কে হচ্ছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ?

DSC_0524

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত হলেও কে হবেন চেয়ারম্যান তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। চেয়ারম্যান কি সরকারী আমলা হবেন নাকি দলীয় ব্যক্তিকে এ পদে বসানো হবে, তা স্পষ্ট না থাকায় বিভিন্নমহলে চলছে নানা বিশ্লেষণ। তাছড়াও শোনা যাচ্ছে একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেন এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। এদিক থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আক্তার কামাল এগিয়ে থাকায় বিভিন্ন মহলের দাবি তিনিই হচ্ছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
এছাড়াও নাম শোনা যাচ্ছে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি ও একজন অতিরিক্ত সচিবের।
পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারী জাতীয় সংসদে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০১৬’ পাস হয়েছে। একটি পরিকল্পিত পর্যটন নগর গড়ে তোলার জন্য সমীক্ষা, জরিপ, মাস্টার প্ল্যান এবং নগর পরিকল্পনা তৈরি করবে এই কর্তৃপক্ষ। সব কিছুই ঠিক তবে এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি কে হবেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান?’ এ নিয়ে জেলাব্যাপী গুঞ্জন চলছে কে হচ্ছেন চেয়াম্যান।
তবে একটি সূত্রমতে, কক্সবাজার পর্যটন নগরী। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। কক্সবাজারকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে একজন ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন।
পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার ইতিমধ্যে ২৫টি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়ভার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাঁধেই বর্তাবে।
এদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইন জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর সেখানে বলা হয়েছে কর্তৃপক্ষের ১৫ জন সদস্যদের মধ্যে চারজন হবেন পূর্ণকালীন আর ১১ জন খন্ডকালীন। একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পূর্ণকালীন সদস্যদের মধ্যে একজন প্রশাসন ও অর্থ, একজন প্রকৌশল এবং একজন পরিকল্পনা বিভাগে তত্ত্বাবধায়ন করবেন। এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, কক্সবাজার শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন।
সদস্য হিসেবে আরও থাকছেন, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র।
এছাড়া তিনজন বিশিষ্ট নাগরিকও কর্তৃপক্ষের খন্ডকালীন সদস্য হিসেবে থাকবেন। যার মধ্যে একজন হবেন নারী। একটি পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়ে তোলার জন্য এই কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেবে, চাইলে তারা অনুমতি বাতিলও করতে পারবে।
প্রস্তাবনার আলোকে বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে একজন নারীসহ তিনজনের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা ও সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য এথিন রাখাইন আলোচনায় রয়েছে। তাছাড়াও শোনা যাচ্ছে এড. ফরিদ, রাজা শাহ আলমসহ বেশ ক’জনের নাম।
ঢাকার একটি সূত্রে জানা যায়, উক্ত বিশিষ্ট নাগরিকদের কোটায় থাকতে পারেন জেলার একজন বিশিষ্ট ঠিকাদার, স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার উচ্চশিক্ষিত সম্পাদক। যাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছেন একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কক্সবাজারের রাজনৈতিক ও সুশিল সমাজের সমস্ত মানুষকে তিনি চেনেন। এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা। তাই তিনি যাদেরকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই কমিটিতে স্থান দেবেন। তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে উন্নয়ন সংক্রান্ত সমস্যা ব্যাপক তাই কাকে চেয়ারম্যান করবেন এবং কাকে সদস্য করবেন তা তিনি সব চেয়ে ভাল জানেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মূল দায়িত্ব কে পাচ্ছেন তা নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী। তবে এই পদের জন্য এখন ত্রিমুখি একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। রয়েছে রাজনৈতিক ব্যাক্তির অবস্থান, তাছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার ও সরকারি আমলারাও আসতে পারেন এই পদে।
কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নুরুল আমিন মিয়া বলেন, গত ২০ এপ্রিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব প্রশাসনে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জন্য কার্যালয় নির্ধারন, লোকবল নিয়োগ, অর্থনৈতিক কাঠামো, বাজেটসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কে চেয়ারম্যান হবেন এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু বিল পাশ হয়ে গেছে সেহেতু আশা করা যাচ্ছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত আসবে।
উল্লেখ্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্দেশ্য, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত পর্যটন নগরী কক্সবাজার এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে বহুল পরিচিতি লাভ করেছে। একটি আধুনিক ও উন্নতমানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কক্সবাজারের আবাসন, হোটেল-মোটেল, রাস্তাসহ অন্যান্য সব নাগরিক ও পর্যটন সুবিধা পরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও কক্সবাজারকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া।


শেয়ার করুন