আসলে জাহান্নামে যাবে। যারা মানুষ হত্যা করে, আত্মহত্যা করে তারা উভয়ই জাহান্নামে যাবে।

১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফরিদউদ্দীন মাসউদ বলেন, ইতিহাসে কারবালার ঘটনার পর এতো নিষ্ঠুর ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই।

অনুষ্ঠানে ১ লাখেরও অধিক আলেম স্বাক্ষরিত ৩০ খণ্ডের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ইসলামের শান্তির বাণী নিয়ে রচিত ফতোয়া প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়। প্রতীকী হিসেবে প্রথম খণ্ড প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ।


শেয়ার করুন