উপসম্পাদকীয়

‘কোমেন’ আতঙ্কে দরিয়ানগর

মনির ইউসুফ :

দরিয়ার সঙ্গে হাজার পুরুষের বসবাসের কারণে দরিয়া তীরের মানুষজনকে প্রতিনিয়তই মুখোমুখি হতে হয় এমন প্রাকৃতিক বিপদের। মরে-বাঁচে, বাঁচে ও মরে। নতুন স্বপ্নে অবারও ঘর বাঁধে এখানকার মানুষ। এই পবিত্র প্রকৃতিই এ অঞ্চলের মানুষকে স্রষ্টার প্রতি নিবিড় বিশ্বাসী করে তুলেছে। কেন এই অঞ্চলের মানুষ এত গভীরভাবে স্রষ্টা বিশ্বাসী তার কারণ খুঁজতে গিয়ে বুঝেছি, যাদের নিয়ত প্রাকৃতিক বিপদ মোকাবেলা করতে হয়, যারা প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক বিপদের মধ্যে বসবাস করে তারা নিরাকার আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে বিপদমুক্ত হওয়ার ফরিয়াদ জানাতে পারে না। এই বিশাল বিপুল নিরাকার প্রকৃতিই তাদেরকে নিরাকার আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে। এবং মরতে মরতে বাঁচতে বাঁচতে স্বজন হারানোর ব্যথায় দীর্ণ হতে হতে এখানকার মানুষের মানবিক বোধশক্তি গঠিত হয়। এই অঞ্চলের প্রকৃতিই এ অঞ্চলের মানুষকে নিরাকার আল্লাহর প্রতি নিবিড় বিশ্বাসী হতে প্ররোচিত করেছে। এর কোন হেতু নেই, এবং এটাই স্বাভাবিক। গভীর সাগরে মাছ ধরতে গেলে এই অকূল দরিয়ায় বেমান সাইগরে একমাত্র নিরাকারই আল্লাহই ভরসা, কোন সরকার, কোন আকার, কোন প্রযুক্তি এখানে এই আদম মানুষজনকে বাঁচাতে পারে না। হাজার বছর ধরে এই লবণজলে, লবণবাতাসে বালুচরে ঝাউপরশে ঢেউয়ের ধাক্কায় ¯্রােতের টানে এবং উদাসী নীলের বিশাল বিশালতায় মানুষের মনোগঠন হয়েছে বলেই এই বিপুল বিপদের মধ্যেও দরিয়া তীরের মানুজন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। দরিয়া বা ঢেউয়ের ভয়ঙ্কর ও রৌদ্ররূপ যারা দেখেনি তাদের কাছে দরিয়া তীরের বসবাস করা মানুষের শক্তি, সাহস, দৃঢ়তা এবং অমিত তেজকে পরখ করার বোধ কখনো হবে না। এই ভয়ঙ্কর বিপদকে মাথায় নিয়ে দরিয়া তীরের মানুষজন তাদের স্বজনকে বাঁচানোর জন্য যে আকুলতায় প্রাণপাত করে তা মানবতার সর্বশেষ স্বাক্ষর। এ রকম প্রাকৃতিক বিপদে একজন আরেকজনের সহযোগিতায় যে আন্তরিক হয়ে ওঠে তাও পাহাড়ও দরিয়ার প্রকৃতি থেকে পাওয়া শিক্ষা। একমাত্র আল্লাহকে ভরসা করে দরিয়া তীরের মানুষ ছুটে যায় তার স্বজনকে বাঁচাতে। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল এই ঘূর্ণিজল ভয়ঙ্কর এই জলে তল খুঁজে পাওয়া যায় না কোথাও। ফুঁসে ওঠে, ফুলে ওঠে, বিষাক্ত জলের থাবা ছড়িয়ে দেয় তীরে তীরে। সেই বিষাক্ত জলথাবায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে অনেক মানুষজন, তাদের বিলাপের আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে তীরের বাতাস। সে নিম্ন চাপ সে ঘূর্ণিঝড় প্রাকৃতিক ইতিহাসের এমন এক গতির নমুনা যা ভোক্তভোগী ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারে না। এই মুহূর্তে দরিয়ানগর ও তার তীরে বসবাস করা মানুষ এই প্রাকৃতিক বিপদের সম্মুখীন। সবাই আল্লাহ আল্লাহ করছে এই বিপদ জেনে কেটে যায়। মানুষ যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। প্রকৃতির এই বিপদ থেকে আমরা এখনো মুক্ত না। তবে সবাই আগের চেয়ে সচেতন, আগের চেয়ে সর্তক। সবাইকে আরও বেশি সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছি।


শেয়ার করুন