কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

মাহবুবা সুলতানা শিউলিঃ

ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ জনাব ওবায়দুর রহমান ২ মার্চ সোমবার ভোর ৫:০০ টায় নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্হায় নিজ বাড়ি ব্রাম্মণবাড়িয়ার নাজ মেডিকেল সেন্টারে মৃত্যু বরন করেন। মহান আল্লাহপাকের দরবারে প্রার্থনা করি মহান আল্লাহ উনাকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন। আমিন।

ফেসবুকেই খবরটা প্রথম জানতে পারি।
বিশ্বাস হচ্ছিলো না। মেসেন্জারে দেখি ওনার একজন ভাই মো. আশরাফুল লতিফ তুহীন ভাই এর মিস কল দেখা যাচ্ছে। তখন পেকুয়ায় একজন ভাগিনা আমার ননাসের ছেলেকে ফোন করি। তারপরও বিশ্বাস করতে পারছিলামনা। শেষে মেসেন্জারে তুহীন ভাইকে কল দিয়ে সব কিছু জেনে নিলাম। বুক ভারী হয়ে আসছিল কিন্তু ওনার সাথে কথা বলা অবস্হায় কান্না করতে পারছিলাম না। বুক ছিড়ে যাচ্ছিল। ভাই এর এই হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়াটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। দু’চোখের অশ্রু গড়িয়ে যেতে লাগলো । এত্ত ভাল মানুষটা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন! পেকুয়া কলেজের অফুরান ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় কলেজটি কক্সবাজারে এমপিও ভুক্ত কলেজগুলির মধ্যে ২০১৭ তে প্রথম ও ২০১৮ তে দ্বিতীয় ও ওনি প্রিন্সিপাল থাকাবস্হায় সবসময় সুনাম অর্জন করে চলেছে । একজন সুদক্ষ, যোগ্য পাইলট এর মতো এই বিশাল জাহাজ তিনি এতোদিন চালিয়ে এসেছেন। আজ এই জাহাজটির পাইলট চিরতরে হারিয়ে গেলেন। আমি কি লিখছি জানি না। সজ্জন, সদালাপী, সহাস্য বাবার মত বড় ভাইটির প্রস্থানে আমি শোকাহত! অপূরনীয় শূণ্যতায় ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি আমাদের। শুনলাম, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দু’দিন নিউমোনিয়ার ট্রিটমেন্ট নেয়ার পর নিজের ইচ্ছেই বাড়িতে চলে যান। বলেছিলেন, তিনি সুস্হ হয়েগেছেন। বাসাতেই চিকিৎসা নিবেন।কিন্তু ভোররাতে হঠাৎ শরীর প্রচন্ড খারাপ করাতে হাসপাতালে নেবার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। কর্মস্হল পেকুয়ায় যোগদানের জন্য তিনি ছটফট করেছিলেন। তাই হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে গিয়েছিলেন দ্রুত কর্মস্হলে যোগদান করবেন বলে কাজপাগল নিষ্ঠাবান মানুষটি।

গড়মাত্র ৫/৭ দিন আগেও যে মানুষটি তাঁর কলেজের দায় দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করছিলেন, মাত্র দু’দিন আগে ২৯ শে ফেব্রুয়ারি তাঁর ফেসবুক ওয়ালে নিজের অসুস্থতার খবর জানিয়ে সবার কাছে দো’আ চেয়েছেন ঠিক দু’দিন পর আজ সকালে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না!!! হে আল্লাহ্ তুমি এ কি শুনালে..!!!! শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের কন্ঠস্বর যেন কানে বাজছিল। একজন সম্মানিত ব্যক্তি হয়েও অন্য মানুষদের কিভাবে সম্মান করতে হয় তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ তিনি। এমন অমায়িক, সৎ, ধার্মিক, নিষ্ঠাবান পরিশ্রমী মানুষটি আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চিরতরে চলে গেলেন তাঁর চির আপন ঠিকানায়। । নির্দিষ্ট গন্তব্যে একদিন আমরা সবাইও না বলে কয়েই চলে যাবো। তারপরও এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বাঁচার জন্য আমাদের কি প্রাণান্তকর চেষ্টা। সব চেষ্টায় একদিন বিফল হবে। সকল খেলা সাঙ্গ হবে। সবাই চলে যাব এক ঠিকানায়। । মৃত্যুই সত্য আর সবকিছুই মিথ্যা। ইনবক্সে শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের পাঠানো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি, ওনার নিজের হাতে লেখা কলেজের খামের উপর আমার কাছে পাঠানো দাওয়াত পত্র এগুলো দেখে অশ্রু আটকিয়ে রাখা যাচ্ছে না । আজ কতদিন ধরে বড়ভাইয়ের সাথে কথা হয়নি। শেষবার যখন কথা বলেছিলাম তখন বলেছিলেন, আপনি পেকুয়ার বধূ। জনাব মুজিব সাহেব কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি পদ থেকে অব্যহতি নিলেও আমরা আপনাকে সবসময় স্মরণ করি, আশাকরি আপনি আমাদের পাশে থাকবেন। যখনই ডাকবো নিজের কলেজ মনে করে চলে আসবেন। আমাদের কলেজের ছেলেমেয়েরা আপনাদের অনেক ভালবাসে। আমরাও আপনাদের অনেক ভালোবাসি। আপনাদের পাশে পেয়ে আমাদের কলেজ এবং আমরা গর্বিত। শ্রদ্ধেয় ভাই এর সেই স্নেহ, মমতা সেই কথাগুলি আর কখনোই শোনা হবেনা, শুনবো না।
জানি সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছা, আল্লাহর ইশারা, আল্লাহর হুকুম।

পরিশেষে, পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজের স্বনামধন্য অধ্যক্ষ জনাব ওবায়দুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে, তাঁর সৃজনে, তাঁর হাতে তৈরি সন্তানতুল্য প্রতিটি শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে, আমাদের সবার মাঝে।

হে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিন্সিপাল ভাইয়ের সকল গুনাহ্ মাফ করে দিন এবং ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন।
__________________________________________
মাহবুবা সুলতানা শিউলি
সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।


শেয়ার করুন