কে হচ্ছেন বুয়েটের উপাচার্য?

020_115592ঢাকাটাইমস: 

উপাচার্য খালেদা একরামের মৃত্যুর পর থেকে গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) উপাচার্য পদটি খালি রয়েছে। প্রকৌশল শিক্ষায় দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক সর্বোচ্চ পদে নিয়োগ পেতে আগ্রহী অন্তত ১০ জন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক। তারা সরকারের নানা মহলে তদবিরও করছেন।

উপাচার্যের পদ খালি থাকায় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দাপ্তরিক যোগাযোগসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ভিসি দপ্তরে ফাইলের স্তূপ জমেছে। বিশেষ করে বড় ধরনের আর্থিক ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।

১৯৬২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী বর্তমানে বুয়েট চলছে। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিতে জ্যেষ্ঠ তিন জন অধ্যাপকের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। এ ক্ষেত্রে দলমতের বাছ-বিচার করার উদাহরণ কম। তবে ২০১২ সালের তৎকালীন উপাচার্য নজরুল ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের পর থেকে অতীতের ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে। এবার প্রতিষ্ঠানটিতে ক্ষমতাসীন দলের আদর্শের অনুসারী কাউকে নিয়োগের চিন্তা ভাবনা রয়েছে।

সাধারণত বুয়েটে উপাচার্য নিয়োগে প্রথমে অধ্যাপকদের ৩০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। এছাড়া বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতির কাছ থেকে মতামত নেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে এবার ৬০ জন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের একটি তালিকা করা হয়। পরে শিক্ষক সমিতির মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়। এদের মধ্যে থেকে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত ও জেষ্ঠ্যতার বিষয়টিকে মাথায় রেখে তিন জনের একটি প্যানেল তৈরি করে মন্ত্রণালয়। এই প্যানেল থেকেই উপাচার্য নিয়োগ করা হবে।

এই তালিকায় কাদের নাম আছে-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তা এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি।

প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী দুইজনই দেশের বাইরে রয়েছেন। তারা দেশে ফিরলেই এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে একটি সূত্র বলছে, ১২ জুনের মধ্যেই নতুন উপাচার্য পাবে বুয়েট।

তবে নানা সূত্র থেকে যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তারা হলেন, পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাজহারুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম, পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মীরজাহান মিয়া, পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সেকান্দার আলী, নিউক্লিয়ার ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবদুর রশিদ সরকার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রউফ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, উপাচার্য পদে পছন্দের তালিকায় এগিয়ে আছেন পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাজহারুল হক। তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি জেষ্ঠ্যতার দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছেন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ও বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগমও আলোচনায় আছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। বুয়েট থেকে মন্ত্রণালয়ে যাওয়া ১৬ জনের তালিকায় তার নাম রয়েছে।

অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি তা পালন করার চেষ্টা করবো। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর উপর’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রধানমন্ত্রী ইউজিসির সদস্য বানিয়েছেন। উচ্চ শিক্ষায় আমি অনেক কাজ করেছি’।

অধ্যাপক ড. মাজহারুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। দায়িত্ব দিলে পালন করবো’।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা) শাহ আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যারা আলোচনায় আছেন সবাই খুবই দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি। তবে সরকার যাকে ভাল মনে করবেন তিনিই দায়িত্ব পাবেন। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় যাতে ভালভাবে চলে।’

গত ২৪ মে বুয়েটের প্রথম নারী ভিসি অধ্যাপক খালেদা একরাম মারা যান। এরপরই উপাচার্য পদটি শূন্য রয়েছে। ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভিসির দায়িত্ব নেন খালেদা একরাম।বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন তিনি। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে পড়েছেন খালেদা একরাম।


শেয়ার করুন