কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি অর্থায়নে গরু ক্রয়ের পাঁয়তারা

0ede9bb94fb8aa40bedf594784ad8f5b - Copyশফিক আজাদ, উখিয়া:
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতি বছরের রোযার ঈদ, এবং কোরবানির ঈদের সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কোটি কোটি প্রেরণ করে থাকে। যারই ধারাবাহিকতায় এই বছরের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জঙ্গিদের অর্থায়নে কোটি টাকার গরু ক্রয়ের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে জঙ্গি সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে কুতুপালং রাস্তা মাথা গরু বাজার, উখিয়া গরু বাজার, মরিচ্যা গরু বাজার এবং মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত গরু ব্যবসায়ীর নিকট থেকে কয়েক শত গরু ক্রয় করেছে । ক্রয়কৃত এসব গরু ক্যাম্প সংলগ্ন লোকজনকে দৈনিক বেতন দিয়ে কোরবানির দিন পর্যন্ত দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।
এছাড়া ও রোহিঙ্গাদের মাঝে নাম সর্বস্ব কোরানির গরু বিতরণের পরিকল্পনা নিয়ে গোপন বৈঠক করেছে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কতিপয় রোহিঙ্গা নেতারা। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) প্রশিক্ষপ্রাপ্ত শতাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গি এ দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার লক্ষ্যে কোরবানির ঈদকে হাতে নিয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি কক্সবাজারে আটক মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু শহরের উকিলপাড়ার মোহাম্মদ ইউনুছ ও মংডু শহরের জামবইন্না এলাকার মোহাম্মদ রফিক। এ দুই ব্যক্তি আরএসও প্রশিক্ষিত জঙ্গি। তারা বিস্ফোরক তৈরিতে দক্ষ। বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সংগঠিত করে পাহাড়ি এলাকায় সশস্ত্র সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তারা তৎপরতা চালাচ্ছে। এই জঙ্গি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরএসওর এক অংশের কমান্ডার আফগানিস্তান ফেরত মুজাহিদ মাস্টার আইয়ুব। এদিকে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১৩ হাজার। অথচ এই ক্যাম্পে তালিকাবহির্ভূত আরও এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। এ রোহিঙ্গাদের ওপর সরকারি কোনো সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের চলাফেরা ও গতিবিধির ওপর কারও কোনো নজরদারিও নেই। এই সুযোগ গ্রহণ করছে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। তারা গোপনে ক্যাম্পে সংগঠিত হয়ে নিয়মিত বৈঠক করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এমনকি রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শতাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করছে এই শরণার্থী ক্যাম্প।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা জানান, রোহিঙ্গাদের আর্থিক ও মানবিক সহায়তার কথা বলে ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে ইত্তেহাদুল জমিয়াতুল রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ভয়েস, শরিকা আল হওয়াদি নামে কয়েকটি রোহিঙ্গা সংগঠন ৪৫০ কোটি টাকা পেয়েছে। এই টাকা গোপনে জঙ্গি তৎপরতার পেছনে ব্যয় হচ্ছে। সূত্র জানায়, ইত্তেহাদুল জমিয়াতুল রোহিঙ্গার সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী ড. ওয়াকার উদ্দিন।
উখিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক জঙ্গিদের সহযোগিতা দিচ্ছে তুরস্কের একটি সংস্থা ইনসামা ইয়ারদিনলাফ, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এনজিও মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, ইমাম মুসলিম ও সমন্বিত মানবিক উদ্যোগ নামে কয়েকটি সংস্থা। এসব সংস্থার নামে রোহিঙ্গাদের মাঝে কোরবানির পশু এবং ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করা হয়।
কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা রাকিবুল্লাহ জানান, রোহিঙ্গাদের নামে মধ্যপ্রাচ্য থেকে থেকে প্রেরিত অর্থের এক-তৃতীয়াংশ টাকা আত্মসাৎ করে কুতুপালং এলাকার এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি। তিনি নামে মাত্র কোরবানির গরু দেখিয়ে ইতিপূর্বে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। তাই এইবারও তাই করবেন। এরপর ও হতদরিদ্র এসব রোহিঙ্গারা কারও বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করতেও পারছে না।
উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পটি অরক্ষিত হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা এত বিশাল ক্যাম্প এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও পুলিশ অভিযান চালায়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নিশ্চিত মানবপাচারকারী সহ বিভিন্ন মামলার চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আটক করেছে।


শেয়ার করুন