কৌশলে জামায়াত-শিবিরে টানা হচ্ছে কওমি শিক্ষার্থীদের

আমাদের সময়.কম:coumi-400x225 অস্থিত্ব ধরে রাখতে ও নতুনভাবে আন্দোলন চাঙ্গা করতে ইসলামি দলগুলোর দিকে ঝুকছেন জামায়াত-শিবিরের নেতারা। ইসলামি কওমি সমর্থিত দলগুলো শক্তিশালী হওয়ায় চার কৌশলে জামায়াত-শিবিরে যুক্ত করা হচ্ছে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। নিজেদের পুরনো আদর্শের পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক দল হিসেবে জামায়াতের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন একাডেমি স্বীকৃতিহীন এসব শিক্ষার্থীরা। কওমি মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থী এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
সূত্র মতে, গত এক দশকে কওমি মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবিরের গোপন তৎপরতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী এই দলটির নিবন্ধন সম্প্রতি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াধীন হওয়ায় কাওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। বর্তমানে এসব শিক্ষার্থীদের চার কৌশলে জামায়াত-শিবিরে টানা হচ্ছে। কৌশলগুলো হলো- দল ভারি, বুদ্ধিবৃত্তিক, শিক্ষাপ্রকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রলোভন। এছাড়া জামায়াতের পরোক্ষ ইন্ধনেই মূলত কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি অনুদান গ্রহণের বিষয়টি এড়িয়ে চল‌‌‌ছে বলে জানায় সূত্রটি।
জানা যায়, কওমি মাদ্রাসার আলেমদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলামসহ বেশ কয়েকটি ইসলামি দল ও সংগঠন। এসব দল-সংগঠন কওমি মাদ্রাসার ছাত্রনির্ভর। তবে রাজনৈতিকভাবে কওমিভিত্তিক দলগুলোয় জামায়াতের প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে গত দুই দশকের কিছু বেশি সময় আগে। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে দীর্ঘদিন জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ থাকায় দলটির অনেকেই এরইমধ্যে ভিড়েছেন কওমি নির্ভর দলগুলোয়।
১৯৭৯ সালের এপ্রিলে সংবিধান সংশোধন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ সৃষ্টি হলে ওই বছরের মে মাস থেকে জামায়াত রাজনীতির অঙ্গনে সক্রিয় হয়। তখন থেকেই কেউ-কেউ ফের জামায়াতে ফিরে আসেন। এরইমধ্যে অন্যতম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এই জামায়াত নেতা তখন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনে যোগ দেন। জামায়াতের রুকন এম এ মতিন ছিলেন খেলাফত মজলিসে। বছর ছয়েক আগে মজলিসে ভাঙন শুরু হলে ফের জামায়াতের আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে প্রথম জামায়াত নেতা পরিচয় নিয়ে খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন অধ্যাপক আখতার ফারুক। কিছুদিন পর খেলাফত আন্দোলন ছেড়ে চলে যান খেলাফত মজলিসে। ওই দলে অনেকটা তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন নিজেকে। ৯০ সালের গোড়ার দিকে ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি আহমদ আবদুল কাদের যুক্ত হন খেলাফত মজলিসে। বর্তমানে তিনি খেলাফত মজলিসের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে যারা জামায়াত থেকে বের হয়ে কওমি-ভিত্তিক দলগুলোয় যোগ দেন, তাদের বেশিরভাগই নিজেদের তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
উল্লেখ্য, জামায়াত-কওমির আদর্শিক দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। ইংরেজ শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রতিহতের উদ্দেশ্যে ১৮৬৬ সালের দিকে মাওলানা কাসেম নানুতবীর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তখন ওই মাদ্রাসার আলেমদের সমন্বয়ে ইংরেজবিরোধী শক্তিশালী আন্দোলনও গড়ে ওঠে। এরই মধ্যে রেশমি রুমাল আন্দোলন অন্যতম। কালক্রমে দেওবন্দের অনুসরণে বাংলাদশেও কওমি মাদ্রাসা বিস্তার লাভ করে। কওমি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল হক প্রতিষ্ঠা করা এবং বাতিলকে প্রতিহত করা। ওই সময়ে মওদুদীর মতাদর্শ ‘বাতিল পদ্ধতি’ হিসেবেই দেওবন্দ ঘরানার আলেমদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। কওমি মাদ্রাসাগুলোয় এক সময়ে হক-বাতিল, হারাম-হালাল বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দেওয়া হতো। যা পরবর্তী সময়ে মওদুদী মতাদর্শের প্রভাবে কওমি শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়েছেন।
২০০১ সালে দেশের প্রাচীনপন্থী ইসলামী প্রতিষ্ঠান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইউনূছিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে জামায়াতের ভ্রান্ত আকিদা নিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে জামায়াতকে আকিদাগতভাবে মুরতাদ-এর কাছাকাছি বলেও ফতোয়া দিয়েছিলেন তৎকালীন অনেক আলেম। এর মধ্যে প্রয়াত সদর সাহেব হুজুর মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বড় হুজুর, মুফতি নুরুল্লাহ উল্লেখযোগ্য।
তবে ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত চারদলীয় জোট গঠন করার পর থেকে আদর্শিকভাবে জামায়াত-বিরোধিতা থেকে সরে আসে কওমি-ভিত্তিক রাজনীতিকরা। বর্তমানে জামায়াত-শিবিরের অস্থিত্ব ধরে রাখতে ও নতুন করে দল ভারি করতে কাওমি শিক্ষার্থীদের দলবদ্ধ করা হচ্ছে।


শেয়ার করুন