ক্রিকেট নিয়ে অনিশ্চয়তা

94491_s1সিটিএন ডেস্ক:
মঙগলবার সারা দিন বিসিবিতে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করে দেশের সব সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। উৎকণ্ঠা ও হতাশা দেখা গেছে বিসিবি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝেও। বিশেষ করে গুলশানে ইতালীয় নাগরিকের হত্যাকা-ের সঙ্গে আইএসের নাম জড়ানোর পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এ সফর বাতিল হতে পারে বলে শিরোনাম হয়। নিউজ অস্ট্রেলিয়ার সংবাদে আসে, ‘বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ বাতিলের প্রক্রিয়ায় আছে।’ অস্ট্রেলিয়ার ফক্স নিউজ এ সফর হচ্ছে না বলে শিরোনাম করেছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্বশীল কেউ এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করলেও শেষ পর্যন্ত সিরিজ বাতিল হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা।
মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল ফটক দিয়ে বের হচ্ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সহকারী কোচ সোহেল ইসলাম। চোখেমুখে হতাশার ছায়া। বললেন, ‘কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। অস্ট্রেলিয়া যদি না আসে তাহলে অন্যান্য ক্রিকেটের উপরও প্রভাব পড়বে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও সামনে। সেখানেও যদি এর প্রভাব পড়ে তাহলে কি হবে!’ এমন হতাশা ও নানা রকম ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের কথা বিসিবি’র অনেকের মুখেই। গতকাল সারাদিন মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কার্যালয়ে সাংবাদিক সহ বিসিবি’র কর্মকর্তাদের মাঝে ছিল উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরে না আসলে কি হবে? এই প্রশ্ন মুখে মুখে। এই আশঙ্কা সত্যি হলে এর প্রভাব যে শুধু জাতীয় দলের উপরই পড়বে তা নয়। সামনে বাংলাদেশে প্রায় সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজ ও টুর্নামেন্টের উপরও এর প্রভাব পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টা যে শুধু অস্ট্রেলিয়া আসবে না তা নয়। এটি হলে বাংলাদেশে ক্রিকেটের ওপর খুবই বাজে প্রভাব পড়বে। সামনে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, এমনকি প্রস্তাব পেলে এশিয়া কাপ হওয়ারও কথা রয়েছে। সেখানে অন্যান্য দেশগুলোও নিরাপত্তার বিষয়টি অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।’
পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে উড়ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। অপেক্ষা ছিল অস্ট্রেলিয়ার আগমনের। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজকে অন্যতম সুযোগ হিসেবে দেখছিলেন। প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে ইতিহাস বদলে যাওয়ার বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এক মুহূর্তে যেন এলোমেলো সব স্বপ্ন। নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আসা আটকে যায়। এরই মধ্যে গতকাল ভোরে অস্ট্রেলীয় নিরাপত্তা পরিদর্শক দলের সদস্যরা ফিরে গেছেন নিজ দেশে। এখনও জানা যায়নি অজিরা এই দেশে ক্রিকেট খেলতে আসবে কি আসবে না। যদিও সোমবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস ছিল, অজিদের আগমনের। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় গুলশানে এক ইতালীয় নাগরিকের মৃত্যুতে ধীরে ধীরে শঙ্কা আরও বাড়তে শুরু করে। জানা গেছে, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান শন ক্যারল দেশে ফিরে বোর্ড ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে খেলতে আসার বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন ক্রিকেট বোর্ডের সামনে। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে এই সফর নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য করেনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কোন কর্তাব্যক্তি।
২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া দলের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল সোমবার। কিন্তু এর আগেই শনিবার অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের বাংলাদেশ সহ শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানে নিরাপদে চলাচলের জন্য একটি সতর্কবার্তা জারি করে সেই দেশের সরকার। এরপরই বাংলাদেশে অজি ক্রিকেট দলের আসার সময়সূচি পিছিয়ে যায়।
রোববার সকালেই বাংলাদেশ সফরে আসে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার একটি নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল। দুইদিন বাংলাদেশে অবস্থান করে নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গেও কথা বলেন। মন্ত্রীর পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে ভিভিআইপি নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয় প্রতিনিধি দলকে। কিন্তু প্রতিনিধি দল এই সফরকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখেই চলে যায় দেশে। অবশ্য এর আগে বিসিবি’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেছিল নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ থাকতে থাকতে চলে আসবে অজি ক্রিকেটাররা। তবে সেটি না হওয়াতে এই সফর নিয়েই নয় বাংলাদেশের আসন্ন সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজ ও টুর্নামেন্ট নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে শঙ্কা। মানবজমিন


শেয়ার করুন